Fatty liver disease : ফ্যাটি লিভারের সমস্যা - এখন প্রায় ঘরে ঘরে। হজমের সমস্যা, পেটের যন্ত্রণা, খাবারের তালিকায় একটু রদবদল হলেই বদহজম হতে পারে। ঠিক কোন কোনও লক্ষণ দেখলে, ডাক্তারবাবুরা ফ্যাটি লিভারের পরীক্ষা করতে দেন, চিকিৎসাই বা কী, এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়।
আপনি কি নিম্নে উল্লিখিত উপসর্গগুলিতে ভুগছেন ?
- পেট ফুলে যাওয়া ( Abdominal swelling)
- ত্বকের নিচে থাকা ব্লাড ভেসেল ফুলে যাওয়া (Enlarged blood vessels just beneath the skin's surface)
- প্লীহা বেড়ে যাওয়া ( Enlarged spleen)
- হাতের পাতা লাল হয়ে যাওয়া (Red palms)
- অনেক ক্ষেত্রে চোখে হলুদ ভাব (Yellowing of the skin and eyes)
Fatty Liver Syndrome কখন হয় ?
পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় লিভার। খাদ্যে মূলত ৬ রকমের পুষ্টি উপকরণ থেকে থাকে। কার্বোহাইড্রেট, শর্করা , প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন , মিনারেল ও জল। ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়ামে (ileum intestine) এই ছ'টি জিনিস পরিপাকের পর শোষণ হয়। তারপর তা একটি সার্কুলেশনে যায়। যাকে পোর্টাল সার্কুলেশন হয়। পোর্টাল ভেইনের মারফত এই খাবারগুলো লিভারে পৌঁছায়। লিভারই এই খাদ্যকে বিভিন্ন দিকে চালিত করে। শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে প্রোটিন বা ফ্যাট থেকে শর্করা তৈরি করতে পারে লিভার। গ্লুকোনিওজেনেসিস (gluconeogenesis) বলে। গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে, গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন হিসেবে স্টোর করে লিভার।
ফ্যাটের পরিমাণ বাড়লে লিভার ফ্যাট নিজের মধ্যে স্টোর করতে পারে। যদি অতিরিক্তি ফ্যাট আসে লিভারে, তখন তার কিছুটা জমা হয় লিভারে, কিছুটা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে স্থান পায়। তাতে একজন মানুষ স্থূলকায় হয়ে পড়েন। লিভারের অধিকাংশ কোষ যদি ফ্যাটের স্টোর হয়ে যায়, তখনই তাকে ফ্যাটি লিভার সিনড্রোম বলা হয়ে থাকে।
ওই কোষগুলি তখন খাদ্য পরিপাকের কাজটি ভালভাবে করে
উঠতে পারে না। লিভারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ফ্যাট জমে লিভার বড় হয়ে যায়। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে যে ফ্যাটি লিভার হয়, তাকে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়ে থাকে।
Alcoholic fatty liver disease :
অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে যে অতিরিক্ত ক্যালরি । শরীরে জমা হয়, তার থেকে লিভার স্থূল হয়ে যায়।লিভারের কোষগুলি অতিরিক্ত ফ্যাটের ভাণ্ডার হয়ে ওঠে।
Nonalcoholic fatty liver disease :
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিসিজ হয়ে থাকে অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় ফ্যাটজাতীয় খাবার খেলে।
চিকিৎসক চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এড়াতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। তার প্রাথমিক কয়েকটি হল -
- তেল-চর্বি, ঝাল, ভাজাভুজি খাবার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন ।
- খাবারের পরিমান শরীরের প্রয়োজন ও ক্যালরির খরচের সঙ্গে তাল রেখে নিয়ন্ত্রণ করুন।
- শহুরে জীবনযাত্রার অন্যতম অঙ্গ হয়ে গিয়েছে ফাস্ট ফুড । এই খাবারগুলি সহজপাচ্য তো নয়ই, উপরন্তু অপকারী ফ্যাটের সম্ভার।
- এড়িয়ে চলুন পেস্ট্রি -বার্গার.. এই জাতীয় খাবার ।
- অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন। প্যাকেজড ফ্রুট জুস খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- সফট ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চলুন।
- সেডেন্টারি লাইফ স্টাইল নয় ! ফ্যাট এনার্জি যোগায়। কিন্তু প্রয়োজনের থেকে বেশি হলেই বিপত্তি। তাই অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে রোজ এক্সারসাইজ করুন। হাঁটুন। দরকারে জিমে যান।
মনে রাখবেন, ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ফেলে রাখলে, সুগার, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির সমস্যা বাড়ে। হার্টের অসুখ হতে পারে। কিডনির অসুখও হতে পারে। আনুসঙ্গিক অসুখও হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখলেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট দেখান। ফ্যাটিলিভার পরিমাপ করার জন্য ফাইব্রোস্ক্যান বা ইলাস্ট্রোগ্রাফি ( Fibroscan বা Transient Elastography) করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা স্টেজ ওয়ান ও টু তে থাকলে তা এক্সারসাইজ ও ডায়েটের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলে কিন্তু ফাইব্রোসিসও হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাটি লিভার রোগীর কিন্তু আরও বড় সমস্যা হতে পারে। লিভার ফেলইয়রের ঘটনাও ঘটতে পারে চূড়ান্ত ক্ষেত্রে। তবে এত আতঙ্কিত না হয়ে সমস্যার সূত্রপাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নজর দিন জীবনশৈলিতে।
ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়