নয়াদিল্লি: যখন তখন কোনও কারণ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics) দেওয়া যাবে না রোগীকে। প্রেসক্রিপশনে কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নাম লেখার সময় চিকিৎসকেদের তার কারণ উল্লেখ করতে হবে বলে জানাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহারের উপর রাশ টানতে এমনই সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিকর্তা অতুল গোয়েল মেডিক্যাল কলেজগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগগুলি রোগীকে প্রেসক্রাইব করার সময় সমস্ত ডাক্তারকে বাধ্যতামূলকভাবে তার সঠিক কারণ উল্লেখ করতে হবে। ওষুধ বিক্রেতাদেরও সতর্ক করা হয়েছে, যেন কোনও রকম বৈধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া গ্রাহকদের অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া হয়। চিকিৎসকেদের নির্ধারণ করা ডোজ ও কারণ দেখাতে পারলে তবেই রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।
WHO এর মতে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) নিঃশব্দে বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার ধারন করবে। অ্যান্টিবায়োটিকের এই যথেচ্ছ ব্যবহার ২০৫০ সাল নাগাদ এক কোটিরও বেশি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বর্তমানে মুঠোমুঠো অ্যান্টিবায়োটিক যেন মানুষের নিত্যসঙ্গী। সামান্য সর্দি-কাশি বা জ্বর দোকানে গিয়ে একটা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললেই যেন শান্তি। সাধারণের এ হেন আচরণে যে কী মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তা টের পায় না কেউ। চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR )। এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিচার করে বলতে গেলে ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। আশঙ্কা আগামী ২ থেকে আড়াই দশকের মধ্যে এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে লাফিয়ে লাফিয়ে।
কী এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ?
Antimicrobials medicine তো আদতে এই জীবাণুদের শত্রু। কিন্তু বারবার Antimicrobials medicine নিতে নিতে, শত্রু চেনা হয়। আর শরীরে বাসা বাঁধা অণুজীবরাও প্রাকৃতিকভাবে জিনগতভাবে বিবর্তিত হয়। তখনই তৈরি হয়ে যায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স।
অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল এবং অন্যান্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালগুলি সারা বিশ্বে বহু কঠিন রোগকে হারিয়ে লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচায়। কিন্তু এই ওষুধগুলিই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের কারণে তাদের কার্যকারিতা হারাচ্ছে যাকে বলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স । শরীরে অণুজীবদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে এই ওষুধগুলি ব্যবহার করা দরকার। একেক রোগের কারণ একেকটা। কারণ অনুযায়ী দিতে হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস। এবার কোনও কারণে শরীরে যখন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়ে যায়, তখন এই সব জীববদায়ী ওষুধও বিপদের সময় কাজ করে না। এই সমস্যাটাই এখন সারা পৃথিবীর কাছে মহাসঙ্কট। আর এই সমস্যায় রাশ টানতেই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের।
রাজ্যেও বিধিনিষেধ: অ্যান্টিবায়োটিকের (Antibiotics Usage) যথেচ্ছ ব্য়বহারে অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া (Antibiotic Resistance)। ফলে চিরোগীর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেসক্রিপশন (Prescription) ছাড়া ওষুধের দোকানে অ্য়ান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের এবং ব্যবহার রুখতে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্য় স্বাস্থ্য দফতর। গত বছর নভেম্বর নাগাদ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর, মৎস্য দফতর, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় বৈঠকে?
১. প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের দোকানে অ্য়ান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে নজরদারি বাড়ানো হবে
২. কৃষিক্ষেত্র, মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি ফার্মে (Poultry Farm) অ্য়ান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্য়বহার হচ্ছে
৩. এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি করা হবে, নজরদারি বাড়ানো হবে গ্রামাঞ্চলেও
৪. প্রত্য়েক মাসে রিভিউ মিটিং হবে, সেখানে স্বাস্থ্য দফতর, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর ও মৎস্য দফতর রিপোর্ট পেশ করবে