কলকাতা : হঠাৎ করেই মাথা ঝিমঝিম, ব্ল্যাকআউট বা মাথা ঘুরে যাওয়া। প্রেসার মেপে দেখা গেল স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই নীচে। কী করবেন? বড় কোনও ক্ষতি হয়ে যাবে না তো ? লো প্রেসার নিয়ে এমন আতঙ্কে অনেকেই ভোগেন। লো ব্লাড প্রেসার কি হাই প্রেসারের মতোই বিপজ্জনক ? আলোচনায়  বিশিষ্ট চিকিত্সক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় ( Dr Suddhasatwya Chatterjee )
হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরে একটি পাম্পিং সিস্টেমের মতো কাজ করে। হার্ট রক্তকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। রক্ত বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য নিউট্রিশন সরবরাহ করে আর দূষিত রেচন পদার্থ, কার্ব ডাই অক্সাইড বের করে আনে। এই রক্ত যখন একটি ধমনী বা শিরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন সেই পার্শ্ব দেওয়ালগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে রক্তপ্রবাহ। এটাই ব্লাড প্রেসার। এই চাপটা ছাড়া শরীরের সব জায়গায় রক্ত পৌঁছবে না। এই প্রেসারটা তৈরি করে হার্ট। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা চাপ, স্ট্রেস মধ্য কুড়ি থেকেই ডেকে আনছে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।  হু-এর নির্দেশিকা অনুসারে, ব্লাড প্রেসার যদি ১৪০/৯০ এর বেশি হয়, তবে তো ওষুধ চালু করতেই হবে। কিন্তু লাইফস্টাইল মডিফিকেশন শুরু করতে হবে সময় থাকতেই। দরকারে ২০ পেরলেই।  আজকাল মাঝ ২০ বয়সের হাইপারটেনশনের রোগী সংখ্যায় প্রচুর। অবহেলায় ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ। ঘটে যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা সাডেন কার্ডয়াক ডেথ-এর মতো ঘটনাও। কিন্তু ব্লাড প্রেসার যদি স্বাভাবিক মাত্রার নীচে হয় ? তাহলেই কি তাঁরা লো-প্রেসারের রোগী ? 
যখন কারও শরীরের ব্লাড প্রেসার মাপা হয় তখন চলতি কথায় আমরা যাকে উপরের প্রেসার বলি সেটি আসলে Systolic BP, নিচের দিকের প্রেসারের অর্থ diastolic প্রেসার। সাধারণত ধরা হয় - 

 

স্বাভাবিক রক্তচাপ systolic: ১২০ বা তার কম mm Hg, diastolic: ৮০ mm Hg
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন)  systolic:  ১৪০ mm Hg বা তার বেশি diastolic: ৯০ mm Hg or higher
নিম্ন রক্তচাপ  systolic: ১০০ বা তার কম mm Hg, diastolic: ৬০ mm Hg

 

হাই ব্লাডপ্রেসার যে কোনও কোনও সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, তা আমরা জানি। কিন্তু ব্লেড প্রেসার লো হলেও কেউ কেউ তা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেন স্বচ্ছন্দে। কোনও সমস্যা দেখা যায় না। চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, মহিলাদের মধ্যে ব্লাড প্রেসার লো হওয়ার প্রবণতা বেশি। ' কোনও কোনও মহিলা তো বুঝতেই পারেন না তিনি লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন। হয়ত গর্ভধারণের সময় মেরেকেটে তাঁদের প্রেসার বেড়ে systolic প্রেসার ১১০ mm Hg তে পৌঁছল। সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই বলেন মনে করছেন চিকিৎসক চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু যদি কারও ব্লাড প্রেসার কম হওয়ার দরুণ নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন। যেমন - 

  • মাথা ঘোরা
  • মাথা ঝিমঝিম করা
  • সর্বদা দুর্বল লাগা
  • মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া
  • চোখে আঁধার দেখা 

সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখবেন, তাঁর অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কিনা । যেমন - 

  • গর্ভধারণ (Pregnancy):  সাধারণত প্রেগন্যান্সিতে ব্লাড প্রেসার বাড়ে। কিন্তু তার উল্টোটাও ঘটতে পারে। সন্তান জন্মের পর প্রেসার নর্ম্যালে ফিরে আসা স্বাভাবিক।  
  • হার্টের সমস্যা ( Heart problems ) : হার্টের কিছু কিছু সমস্যায় ব্লাড প্রেসার কমে যায় অস্বাভাবিক ভাবে।  যাকে হাইপোটেনশন বলা হয়। অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের পাম্পিং ক্ষমতায় অক্ষমতার দরুণ এই সমস্যা হওয়া।
  • হাইপোথাইরয়েডিসম ( Hypothyroidism ) : অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির কম কাজ বা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ যেখানে কমে গেছে। 
  • ডিহাইড্রেশন ( Dehydration ) শরীর থেকে হঠাৎ অনেকটা জল বেরিয়ে গেলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। 
  • রক্তপাত (Blood loss) : কোনও দুর্ঘটনা বা অপারেশনের কারণে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ পড়ে যায়। 
  • ইনফেকশন (septicemia):  রক্তে কোনও ইনফেকশন প্রবেশ করলে ব্লাড প্রসার মারাত্ম হারে কমে যায়। যা প্রাণঘাতী হতে পারে।  
  • অ্যালার্জি ( allergic reaction):  কোনও কোনও অ্যালার্জির কারণেও ব্লাড প্রেসার হঠাৎ কমে যায়।  
  • অপুষ্টি (Lack of nutriention) :    vitamin B-12, ফোলেট folate, আয়রন ( iron)  ঘাটতি ঘটলে লো প্রেসার হতে পারে।

প্রতিকার  : - 

  • লো প্রেসার কেন হচ্ছে দেখে নিয়ে সেই রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। 
  • লো প্রেসারের এমনি কোনও ওষুধ নেই, যা সাথে-সাথে প্রেসার বাড়ায়। 
  • লো প্রেসারের প্রতিকারে ওআরএস খাওয়াতে হবে।
  • রোগী ওআরএস খেতে না পারলে, স্যালাইন ওয়াটার দিতে হবে । 
  • বাড়িতে নুন জল খাওয়াতে হবে। 
  • বিছানায় শুয়ে পা একটু উঁচুতে বালিশে তুলে রাখা যায়। 
  • যাঁদের লো প্রেসারের কোনও উপসর্গ নেই, তাঁরা দিব্যই আছেন লো ব্লাড প্রেসার নিয়ে, তাঁদের চিন্তার কারণ তেমন নেই।