কলকাতা: বয়স যত বাড়ে, বাড়ে নানা সমস্যা। তা সে শারীরিক হোক বা মানসিক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা জিনিসের বদল ঘটে শরীরের অন্দরমহলে। এবং যার ফলে নিয়ন্ত্রিত হয় শারীরবৃত্তিয় নানা প্রক্রিয়া। হরমোনজনিত পরিবর্তন। শুধু মহিলা নয়। পুরুষদের শরীরও হরমোনঘটিত পরিবর্তন থেকে ছাড় পায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে হরমোনঘটিত যে পরিবর্তন পুরুষ-শরীর উপলব্ধি করে তা 'অ্যান্ড্রোপজ়'। আসলে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের হ্রাস পাওয়ার বেশকিছু প্রভাব শরীরের উপর পড়ে। কমে যৌন ইচ্ছা। এই অবস্থাই অ্যান্ড্রোপজ় বলে পরিচিত।  মহিলাদের মেনোপজ়ের মতো এই অবস্থাকে পুরুষদের 'মেনোপজ়' বলেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন। পঞ্চাশের কোঠায় বয়স এমন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পুরুষ সন্মুখীন হয়ে থাকেন 'মেল মনোপজ়ের' জেরে সৃষ্ট সমস্যার।

অ্যান্ড্রোপজ় সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আইএএনএস লাইফ মুখোমুখি হয়েছিল ক্লাউডনাইন গ্রুপ অফ হসপিটালসের মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: চন্দ্রিকা কুলকার্নির। তিনি জানান, মহিলাদের মেনোপজ় আর পুরুষদের অ্যান্ড্রোপজ় ঠিক এক নয়। বলেন, মেনোপজ়ের ক্ষেত্রে হরমোন ক্ষরণ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও, পুরুষদের টেস্টোস্টেরন ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। টেস্টোস্টেরন উৎপাদনস্থল একদম শুকিয়ে যায় না। তবে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এর ক্রিয়াকলাপে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর ৭০ বছর বয়সের পরে অনেক পুরুষের মধ্যে হরমোনঘটিত আমূল পরিবর্তন আসে।

পুরুষ ও মহিলাদের মেনোপজ় অনেকক্ষেত্রেই আলাদা। সব পুরুষেরই যে অ্যান্ড্রোপজ়়ের অভিজ্ঞতা হবে তেমনটা নয়। এবং জনন প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি তালা পড়ে যাবে, এমনটাও নয়। হরমোন লেভেল কম হওয়ার ফলে যৌন-জটিলতা বাড়তে পারে। শারীরিক, মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ কী কী

মেল মেনোপজ়ের অন্যতম কারণ হাইপোগোনাডিজ়ম (হরমোন লেভেলে হ্রাস)। এবং হাইপোগোনাডিজ়মের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া। এছাড়াও লক্ষণ তালিকায় রয়েছে বিশেষ অঙ্গের কর্মক্ষমতা হ্রাস, পেশির শক্তিক্ষয়, শরীরে মেদ বৃদ্ধি, বোন মিনারেলের ঘনত্ব  হ্রাস, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি। প্রাণবন্ততা কমে যাওয়া এবং মুডে বদল মেল মনোপজ়ের লক্ষণ।

অ্যান্ড্রোপজ়ের চিকিৎসা কী

ডা: কুলকার্নি আইএএনএস লাইফকে বলেন, কোনও লক্ষণ প্রকট হলে যে কোনও বয়স্ক মানুষের একবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পরীক্ষায় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম ধরা পড়লে পরীক্ষা আরও একবার করিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে।

ডা: কুলকার্নির মতে, মেল মনোপজ়ের লক্ষণ ধরা পড়লে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই এর প্রাথমিক চিকিৎসা। নজর রাখতে হবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে।



  • স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া

  • নিয়মিত ব্যায়াম

  • পর্যাপ্ত ঘুম

  • চাপমুক্ত থাকা

    উপরিউক্ত বিষয়গুলি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলতে পারলে উপকার। মেল মনোপজ়ের মতো বয়:জনিত সমস্যায় চিকিৎসা ছাড়াও উপকার মিলতে পারে। আর এই প্রাথমিক দাওয়াইয়েও কাজ হচ্ছে না বলে যদি মনে হয়, বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হবে। অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করবেন তাঁরা।

    হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বলে অন্য একটি বিকল্প আছে বটে। তবে তার নিজস্ব রিস্ক ফ্যাক্টরও রয়েছে। রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও। টেস্টোস্টেরনের রিপ্লেসমেন্ট বাড়িয়ে দিতে পারে প্রস্টেট ক্যানস্যারের সম্ভাবনা। হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যেতে পারে।