পায়েল মজুমদার, কলকাতা: শীত মানেই ফের চামড়া ওঠা (Scaling), চুলকানি (irritation), ব্যথা (pain)। কনুই হোক বা হাঁটু, নানা জায়গায় বেগুনি রঙের ছোপ। মাথার গোড়া থেকে গাদা গাদা চামড়া হাতে চলে আসা। চেনা লাগছে? সোরিয়াসিস (psoriasis( নামে এক 'স্কিন ডিজিজের' চেনা উপসর্গ এসব এবং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন শীত (winter and psoriasis) এলেই এর দাপট বাড়ে।


সোরিয়াসিস কী?
এক কথায় ত্বকের রোগ। দেহের একাধিক অংশে rash তৈরি হয় এতে। সঙ্গে চামড়া উঠতে থাকে। পাশাপাশি নানা রঙের ছোপ দেখ দেয়। হাঁটু, কনুই, নিম্নাংশ ও মাথার গোড়া এর অন্যতম। এই রোগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী। বাড়াবাড়ি হলে যন্ত্রণাদায়কও হতে পারে। ঘুম ও মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে বছরের সব মরসুমে এর একই রকম দাপট থাকে না। চক্রাকারে কমে ও বাড়ে। 


উপসর্গ...
ব্যক্তিভেদে ছোপের রং আলাদা হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে খুসকির মতো চামড়া উঠতে পারে, কারও ক্ষেত্রে আবার একলপ্তে অনেকটা চামড়া ওঠে। rash-র রংও আলাদা হতে পারে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট ব্য়ক্তির ত্বকের রংয়ের উপর নির্ভর করে। কখনও সখনও শুষ্ক ত্বক থেকে রক্তও বেরোতে পারে। 


বিভিন্ন ধরন...
সোরিয়াসিসের একাধিক ধরন রয়েছে। যেমন plaque psoriasis। সবচেয়ে চেনা এটিই। এছাড়াও nail psoriasis। মূলত হাত ও পায়ের নখে এটি হয়। এর ফলে নখের অস্বাভাবিক বাড়বৃদ্ধি হয়। রঙেও বদল হতে পারে। শেষমেশ চামড়া থেকে নখ আলাদা হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও রয়েছে pustular psoriasis। পুঁজভর্তি ফোস্কা ভরে যায় এই ধরনের সোরিয়াসিসে। কিন্তু কেন হয়?

কারণ...
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনও কারণে আমাদেরই উপর চড়াও হলে এই ধরনের রোগ হয়। ত্বকের কোষগুলি অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। ফলে চামড়া উঠে আসার প্রবণতা তৈরি হয়। এর নির্দিষ্ট কিছু ট্রিগারও রয়েছে। যেমন, মা-বাবার মধ্যে এই রোগ থাকলে ছেলেমেয়ের মধ্যেও হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আবহাওয়া আরও একটি কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে বেশি করে এই সমস্যা বাড়তে পারে। 


কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্য়াপক, চিকিৎসক অভিষেক দে বললেন, '৬০-৭০ শতাংশ রোগীর সোরিয়াসিস বাড়ে শীতেই। এমনকি যাঁদের খুব সামান্য উপসর্গ রয়েছে, তাঁদেরও এই সময়েই বাড়ে। আসলে ঠান্ডার জন্যই মূলত সোরিয়াসিস বাড়ে। আমাদের যদিও তত ঠান্ডা পড়ে না, কিন্তু শুষ্কতা বাড়ে। তাই প্রথম বার যখন পেশেন্ট আসেন, তখনই বলে দিই শীতে বাড়তে পারে। আর যখন শীতে পেশেন্ট আসেন, তখনই বলে দিই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করতে হবে।' তাঁর কথায়, 'যাঁদের অল্প থেকে মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে, তাঁদের হয়তো বছরের বাকি সময়টা তেমন চিকিৎসা প্রয়োজন পড়ে না। নারকেল তেল বা ময়শ্চরাইজার দিলেই হয়। কিন্তু যাঁরা আগে থেকেই ওষুধে রয়েছেন, তাঁদের বছরের শীতের সময়টা হয়তো ওষুধের শক্তি বাড়াতে হতে পারে।' তবে একই সঙ্গে ডায়েটেও জোর দিতে বলছেন তিনি। তাঁর মতে, হোল গ্রেন খেতে হবে। অর্থাৎ' আটা খেতে হবে, ময়দা নয়। মাল্টি গ্রেন ব্রেড। মাছ, সবুজ তরি-তরকারি, অলিভ অয়েল। এগুলি ভাল।' আর যেটি জীবন থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে তা হল ধূমপান ও মদ্যপান।


আরও পড়ুন:দেশে-বিদেশে ছড়াছড়ি 'আজব ছড়া'র, কেন বার বার নিশানায় মমতা-ই