নয়াদিল্লি: ছোটবেলা থেকে চিরকালই গুরুজনেরা বলে আসতেন 'জলখাবার খেতে হয় রাজার মতো' ('Eat Breakfast like a King')। কিন্তু এখনের দৌড়ঝাঁপ, হুড়োহুড়ির জীবনে 'রাজকীয়' প্রাতঃরাশ (Breakfast) তো দূর, সময়মতো কোনও খাবারই পেটে পড়ে না। তার ওপর ঘুমের পরিমাণও কমেছে। এছাড়া মানুষ এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। ফলে ক্যালোরি যুক্তল খাবারে, 'নৈব নৈব চ'! আর এতেই বাড়ছে যত সমস্যা। দ্রুত গতির জীবন আর ক্যালোরি মুক্ত খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে প্রত্যেকদিনের জলখাবারের পরিমাণে পড়ছে কোপ। ফলে পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।


আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন 'জলখাবার' বা 'ব্রেকফাস্ট' অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাবার। কারণ প্রকৃত অর্থেই অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকার পর আপনি প্রথম খাবার খাচ্ছেন। ফলে এই খাবারটা ভারি হওয়া প্রয়োজন। দিন শুরুর আগে আপনার শরীরের সঠিক পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন।


পরিমিত জলখাবার


একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রাতঃরাশ খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার বিপাক ক্রিয়া শুরু করে, আপনার রক্তে গ্লুকোজ বিপাক সারা দিন অনেক ভাল হয় এবং এটি আপনার শক্তির মাত্রা বাড়ায় এবং সারাদিনে আরও ভাল খাবার পছন্দ করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদেও প্রাতঃরাশকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


পুষ্টিবিদ সাহিবা ভরদ্বাজ এমনই কিছু খুব সাধারণ ভুলের কথা তুলে ধরলেন যা জলখাবারে করলে আমাদের গোটা মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া আঘাত পেতে পারে।


জলখাবার বাদ দেওয়া (Skipping Breakfast)


রাতে দেরি করে খাওয়া বা নতুন ডায়েট চেষ্টা করা, ক্যালোরি কমানো বা হয়তো আপনার কাছে জলখাবার খাওয়ার নেহাত সময়ই নেই। এটি সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ এতে শুধুমাত্র আপনার বিপাক ক্রিয়া কমজোর হবে না বরং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রাতঃরাশ সেই ঝুঁকিগুলিকে কমিয়ে দিতে পারে এবং আপনাকে বাকি দিনের জন্য কাজের ক্ষমতা দিতে পারে।


'এক মুঠো' জলখাবার (Bite-Sized Breakfast)


সকালে তাড়াহুড়োয় খালি একটা ফল বা একটা ছোটখাটো কিছু খেয়ে জলখাবার সারেন? এতে খিদে তো মিটবেই না, উল্টে কোনও কাজে মনও বসবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার না খেয়ে পরে এনার্জি স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাতে কাজের কাজ তো হবেই না, উল্টে বাড়বে ওজন। ফলে সকালে পেটভরে ক্যালোরিযুক্ত খাবার সারাদিন কাজের ক্ষমতা জোগায়। 


দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস (Speedy Eating)


শান্ত হয়ে বসুন, তারপর খান। এটাই খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনেও আমরা তা করি না। সবসময়ে তাড়ায় থেকে আমরা তাড়াতাড়ি বড় গ্রাসে খাবার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করি। একাধিক সমীক্ষার দাবি এভাবে খাওয়ার ফলে ওবেসিটি বা স্থূলতার প্রবণতা তৈরি হয়। এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাসও তৈরি হয়। এছাড়াও, আয়ুর্বেদ অনুসারে, আপনি যখন বসে আপনার খাবার খান, এবং সঠিকভাবে চিবিয়ে খান, তা হজম এবং পুষ্টির শোষণকে উন্নত করে। ফলে একটু গতি কমান, এবং জলখাবারের প্রত্যেক গ্রাসকে উপভোগ করে খান।


প্রোটিনের ঘাটতি (Going low on Protein)


নিজের পেশিকে খাওয়ানোর থেকে জলখাবারে প্রোটিন পূর্ণ খাবার থাকলে তার সুবিধা বেশি।  শরীরে প্রোটিন ভাঙতে সময় বেশি লাগে ফলে বেশি সময় ধরে পেট ভর্তি রাখে। তাই নিশ্চিত করুন যেন আপনার ব্রেকফাস্টে ভাল পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি বা স্নেহপদার্থযুক্ত। ডিম, স্যাঁকা স্যামন, বাদামের মাখন, দই এবং পনির খুব ভাল প্রোটিনের উদাহরণ। প্রসেসড মাংস যেমন সসেজ, সালামি, সিক, বেকন থেকে দূরে থাকাই ভাল।


কার্ব বা শর্করাকে না বলা! (Saying No to Carbs)


আরেকটি গুরুতর ভুল যা আমরা করি তা হল কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা। কার্বকে 'না' বলার বদলে সঠিকভাবে খাবার বাছুন। খাদ্যতালিকায় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট অন্তর্ভুক্ত করুন যা ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত করে এবং আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না এবং আপনাকে সারাদিন শক্তি দেয়। যেমন ধরুন ওটস, উপমা, পোহা, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি কিছু উদাহরণ হতে পারে। ফলের রস, ওয়াফলস, প্যানকেকের মতো সাধারণ কার্বোহাইড্রেটগুলি প্রতিদিনের ভিত্তিতে খাওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ তারা একটু বেলার দিকে শক্তির মাত্রা হঠাৎ করে হ্রাস করে দিতে পারে।


আরও পড়ুন: Diabetes: যে ফলগুলি এড়িয়ে চলা উচিত মধুমেহ রোগীদের


ফ্যাট থেকে ভয় পাবেন না এবং আপনার প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে ছোট অংশে আপনার জলখাবারে স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার টোস্টে অ্যাভোকাডো বা এক টেবিল চামচ বাদাম মাখন যোগ করা, আপনার সিরিয়াল বা স্মুদিতে বাদাম ও বীজ যোগ করা স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ করার ভাল উপায়। অসম্পৃক্ত চর্বি এবং বাদাম এবং ফ্ল্যাক্স বীজ থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্যও ভাল।