কথা ছিল শুক্রবার বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু, একদিন আগে কালীপুজোর রাতেই চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ২টো স্টেন্ট বসানোর পরও কেন হল হার্ট অ্যাটাক? হঠাৎ কী এমন হল মন্ত্রীর? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কালীপুজোর দিন কোনও ডাক্তার ছিলেন না। কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার এসে পাম্প করে যায়। একজনও সিনিয়র ডাক্তার আসেননি বলে তাঁর অভিযোগ।


হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকারের দাবি, 'যখন রোগীর এই ধরনের জটিলতা দেখা যাচ্ছে, তখন দ্রুত রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হবে, হাতে সময় ৫-৭ মিনিট, রোগী যদি ক্রিটিক্যাল কেয়ার থেকে দূরে থাকে, তখন একটা এমার্জেন্সি কল পেয়ে ডাক্তারদের পৌঁছতে বা আইসিসিইউতে আনতে দেরি হয়ে যেতে পারে।  তারপর মেশিনের সাহায্য তাঁকে ঠিক করা ববে, এতে বড় সময় নষ্ট হয়। সবসময় এই ধরনের রোগীদের চোখের সামনে রাখা উচিত।  দূরে নয়।'
ডা. সরকারের বলেন, আশা করব, আমরা এই সমস্ত ঘটনার থেকে শিক্ষা নিতে পারব। 


২টো স্টেন্ট বসানোর পরও কেন হার্ট অ্যাটাক? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ধীমান কাহালির মতে, দুটি স্টেন্টের মধ্যে রক্ত ক্লট হয়ে যেতে পারে। যদি ক্লট হয়, সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের চান্সেস থাকে। 


চিকিৎসকদের একাংশের মতে, স্টেন্ট বসানোর পরও কোনও কোনও ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।


তাঁর কর্মব্যস্ত জীবনে ছুটি বলে কিছু ছিল না। কিন্তু দীপাবলির রাতে চিরছুটিতে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কথা ছিল, শুক্রবার বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু আর ফেরা হল না।
২৪ অক্টোবর, রবিবার। স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে SSKM-এ চেকআপে যান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সেদিনই পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে ভর্তি করা হয় SSKM মেডিক্যাল কলেজে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয় ৭ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। 
পরীক্ষায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে ব্লকেজ পাওয়া যায়। কার্ডিওলজি বিভাগের ICCU-তে চিকিৎসা শুরু হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

অক্সিজেন ও বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে গত সোমবার পঞ্চায়েত মন্ত্রীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে দু’টি স্টেন্ট বসানো হয়। এরপর ICCU-তেই রাখা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।গত বুধবার, তাঁকে কার্ডিওলজি বিভাগের কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়।


পরদিন সকালে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে যাওয়া হয় উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিনে। বিকেলে শশা দিয়ে মুড়ি খান পঞ্চায়েতমন্ত্রী। রাতে খেতে চেয়েছিলেন চিকেন স্যুপ।এরপর ডাক্তারের পরামর্শে উডবার্ন ওয়ার্ডের করিডরে হাঁটাহাঁটি করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।


কিন্তু ফেরার পর ফের বুকে অস্বস্তি। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারদের খবর পাঠানো হয়। দেওয়া হয় বাইপ্যাপ সাপোর্ট। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে পাঠানো হয় কার্ডিওলজি বিভাগের ICCU-র ৯ নম্বর বেডে। কিন্তু, ততক্ষণে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। 


 


এটাই ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। সেই সদাহাস্য রাজনীতিবিদই চিরবিদায় নিলেন।