কলকাতা : ছোট্টবেলা থেকেই ডাক্তারবাবুর চেম্বারে গেলেই তিনি আগে লম্বা করো জিভটা বার করতে বলেন। তারপর পেল্লায় সাইজের একটা টর্চ নিয়ে দেখেন জিভের পুঙ্খানুপুঙ্খ। কিন্তু জিভ দেখে কি রোগের আন্দাজ করা যায়? চিকিৎসকরা বলছেন , হ্যাঁ। শিশু থেকে বৃদ্ধ জিভের রঙে বদল কিন্তু শরীরের ভাল-মন্দ নিয়ে নানা ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। কারও জিভ সাদা, কারও জিভে ফুসকুড়ির মতো আস্তরণ, কারও জিভ আবার হাল্কা নীল। এগুলো কি কোনও রোগের ইঙ্গিত? চিকিৎসকরা বলছেন,
জিভ আমাদের শরীরে একটি মাংসল অঙ্গ, যা পিছন দিকে ছাড়া বাকি দিকে ঘোরানো যেতে পারে। ৩ টি কেন্দ্রীয় স্নায়ু দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত। স্বাদগ্রহণ ও পাচন প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক কাজটিই করে জিভ। এই অঙ্গটি অনেক অসুখেরই ইঙ্গিত দেয়। এর তালিকাটা কিন্তু লম্বা । বিস্তারিত জানাচ্ছেন চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় ( Dr Suddhasatwya Chatterjee)।
- স্ট্রোক হলে জিভের কিছু অংশ কাজ করে না। দুর্বল ও ছোট হয়ে যায়।
- স্বাদকোরকগুলিও অনেকসময় সমস্যা হতে পারে স্ট্রোক হলে।
- চোখে ড্রাইনেসের সমস্যা হলে জিভেও তার প্রভাব পড়তে পারে। জিভেও শুষ্কভাব আসতে পারে।
- হাইপো থাইরয়েডের ক্ষেত্রে জিভ মোটা হয়ে যায়।
- ফুসফুস-হৃদপিণ্ডের সমস্যা হলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। অর্থাৎ রক্তও কিছুটা নীলচে হয়ে যায়। জিভের নিচটাও তখন নীলচে দেখায়। যাকে বলে সায়নোসিস। সায়নোসিসের কারণ কিন্তু হার্ট বা ফুসফুসের, যে কোনও একটির সমস্যার ইঙ্গিতই হতে পারে।
- হজমের সমস্যা লালাগ্রন্থির কম ক্ষরণের জন্যও হতে পারে।
- রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে জিভ হলুদ লাগে।
- অ্যানিমিয়ার লক্ষণও ধরা পড়ে জিভে।
- জিভে ঘা হলে , তাকে বলে গ্লসাইটিস (glossitis)।
- জিভ লাল হয়ে গেলে তাকে বলে অ্যাঙ্গরি লুকিং টাং।
- স্বাদ কোরক নষ্ট হয়ে যাওয়া, মশলাদার খাবার খেলেই জিভ জ্বালা করার কারণ হতে পারে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের এর ঘাটতি।
- কোটেড টাং বা জিভে সাদা আস্তরণ পড়ার কারণ অনেক অন্তর্নিহিত বড় অসুখও হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের ইঙ্গিতও জিভ সাদা হয়ে যাওয়া। তবে আকাশ-কুসুম চিন্তা না করে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
- মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে জিভ মোটা হয়ে যায়।
- জিভের রং কালচে হয়ে যায় শরীরে অতিরিক্ত নিকোটিন গেলে। আবার radiation therapy চললেও জিভের রঙ কালচে হয়ে যায়। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে জিভ কালো হয়ে যায়।
- কারও কারও আবার অতিরিক্ত ক্যাফাইন সেবনে জিভ খয়েরি হয়ে যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রেও জিভ দেখে অনেক অসুখ সম্পর্কে ধারণা করেন চিকিৎসকরা। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন , আলোচনায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দেব রায় ( professor and head of pediatrics, ICH, Kolkata)
- শিশুদেরও সায়নোসিস হয় হঠাৎ নীল জিভ, যা হার্ট বা ফুসফুসের অসুখের লক্ষণ।
- জিভ শুষ্ক হয়ে থাকা মানে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ।
- জিভের রঙ যদি ফ্যাকাসে হয়ে যায় তাহলে তা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- জিভে সাদা আস্তরণ পড়ে থাকা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ইঙ্গিত হতে পারে।
- স্ট্রবেরির মতো লাল আর খোঁচা খোঁচা অ্যাপিয়ারেন্স হয়ে থাকা কাওয়াসাকি ডিসিজের লক্ষণ হতে পারে।
- জিভের রঙ যদি ফ্যাকাসে হয়ে যায়, অর্থাৎ হালকা গোলাপি হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পুষ্টির অভাব রয়েছে।
- লিভারের সমস্যা, জন্ডিস বা কোনও রকমের পাচনতন্ত্রের সংস্যার ইঙ্গিত দেয় হলুদ জিহ্বা।
- জিভ যদি বড় হয় বা বেরিয়ে আসে ('scrotal tongue' or 'lingua plicata'.), তাহলে তা ডাউন সিনড্রোমের লক্ষণও হতে পারে।
- জিভ যদি বড় হয় , তা থাইরয়েডের লক্ষণও হতে পারে (Macroglossia is the abnormal enlargement of the tongue)
- ত্বকের রোগের লক্ষণও জিভে প্রতিফলিত হয়।
- ভিটামিনের অভাবে জিভ লাল আভা নেয়।
- ভিটামিন বি- এর অভাবে জিভ লাল হতে পারে। ফুসকুড়িও বের হয়। জ্বর এলেও জেভ লাল হওয়ার প্রবণতা থাকে।