কলকাতা : সর্দি কাশি, ঘুষঘুষে জ্বর। ওষুধ খেয়ে সর্দি কমা, আবার ফিরে আসা। ঋতু পরিবর্তনের সময় এই সমস্যা খুব স্বাভাবিক। বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ইদানীং বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এমন উপসর্গ নিয়ে আসা শিশুদের যক্ষ্মা ধরা পড়ছে। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ভয় ধরাচ্ছে যক্ষ্মা রোগের বিষয়টি। কারণ করোনা অতিমারীর আগে থেকেই ভারতে যক্ষ্মা রোগের চিত্রটা বেশ ভয়াবহ। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের কনসাল্ট্যান্ট পিডিয়াট্রিশিয়ান ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানাচ্ছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও জ্বর, কাশি, পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে আসছে বেশ কিছু শিশুই। দেখা যাচ্ছে, তাদের কারও কারও হয়েছে যক্ষ্মা বা টিবি (Tuberculosis )। ভারতে যক্ষ্মা বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ক্রমাগত চিকিত্সা, টিকাকরণ, সচেতনতা ও সরকারি উদ্যোগে সংক্রমণে কিছুটা রাশ টানা গেলেও করোনাকালে বেশ কিছু কারণে ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়েছে টিবি-র। চিকিত্সক মনে করছেন এর মূল কারণ, সকলে গৃহবন্দি থাকায় বড়দের থেকে ছোটদের আক্রান্ত হওয়া, মূল মনোযোগটা করোনার দিকে ঘুরে যাওয়া ও ভ্যাকসিন মিস হওয়া। মূলত কী কী উপসর্গ নিয়ে আসছে শিশুরা ?
ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানালেন,
- টিবির লক্ষণগুলি হল -
- কাশি না কমতে চাওয়া
- প্রায়ই জ্বর। সেরে যাচ্ছে, আবার আসছে। সঙ্গে ঘুষঘুষে কাশি।
- পেটের যন্ত্রণা।
- গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া।
- পেটের সমস্যা
- ইউরিনের সমস্যা
- পিঠে ও কোমরে ব্যথা।
- প্রস্রাবে রক্ত
- খিদে না পাওয়া
- কখন সতর্ক হবেন ?
সর্দি কাশি হলে প্রথমে কেউই বড় একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু অনবরত কাশি হলে ডাক্তার দেখাতেই হবে। কাশির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া মানে তো শিয়রে বিপদ। হওয়া এবং তার সঙ্গে রক্ত বেরনো টিবি-র অন্যতম উপসর্গ। রাতের ঘুমেও সমস্যা হতে পারে।
- করোনাকালে টিবি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কেন প্রবল ?
BMJ Global Health জার্নালের তথ্য অনুসারে, করোনা ভাইরাসের ভয় সারা পৃথিবীকে গ্রাস করার আগে থেকেই আরও একটি সংক্রামক রোগ ভারতের কাছে বরাবরই আতঙ্কের কারণ হয়ে থেকেছে। টিবি বা টিউবারকিউলোসিস। ২০১৯ এর হিসেব অনুসারে ২.৬৪ মিলিয়ন ভারতীয় টিবিতে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর হারও নেহাত কম নয়। পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে প্রতিদিন হাজার জন মানুষ টিবি রোগে মারা যান। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে ভারতের থেকে বেশি টিবি আতঙ্ক কোথাও ছিল না ! এর কারণ অবশ্যই সচেতনতার অভাব, দ্রুত সংক্রমণ এবং টিবি রোগীদের সঠিকভাবে আইসোলেশন এর বন্দোবস্ত না থাকা । এরপর এল ২০২০। সারাদেশকে গ্রাস করল অতিমারী আতঙ্ক । এর ফলে সরকারের মূল দৃষ্টিকোণ ঘুরে গেল করোনা প্রতিরোধের দিকে । বেশকিছু সরকারি হাসপাতালকে এক্সক্লুসিভলি করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হল। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মনযোগ মূলত রইল করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে । এরপর লকডাউনে সঙ্কট আরও জোরদার হলো । বেশিরভাগ মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ল । টিবি সংক্রমিত কোন বয়স্ক মানুষের থেকে সহজেই আক্রান্ত হল বাচ্চারাও কারণ এই সময় সকলেই গৃহবন্দি। মূলত যেসব জায়গায় মানুষ ঘিঞ্জিভাবে বসবাস করে, সেখানে সংক্রমণের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হল । এরপরে লকডাউনে গণপরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বা নিয়ন্ত্রিত থাকায় টিবি আক্রান্তরা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল কিংবা তাদের নজর মূলত কেন্দ্রীভূত হল করোনাতে। অনেকের ওষুধ বন্ধ হয়ে অর্থনৈতিক সংকটে চিকিৎসা করানো ছেড়ে দেওয়ার সংখ্যাও কম নয় । ন্যাশনাল হেলথ মিশন'স হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (National Health Mission’s Health Management Information System (NHM-HMIS) - এর তথ্য অনুসারে লকডাউনের ফলে টিবি রোগের চিকিৎসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে । চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ায় রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত সামলে ওঠা কঠিন । সেইসঙ্গে করোনাকালে কমেছে টিবির টিকাকরণও।