“Do your squats, drink your water.”  -  শরীর সুস্থ  রাখতে এই টিপস দিয়ে থাকেন অনেকেই। চুলের সমস্যা বলুন, বা ত্বকের কিংবা পাচনতন্ত্রের, সবকিছু পারফেক্ট রাখতে সঠিক পরিমাণে জল খাওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু ঠিক কতটা জল শরীর সুস্থ রাখতে প্রয়োজন? আবার পরিমাণের অতিরিক্ত জল খেলে কোনও ক্ষতি হবে না তো ? এই প্রশ্নগুলি সবসময়ই আমাদের মনে ঘুরে ফিরে আসে। জল নিয়ে নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিত্সক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় (Dr Suddhasatwya Chatterjee. MBBS,DNB. Speciality: General Physician)।  
চিকিত্সক জানালেন -



  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জয় খাওয়ার পরিমান হওয়া উচিত দিনে আড়াই থেকে ৪ লিটার অবধি। 

  • শীত-গ্রীষ্ম অনুসারে শরীরে জলের চাহিদায় কিছুটা তারতম্য হতে পারে। 

  • কায়িক পরিশ্রম যাঁরা করেন, তাদের বেশি জল খেতে হবে। 

  • গড়ে ধরা হয়, একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষের রেচন পদার্থ বা প্রস্রাব হয় দেড় থেকে ২ লিটার পর্যন্ত। আর বাকি ১ থেকে দেড় লিটার জল প্রয়োজন শারীরবৃত্তীয় কাজে। আবার ৫০০ মিলি মতো জল শরীর থেকে ঘাম হিসেবে বের হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে। আমাদের সারাবছরই কিন্তু ঘাম হয়ে থাকে। যাকে বলে ইনসেন্সিবল পার্সপিরেশন। যে ঘাম হয়, আমরা অনুভব করতে পারিনা। তাই সবমিলিয়ে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে দিনে আড়াই থেকে ৪ লিটার জল খেতেই হবে। এবার একজনের উচ্চতা ও ওজন অনুসারে এই চাহিদাটা কিছুটা বাড়বে। 

  • কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩-৪ লিটার জল মোটেই খাওয়া যাবে না। বিশেষত শরীরে তিনটি অঙ্গের সমস্যা থাকলে জল খেতে হবে ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া হিসেব অনুসারে। 

  • বিশেষত যাঁরা লিভার, হার্ট বা কিডনির অসুখে ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জল খাওয়ার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

    হার্টের অসুখে জল কম খেতে হবে কেন ? 
    আমাদের শরীরে গড়ে ৫ লিটার মতো রক্ত রয়েছে। এখন এই রক্তের  ৯০ শতাংশই জল। মানুষের হৃদপিণ্ডে অসংখ্য শিরা-ধমনী থাকে।  হার্টের কোনও অসুখ হলে সেই শিরা বা ধমনীগুলিতে ব্লকেজ হয়। ফলে হার্টের সংকোচন-প্রসারন ক্ষমতা হ্রাস পায়। তখন বেশি পরিমাণে রক্ত হৃদপিণ্ড পাম্প করতে পারে না। তাই সেক্ষেত্রে জল খাওয়ার পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

    যকৃত বা লিভারের অসুখে জল কম খেতে হবে কেন ? 
    যকৃতের বিভিন্ন অসুখ রয়েছে, যাতে দেখা যায়, শরীর থেকে জল বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। দেখা যায়, তাতে পেটের মধ্যে জল জমে। যাকে উদরি (ascites) বলা হয়ে থাকে চলিত কথায়। পেট ফুলে যায়। সেই ক্ষেত্রেও জল খেতে হবে মেপেই। ত্বক-চুল বা হজমের স্বার্থে বেশি বেশি করে জল খাওয়া যাবে না। 

    কিডনির অসুখে জল কম খেতে হবে কেন ? 
    কিডনির শরীরের রেচন পদার্থ তৈরি করে। যখন সেই সিস্টেমে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তখন কিডনি নির্দিষ্ট  পরিমাণে জল প্রস্রাব আকারে বের করে দিতে পারে না। তখন বাইরে থেক জল খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়া উপায় নেই। 

    মনে রাখতে হবে - 


  • হার্টের সমস্যা হলে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ মেনে জল খান। 

  • কিডনির অসুখের রোগীরা নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ মেনে জল খান। 

  • লিভারের সমস্যায় পরামর্শ নিন গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্টের। 

  • খেয়াল রাখবেন জল মানে কিন্তু শুধুমাত্র পানীয় জলটুকু নয়, চা-কফি-সরবত এমনকী ডালের জলটুকুও ফ্লুইড ইনটেকের হিসেবের মধ্যে রাখতে হবে। 

  • এছাড়াও পায়ে গোদ হলে বা শিরা-উপশিরায় কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা হলেও জলের পরিমান নির্দিষ্ট করতে হয়। 

  • ওজন কমাতে চাইলে জল বেশি খেতেই হবে।