মাথা থাকলে মাথাব্যথা হয় এ পুরনো প্রবাদ । তবে যে কোনও মাথাব্যথা কে অনেকে ব্রেইন টিউমার ভেবে ভুল করেন । আবার অনেক ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে সতর্কতার অভাবে ব্রেইন টিউমারের সমস্যা বড় আকার ধারণ করে।  আজ ৮ জুন বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস। প্রতিবছর আমাদের দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত হন।  আমাদের দেশের বিরাট জনসংখ্যার নিরিখে শতাংশ হিসেবে সেটা যথেষ্ট কম হলেও, যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্তের সংখ্যা । এর কারণ হিসেবে ডাক্তাররা মনে করছেন সমস্যার শুরুতেই রোগ নির্ধারনে অনেক বেশি সংখ্যক রোগীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। আগে যা ধরাই পড়ত না, এখন মডার্ন ইমেজিং টেকনিক অনেক বেশি উন্নত হওয়ায় রোগ ধরা পড়ছে বেশি । তাই হিসেব অনুসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ।


ব্রেইন টিউমার নিয়ে নানা রকম প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক   ডা. অলোক পণ্ডিত (Dr. Alak Pandit  DM(Neurology)  Professor Neurology     Bangur Institute Of Neuroscience) 


 


ডা. অলোক পণ্ডিত জানালেন মাথার খুলির মধ্যে যে কোনও টিউমারকে সাধারণত ব্রেইন টিউমার বলা হয় । এরমধ্যে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি ব্রেন টিউমারকে।
1.  ক্যান্সারাস টিউমার
2. বিনাইন টিউমার

ক্যান্সারাস টিউমার মস্তিষ্কেই জন্ম নিতে পারে বা শরীরের অন্য অঙ্গ থেকে এসে মস্তিষ্কে ছড়ায় । অর্থাৎ শরীরের অন্য কোথাও ক্যান্সার হয়েছে তার থেকেই কর্কট রোগের সেল ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কে । এই ধরনের টিউমার নিশ্চয়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা কঠিন। তবে আশার কথা , কোলন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের থেকে আসা ব্রেন টিউমার সাধারণত মস্কিষ্কের এক জায়গাতেই থেকে যায়। সেটা অস্ত্রোপচার করে বাদ দিলে সমস্যা অনেকটাই কমে। 

আর নন ক্যানসারাস ব্রেন টিউমারে আশঙ্কা  কম। আতঙ্ক কম । চিকিৎসা করে করিয়ে রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। কোন ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা তা কতটা চিন্তার, সারিয়ে তুলতে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন,  তা একেবারেই মাথার খুলির মধ্যে টিউমার ঠিক কোন জায়গায় হয়েছে এবং প্রকৃতি কেমন তার উপরেই নির্ভর করে। চিকিৎসকদের পরামর্শ,  উপসর্গ দেখলে যত তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি সমস্যা নির্ধারিত হবে। 


 


আসি ব্রেইন টিউমারের কিছু উপসর্গের কথায় । জানাচ্ছেন  ডা. অলোক পন্ডিত ।

ব্রেইন টিউমারের উপসর্গ  -



  •   নতুন করে মাথাব্যথা হলে সতর্ক থাকুন। কোনও কোনও সময় দেখা যায় মাথাব্যথা চলতেই থাকছে, বারবার হচ্ছে কিংবা থেমে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। একথাও ঠিক মাথা থাকলেই মাথা যন্ত্রণা হয়। কিন্তু মাথা যন্ত্রণার চরিত্র যদি হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয় এবং তা ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

  • শরীরে কোন একটি দিক কি অবস অনুভূত হচ্ছে ? তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

  •   কোনও কোনও সময় ব্রেইন টিউমার এর উপসর্গ মাথাব্যথা নাও হতে পারে । হঠাৎ দেখা গেল শরীরে কোন একটা দিকে অনুভূতি কম হচ্ছে বা আস্তে আস্তে কোন একটি দিক অবশ হচ্ছে। তাহলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে ।

  • হঠাৎ করে চোখে দেখতে কি অসুবিধা হচ্ছে ? চোখের কোন একটা দিক ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে?  বিশেষত আমরা যখন চোখ দিয়ে দেখি আমরা চোখের চারিপাশের সমানভাবে দেখি । চোখের দুই দিকে কি আঁধার নেমে আসছে ? তাহলে অবশ্যই স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান।

  • একজন সুস্থ মানুষের ব্যবহারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ? কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে ? সে ক্ষেত্রে অবশ্যই টিউমারের সম্ভাবনা থেকে যায়।  দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

  • হঠাৎ করে কিছু কথা ভুলে যাওয়া অর্থাৎ সামান্য কয়েক দিন আগের কথা ভুলে যাওয়া - এই ধরনের উপসর্গ মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।

  • হঠাৎ শরীরে খিচুনি ধরা বা কোন একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে খিঁচুনি ধরা ব্রেন টিউমরের অন্যতম লক্ষণ ।

  • কোন ক্ষেত্রে কী লক্ষণ দেখা দেবে এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে মস্তিষ্কের কোন জায়গায় টিউমরটি তৈরি হয়েছে তার উপর।

  • অনেক সময় ব্রেইন টিউমারের কারণে হাঁটাহাঁটিতে ভারসাম্যের অভাবে লক্ষ্য করা যায় ।

    ব্রেইন টিউমারের কারণ  -

    ব্রেইন টিউমরের নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনও জানতে পারা যায়নি।কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গেছে,  কোন পরিবারিক ইতিহাস থাকলে  এ রোগের সম্ভাবনা অল্প হলেও বৃদ্ধি পায় ।

    মোবাইল ফোনে ব্রেন টিউমর ? -
    মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করলে ব্রেইন টিউমারের সম্ভাবনা বাড়ে । এই কথা সম্পূর্ণ ভুল । বলছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ । কারণ যে ধরনের রেডিয়েশন থেকে ব্রেইন টিউমার হয়ে থাকে,  মোবাইল ফোনে সেই  রেডিয়েশন হয় না। 

    একটি ভাবনা সব সময় মাথার মধ্যে খেলা করে ব্রেইন টিউমার মানে কি মৃত্যু ? ডাক্তাররা বলছেন না একেবারেই নয় । অনেক সময়ই টিউমার বিনাইন হয়।  তাই যত তাড়াতাড়ি টিউমার ধরা পড়বে , ততটাই তাড়িতাড়ি সারিয়ে তোলা যাবে রোগীকে।