হায়দরাবাদ: ভারতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় যক্ষ্মার কারণে। আর এরপরই রয়েছে হেপাটাইটিস। এটি এমন মারণ রোগ, যার কারণে প্রতি বছর বহু সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় প্রায় ৫ কোটি ভারতীয় হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণে ভুগছেন এবং হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত হয়েছেন ১.২ কোটির বেশি। সংখ্যার বিচারে তাই রোগও ভয়াবহ। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রাক্কালে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা নেওয়া করোনভাইরাসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। 


শুধু ভারত নয়, এই হেপাটাইটিস রোগটিকে গুরুতর হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তাই এ বছর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটির থিম হিসেবে- "Hepatitis can't wait" এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই রোগের ক্ষেত্রে বিশ্বের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, হেপাটাইটিসজনিত অসুস্থতায় প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর হয়। এই রোগে 'অপেক্ষা' শব্দটি তাই 'আপেক্ষিক'। 


Gleneagles Global Hospitals-এর কনসালটেন্ট হেপাটোলজিস্ট ডাঃ চন্দন কুমার বলেন শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য এই রোগটি সমস্যার এবং চিন্তারও। চিকিৎসকের কথায়, "এই ভাইরাস মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের কারণ হতে পারে। যা থেকে পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই রোগ মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে অনেকটাই। কিন্তু যারা আক্রান্ত হন তাদের ৮০ শতাংশ এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নন। তাই শেষ পর্যায়ে যখন ধরা পড়ে রোগটি তখন আর কিছু করার থাকে না।"


একই সুর শোনা যায় SLG Hospitals-এর কনসালটেন্ট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা: পি অনিতা রেড্ডির কথায়। ভারতে হেপাটাইটিস-বি এর অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত মদ্যপান। ভারতে লিভারের ক্যান্সারের প্রধান কারণও এটি। পি অনিতা রেড্ডি বলেন, "মানবদেহের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার বা যকৃৎ। এই অঙ্গ যদি সংক্রমিত হয় সেক্ষেত্রে শরীরে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়ে। যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। লিভারে ঘা হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে সিরোসিস বলা হয়। হেপাটাইসিস নানা কারণে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাসের আক্রমণ, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, ড্রাগ টক্সিসিটি, ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা।"


করোনাভাইরাসকে রুখতে যেমন কোভিড টিকাকরণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনই হেপাটাইটিস বিরুদ্ধে টিকা দেওয়ার সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। Continental Hospitals-এর মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড: রঘুরাম কোন্ডালা বলেন, "বহু বছর ধরে হেপাটাইটিস-বি এর বিরুদ্ধে টিকা পাওয়া যাচ্ছে  বিশ্বজুড়েই। যা ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে।  তাই শিশুর জন্মের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত। কমপক্ষে চার সপ্তাহ বাদে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনের দুটি বা তিনটি ডোজ দেওয়া হয়। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে হেপাটাইটিস-বি সংক্রমণ রুখতে।" 


তাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে সেই টিকাকরণের সচেতনতা সকলের মধ্যে জাগিয়ে তোলার পরামর্শে দিচ্ছেন একাধিক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই রোগ টিকে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়েই দেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও জানান হয়েছে। করোনার পাশাপাশি এই রোগকেও দূর করার ডাক দিয়েছে স্বাস্থ্য মহল।