কলকাতা: ছোটবেলার দোল বলতে আবছা মনে পড়ে সিলেট, বাংলাদেশ । ১১ বছর বয়স অবধি শৈশব কেটেছে সেখানেই। তারপর ১৯৪৮, দেশভাগ। ভারতে এসে প্রথমে আস্তানা ছিল আনুলিয়া গ্রাম, রানাঘাট। সেখানে রঙের উৎসব উদযাপনে মিশে থাকত সংস্কৃতিবোধ, সম্ভ্রম। গ্রামের সেই অনাবিল আনন্দের দোলই সবচেয়ে প্রিয় ছিল বিভাস চক্রবর্তীর।
সিলেটের স্মৃতি মনে পড়ে না তেমন। বিভাস চক্রবর্তী বলছেন, 'খুব ছোট ছিলাম তখন। আবছা মনে পড়ে, ওখানে অনেক আশ্রম ছিল। দোলের দিল সেখানে রাধা কৃষ্ণের গান হত। রাস্তার চারিদিক আবিরে রাঙা হয়ে থাকত, আর তার মধ্যেই বেরতো কীর্তনিয়ার দল। তার একটা অন্য আমেজ ছিল।' সিলেট ছেড়ে চলে আসার পর অবশ্য বদলে গিয়েছে দোলের ছবিটা। বিভাস চক্রবর্তী বলছেন, রানাঘাটের দোল খেলাটা ছিল অনেকটা বিজয়ার মত। বিজয়ার দিন যেমন সিঁদুর খেলা হয়, সবার বাড়ি গিয়ে সৌজন্য বিনিময় হয়... তেমন করেই দোল খেলা হত। সামাজিকতার একটা অঙ্গ ছিল দোল উৎসব। সেখানে রঙ নিয়ে কোনও উন্মাদনা বা অসভ্যতা হত না।' তিনি আরও যোগ করলেন, 'খুব সুন্দর পরিবেশ ছিল রানাঘাটে। সবাই নিজের সমবয়সীদের সঙ্গে দোল খেলত। বড়দের পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম করতাম আমরা ছোটরা। আর সাদা জামা পরে দোল খেলতে বেরোতাম। যাতে আবিরের রঙ বেশি করে ফুটে ওঠে। আমার দিদির খুব ঠাণ্ডা লাগার ধাত ছিল। মনে আছে, মা দিদিকে খুব সাবধানে রাখতেন। সেই তখন থেকেই বিভিন্ন কারনে দোলের দিন বাড়ির মেয়েদের নিরাপত্তার দিকে খুব বেশি নজর থাকত আমাদের। '
এরপরের ঠিকানা কলকাতা। পাড়া, শ্যামবাজার। বিভাস চক্রবর্তী বলছেন, 'কলকাতার দোল ছিল রানাঘাটের দোলের থেকে বেশ আলাদা। এখানে এসে দোল খেলিনি কখনও। কলকাতায় রঙ খেলা মাঝেমধ্যে অত্যাচারের সামিল হয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। অনেক সময় রাস্তায় বেরলে জোর করে গায়ে রঙ দিয়ে দেওয়া হত। অনেক সময় রঙের বদলে কাদা মাখিয়ে দেওয়া হত। খারাপ লাগত।'
এরপর, অধ্যায় গল্ফ গ্রীন। বিভাস চক্রবর্তী বলছেন, 'এখন দোলে আর রাস্তায় বেরোই না। তবে আমাদের পাড়ায় দেখি রঙ মাখানোর নামে অসভ্যতা হয় না। আবাসন থেকে শুরু করে রাস্তা, খুব সুচারুভাবেই রঙ খেলা হয়। মাঝেমধ্যে দোলের দিন বাড়িতে মেয়ে-জামাই আসে। সেই বছর খুব উৎসাহ নিয়ে আবির খেলা হয়। আমার বাঁদুরে রঙ পছন্দ না কোনোদিন। আবির খেলাই আমার চিরকালের প্রিয়।'