কলকাতা : বাড়ছে উদ্বেগ। চড়ছে মৃত্যুর গ্রাফ । ক্রমাগত বাড়ছে অ্যাডিনো ( Adenovirus ) আতঙ্ক। হাসপাতালে হাসপাতালে সন্তানহারাদের কান্না। কিছুতেই যেন বাগে আনা যাচ্ছে না সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতেই সমাগত বসন্ত উৎসব। সবার রঙে রং মেলানোর দোল বা হোলি। আর এই উৎসবের আনন্দ অনেকটাই জুড়ে শিশুদের সঙ্গে। এবার রং খেলা কতটা সমীচীন হবে, বললেন ডা. অপূর্ব ঘোষ । 


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ ( Dr Apurba Ghosh ) মনে করছেন, রঙের উৎসব মানেই অনেকের জমায়েত। কাছাকাছি, ঘেঁষাঘেঁষি হওয়া। কোনও কোনও সময় একই জলের ব্যবহার হয়। আর সেখান থেকেই বাড়ে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা। তাই যেখানে নিতান্ত আবডাল টুকুও রাখা সম্ভব নয়, সেখানে এই বছরটা রং খেলা এড়িয়ে চলাই ভাল। বিশেষতঃ, ছোটদের এই উৎসবে এবার সামিল না করানোই শ্রেয় ।  

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি ( Prabhas Prasun Giri )  জানালেন, একই জলে স্নান করলেও অ্যাডিনোভাইরাস ছড়ায় । তাই একে সুইমিং পুল ভাইরাসও বলা হয়। বিগত মাসখানেক ধরে দেখা যাচ্ছে যেসব বাচ্চারা সর্দি-কাশি-হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট-নিউমোনিয়া-রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট জাতীয় সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ। যে হারে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বা আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছে, তাতে বলাই যায় কলকাতা সহ রাজ্যে এই মুহূর্তে অ্যাডিনো ভাইরাসের এপিডেমিক চলছে। 



  •  অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ হলে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র জ্বর থাকছে। সাত, দশ থেকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দিন চোদ্দ পর্যন্ত তীব্র জ্বর থাকছে বাচ্চাদের।

  • তাপমাত্রা কারও কারও ১০৪ বা ১০৬ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাচ্ছে। জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ব্যবহার করলেও অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জ্বর সেভাবে কমে না। অনেক সময় তীব্র কাঁপুনি নিয়ে জ্বর আসতে পারে। ঠোঁট, মুখ লাল হয়ে যায়। ফুসফুস, চোখ পেটে ইনফেকশন তৈরি করে এই ভাইরাস। যার জেরে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে বাচ্চাদের।

    ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ি ( Dr Koushik Lahiri ) জানালেন, যেসব রং বাজারে ভেষজ রং বলে বিক্রি হয়, সেগুলির নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। তাই অ্যাডিনো আতঙ্কের কথা বাদ দিলেও যাঁদের বিভিন্ন অ্যালার্জি রয়েছে বা ত্বক সেন্সিটিভ , তাদের পক্ষে রং খেলায় সমস্যা হতে পারে। তাই বাড়িতেই রং তৈরি করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। ব্যবহার করা যেতে পারে বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি, আমলা, হলুদ, হেনা জাতীয় জিনিস। আবিরের বেস হিসেবে ব্যবহার করা যায় ট্যালকম পাউডার। হেনা সারারাত ভিজিয়ে তৈরি করা যেতে পারে জল রং। হলুদগুঁড়ো, রক্তচন্দন বা হেনা পাউডার বা ভুষো কালি তেলে গুলে তৈরী করেও রং তৈরি করা যায়। কিন্তু এবার এই অ্যাডিনোভাইরাস ও ফ্লু এর বাড় বাড়ন্তের মাঝে শিশুদের বাদ রেখেই রং খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।