কলকাতা : মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের শরীরের যাবতীয় কার্যকলাপ। কিন্তু সেই মূল যন্ত্রেই যদি অক্সিজেন কম পৌঁছায় ? কী ঘটতে পারে? ভয়ঙ্কর কিছু ? এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বিশিষ্ট চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায় । 

মস্তিষ্কে অক্সিজেন কীভাবে পৌঁছায়
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত  অক্সিজেন । এই অক্সিজেন মাথায় বয়ে নিয়ে যায় রক্তবাহক ধমনী, হিমগ্লোবিন বা লোহিত রক্তকণিকা মারফত। এই অক্সিজেন অক্সিহিমোগ্লোবিন থেকে কোনও টিস্যুতে পৌঁছনোর পর ভেঙে গিয়ে কোষে চলে যায়। আর সেখান থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড আবার শিরা দিয়ে রক্ত মারফতই প্রথমে হার্ট ও পরে ফুসফুসে পৌঁছায়, পরে তা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কোষে যে ক্রমাগত বিপাক চলে, তার জন্য দরকার অক্সিজেন। অক্সিজেনের ঘাটতি হলে এই কোষে বিপাক পদ্ধতি চলে , তার থেকে এনার্জি কম পরিমাণে তৈরি হয়। তাই অক্সিজেনের ঘাটতি মানেই শক্তি কম তৈরি হওয়া ।


কেন ব্রেনে অক্সিজেন কম পৌঁছায়  ? 
শরীরে যখন হিমোগ্লোবিনে ঘাটতি সমস্যা ডেকে আনতে পারে। এই ঘাটতি কী কী কারণে হয় ?
- যখন বোন-ম্যারো পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে পারছে না। 
- আবার লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে। 
- আয়রনের ঘাটতি বা অ্যানিমিয়া যদি হয়।
- ভিটামিন বি১২ বা ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতিতেও হিমোগ্লোবিনে ঘাটতি হতে পারে। 
- থ্যালাসেমিয়া ও অন্যকোনও জন্মগত সমস্যাতেও হিমোগ্লোবিনে ঘাটতি হতে পারে।
- কোনও কারণে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত একসঙ্গে বেরিয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। 

এছাড়াও ...
- ফুসফুসে সমস্যা হলেও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে রক্তে। যেমন - সিওপিডি (Chronic Obstructive Pulmonary Disease) , অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ( Obstructive sleep apnea ) , নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যানসার, বুকে জল জমা (Pleural effusion) ইত্যাদি সমস্যায় মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছতে পারে।  



- হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা যদি ভাল না হয়, তখনও কম রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। যেমন - হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক, জন্মগত কিছু হার্টের অসুখ থেকেও কম রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছয়। এছাড়া মায়োকার্ডিয়াইটিস (myocarditis) , কার্ডিওমায়োপ্যাথি (cardiomyopathy) হলে এই সমস্যা হতে পারে। হার্টের ভালভগুলি ঠিক মতো কাজ না করলেও এমন বিপত্তি হতে পারে , যাকে বলে valvular heart disease । 


মস্তিষ্কে কম রক্ত পৌঁছলে কী বিপত্তি হয় 


- দুর্বল লাগবে, অল্পেতেই ঘুম ঘুম পাবে। 
-রাতে যথেষ্ট ঘুমের পরও দিনে খালি ঘুম পাবে।
- সামান্য কায়িক পরিশ্রমেই ক্লান্তি ঘিরে ধরবে ।
- ভুলে যাওয়া।
- ভুল বকা।
- অসংলগ্ন কথাবার্তার সমস্যা। 
-গাড়ি চালালে বড় বিপদ হতে পারে এই সমস্যা থাকলে। 


অর্থাৎ মোটের উপর অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ব্রেন কাজ করা বন্ধ করবে না ঠিকই , কিন্তু সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে, ছোট ছোট স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। 


সমাধান হল সমস্যাভিত্তিক চিকিৎসা

- হিমোগ্লোবিনে ঘাটতি হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট বাইরে থেকে দিতে হবে। 
- থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের চিকিৎসা হবে রক্ত দিয়ে । এই রোগের বিশেষ চিকিৎসা আছে। সেই মতো এগোবেন চিকিৎসক। - ফুসফুসের কোনও সমস্যা থাকলে তার আলাদা চিকিৎসা। দরকারে ইনহেলার, নেবুলাইজার বা দরকারে অক্সিজেন দিতে হতে পারে। 
-অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া গুরুতর স্তরে গেলে রোগীকে সি-প্যাপ বা বাই প্যাপে শুতে হবে ঘুমের পুরো সময়টা ( আদর্শ সময় ৮ ঘণ্টা )। এতে করে কৃত্রিম উপায়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছে যাবে। যাঁরা স্থূলকায় মানুষ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী অথবা যদি মদ বা ধূমপানের অভ্যেস থাকে, তাঁদের মধ্যে এই রোগের আশঙ্কা বেশি। 
- হার্টের সমস্যায় তা নির্ধারণ করে চিকিৎসা করতে হবে, প্রয়োজনে অপারেশনও করতে হতে পারে।