নীরব মহামারী। লিভারের অসুখের বাড়বাড়ন্তকে এমনটা বলছেন চিকিৎসকদের একাংশ। গত কয়েক বছরের ফ্যাটি লিভার , লিভার সিরোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তা মোটেই স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না চিকিৎসকরা। এতদিন লিভারের বেশ কিছু অসুখ মূলত মদ্যপায়ীদের মধ্যেই বেশি দেখা যেত। কিন্তু ইদানীং মদ খান না যাঁরা , তাঁরাও লিভারের অসুখে এমন ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে , যা সত্যিই ভাবাচ্ছে চিকিৎসক ও গবেষকদের। তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক, যাঁরা মদ্যপান করেন না, তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন লিভারের অসুখে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে, ভারতে প্রতি বছর ২,৬৮,৫৮০ জন লিভার রোগে মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ প্রায় ৩ লাখ ছুঁইছুঁই।  হু হু করে বাড়ছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে (NAFLD) আক্রান্তের সংখ্যা। 

ফ্যাটি লিভার এমন এক অসুখ, যেখানে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে হতে বিরাট এক স্তর তৈরি করে। যার ফলে ব্যাহত হয় লিভারের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজকে এখন নন মেটাবলিক ডিসফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্টিটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD) বলা হচ্ছে। কিন্তু কেন এমন ভাবে লিভারের অসুখ বাড়ছে ? চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা খাদ্যাভ্যাসের ভুল ও জীবনযাত্রার জন্যই এই সমস্যা বাড়ছে।       

জাঙ্ক ফুড এবং চিনিযুক্ত পানীয়, অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাভুজি, কেক-পেস্ট্রি এবং কোলা জাতীয় পানীয়, গ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লিভার। এছাড়া ফ্যাটি লিভারের জন্য দায়ী মানুষের বসে-বসে কাজ। কায়িক পরিশ্রম না-করা। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা যতটা ক্যালরি ইনটেক করেন, সেই অনুপাতে ক্যালরি ক্ষয় করতে পারেন না। এটিই স্থূলতার কারণ। আর এরই পরোক্ষ প্রভাবে ঝুঁকি বাড়ে, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা।  এছাড়া নানা কারণে মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব তো আছেই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা কিন্তু লিভারের অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। 

তবে চিকিৎসকরা বলছেন জীবনযাত্রার কারণে লিভারের ক্ষতি প্রায়শই প্রাথমিক পর্যায়ে আটকানো যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ফলমূল, শাকসবজি, হোল গ্রেন খেতে হবে বেশি করে। চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ সীমিত করা আবশ্যক। এছাড়াও কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট কসরত করতে হবে। এছাড়া ৭-৮ ঘন্টা ভাল ঘুমও দরকার।