লো সোডিয়ামে বড় বিপদ
Dyselectrolytemia বা সহজ কথায় সোডিয়াম পটাসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা। এই সমস্যায় হয়ত বহু মানুষই বয়স কালে ভোগেন। সমস্যাটা খুব 'কমন' হলেও খুব সাধারণ নয়। ফল মারাত্মক হতে পারে ঠিক সময় বিষয়টিতে নজর না দিলে। এর থেকেও খারাপ ফলশ্রুতি হতে পারে, যদি সমস্যাটা নিজে নিজে সারানোর চেষ্টা করেন কেউ!অনেক সময়ই সোডিয়াম পটাসিয়ামের ভারসাম্যে সমস্যা হলে নিজে নিজেই দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নেন। কেউ আবার টোটকা ব্যবহার করেন। কেউ আবার আত্মীয় স্বজনের থেকে শুনেই ওষুধ খেয়ে নেন। এই প্রবণতা কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন চিকিৎসক সুমন মিত্র ( Senior Consultant Internal Medicine at Code Wellness, CMRI Hospital Kolkata)।
চিকিৎসক বললেন, অনেক রোগীই কিছু ওষুধের নাম জেনে যান, আত্মীয় স্বজন বা ইন্টারনেটের সৌজন্যে । তারা সেই ওষুধ ব্যবহারও করে ফেলেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন ডাক্তারবাবু। বললেন, তাঁর এক রোগী সম্প্রতি তাঁর স্বামীর সোডিয়াম ফল করেছে, এই আশঙ্কাতেই তিনি এক প্রচলিত ওষুধ তাঁকে খাইয়ে দেন। Tolvaptan গ্রুপের সেই ওষুধ, যে নাম ইন্টারনেট সার্চ করলেই পাওয়া যায়, তা তিনি খাইয়ে দেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই। কারও যদি সোডিয়াম লেভেল হঠাৎ কমে যায় কিংবা অনেকদিন ধরেই লো-সোডিয়াম থাকে, তাহলে তাঁর চিকিৎসা হওয়া দরকার চিকিৎসকের হাতেই, নিজে নিজে নয়। বিনা পরামর্শে এই সব ওষুধ খাওয়ার পরিণাম মারাত্মক হতে পারে। এটা একেবারেই মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি, এটা ঘরোয়া চিকিৎসা বা ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ খেয়ে সারে না।
চিকিৎসক সুমন মিত্র জানালেন, রক্তে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম তারতম্যের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণাম হতে পারে। নানারকম অসঙ্গতি বা অসুবিধে দেখা দিতে পারে সোডিয়াম লেভেল কমে গলে। কারও কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ করে সোডিয়াম লেভেল পড়ে যেতে পারে, কারও ক্ষেত্রে হয়ত সমস্যাটা চলমান। দেখা যায়, কারও হয়ত বেশ কিছুদিন ধরেই সোডিয়াম লেভেল স্বাভাবিকের থেকে অনেক কমে গিয়েছে, আর তার ফলে দেখা গিয়েছে নানাবিধ অসঙ্গতি। কারও কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ করে সোডিয়াম লেভেল পড়ে গেলে. একজন মানুষের স্বাভাবিক ব্যবহার, প্রতিক্রিয়ায় বদল, অতি দুর্বল হয়ে পড়া, কার্যত নেতিয়ে পড়া, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনির মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে সোডিয়াম লো থাকলে, তিনিও অসম্ভব দুর্বল বোধ করেন। গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথা হতে পারে। ব্যবহারে অসঙ্গতি আসতে পারে। কোনও সময়ই তাঁকে দেখে সতেজ লাগবে না। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে ব্রেন, হার্ট, কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যা একমাত্র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে বা হাসপাতালে থেকে তবেই সুস্থ হওয়া সম্ভব।
অনেকেই মনে করেন, লো-সোডিয়ামের চিকিৎসা নুন খাওয়া বাড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু না। একজনের সোডিয়াম ফল করলে যদি তাঁকে বেশি নুন খাইয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁর ব্লাড প্রেসার বেড়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া কিন্তু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। হয়ত, জল বা ফ্লুইড ইনটেক নিয়ন্ত্রণ করলেও সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। এটা অনেকেরই জানা নেই। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করলেও অনেক সময় লো-সোডিয়ামের সমস্যা মেটানো যায়। কিন্তু এগুলো সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়। তাই লো-সোডিয়ামের সমস্যা আন্দাজ করে Tolvaptan গোত্রর ওষুধ খেলে বিপদ অপরিসীম হতে পারে। বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্র ও উপসর্গ থাকলে, তবে এই ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা সাধারণ মানুষের বোঝার কথাও নয়। চিকিৎসকরাও এমন ওষুধ প্রয়োগের আগে যথেষ্ট বিবেচনা, পর্যালোচনা করেন। তারপরই এটা প্রয়োগ করা হয়, হঠাৎ করে নয়। কারণ, এমন ওষুধের ব্যবহার হিতে বিপরীতও ঘটাতে পারে। বরং সোডিয়াম ফল করার লক্ষণগুলি দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। যেখানেই থাকুন না কেন, নিকটবর্তী হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যায়। তবে এই সমস্যার সমাধান বাড়িতে করা সম্ভব নয়।