বড়া: হুগলির সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত বড়া গ্রাম| আর তার প্রাণকেন্দ্র তেলিয়াড়মোড়ের পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থিত রয়েছে প্রাচীন শিবমন্দির| মন্দিরের মূল আকর্ষণ এর ভেতরে অধিষ্ঠিত শিবমূর্তি| কেন? এখানকার শিবের হাতে রয়েছে বীণা! বাগদেবী সরস্বতীর হাতে দেখা যায় বীণা| তাহলে শিবের হাতে এই বাদ্যযন্ত্র এল কীভাবে?
শিবের হাতে এই বীণাকে বলা হয় রুদ্রবীণা| পুরাণ মতে, দেবী পার্বতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে এই বীণা তৈরি করেছিলেন স্বয়ং শঙ্কর| আবার কেউ কেউ বলে থাকেন, রুদ্রবীণা আসলে রাক্ষসরাজ রাবণের তৈরি| রাবণ ছিল শিবের উপাসক| আরাধ্য দেবতাকে খুশি করতে রুদ্রবীণা তৈরি করেছিল লঙ্কেশ্বর|
হাতে রুদ্রবীণা সহ শিবের মূর্তি বড় একটা দেখা যায় না| তাই বড়া তেলিয়াড়মোড়ের এই মূর্তি বেশ বিরল|
কথিত আছে, প্রায় একশো বছর আগে বড়া পুলিশ ফাঁড়ির এক আধিকারিককে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন ভগবান শিব| তার পরদিনই সংলগ্ন তেলিয়াড়পুকুরে জেলেদের জালে উঠে এসেছিল এই শিবমূর্তি| তারপরই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়|
এলাকার এক সময়কার জমিদার নিবারণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া জমিতে তৈরি হয়েছিল ছোট একটি মন্দির| সেই মন্দিরেই প্রতিষ্ঠিত হয় শিবমূর্তি| নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় বড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব নিয়ে আসেন সুক মহম্মদ| তাঁর উদ্যোগেই নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়| মুসলিম পুলিশ অফিসারের শিবমন্দির সংস্কারের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হন এলাকার সমস্ত মানুষ| সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক দৃষ্টান্ত তৈরি হয় বড়ায়|
পরবর্তীকালে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে সিঙ্গুর| এখনও রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চর্চিত এলাকা| তবে শিবরাত্রিতে প্রত্যেক বছর সমস্ত রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে উৎসবে সামিল হন সমস্ত মানুষ| প্রচুর মানুষের সমাগম হয় বড়া তেলিয়াড়মোড়ের শিবমন্দিরে| এ বছরও ব্যতিক্রম নয়| শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুজোর পাশাপাশি আয়োজিত হয়েছে নানা অনুষ্ঠান|