নয়াদিল্লি: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে মানসিক এবং শারীরিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। যা যোগাসনের হাত ধরে হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগকে সামলাতে সাহায্য করে যোগাসন। পাশাপাশি পেশীর শক্তি, দেহের গঠন, শ্বাস এবং শক্তি সহ প্রাণশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। যোগাসন করা দেখে মনে হতে পারে এটা শুধুই স্ট্রেচিং। কিন্তু অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গীর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যোগ ব্যায়াম।
বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা আরোরা বহু বছর ধরে যোগাসন করেন। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের আগে বেশ কিছু প্রাথমিক যোগাসন শেয়ার করেছেন তিনি। যা দিনের শুরুতে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে প্রেরণা জোগাতে সাহায্য করবে। তিনি জানাচ্ছেন, ৩ থেকে ৫ বার শ্বাস প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই প্রতিটি পোজে যোগ ব্যায়াম করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে সপ্তাহে দুদিন করা যেতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত করার কথা বলছেন অভিনেত্রী।
মালাইকা আরোরা বলেন, নিজের সব চিন্তাভাবনাকে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। বাইরে ঝড় বয়ে গেলও আমার মধ্যে শান্তি থাকবে। যোগাসন প্রতিদিন করার মাধ্যমেই এই শান্তি অনুভব করতে পেরেছি আমি। যোগাসনের জন্যই জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাতে বদলে গিয়েছে জীবনধারা।
যোগব্যায়াম শুরু করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে বলেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে-
১. শুরুর দিন থেকেই শ্বাস প্রক্রিয়ার উপর নজর দিতে হবে।
২. সহজেই যে যোগাসন পারবেন সেটাই করুন। কোনও প্রতিযোগিতা নেই এখানে। নিজের শরীরের ক্ষমতার উপর নজর দিন। শরীরের অবস্থা বুঝে গতি বাড়ান।
৩. প্রাথমিক পর্যায়ে শক্তির অভাব হলে নিজেকে নিরুত্সাহিত করবেন না। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে।
৪.মনে রাখতে হবে প্রত্যেকের শরীরের গঠন আলাদা। শক্তি, অধ্যাবসায় এই সব কিছুর পার্থক্য থাকবে অন্যের সঙ্গে। জীবনধারা এবং লক্ষ্যের তারতম্যও হতে পারে।
৫.সকালে খালি পেটে থাকাকালীন যোগব্যায়াম করার আদর্শ সময়।
১. তাদসানা (মাউন্টেন পোজ)-
এই যোগাসনের জন্য পর্বতের মতো দাঁড়াতে হবে। একাধিক পেশির শক্তি প্রয়োজন এই যোগাসনের জন্য। এতে লক্ষ্য এবং একাগ্রতা স্থির হয়।
দুই পা সামান্য ফাঁকা করে দাঁড়াতে হবে। পাশে রাখতে হবে হাত।
ধীরে ধীরে পা উঁচু করতে হবে। দুই হাত রাখতে হবে মাথার উপর।
শরীরে ভার রাখতে হবে পায়ের পাতার উপর।
প্রশ্বাসের সময় ধরকে সম্প্রসারিত করুন।
মনে রাখতে হবে কান, কাঁধ, অ্যাঙ্কেল যেন এক লাইনে থাকে।
পাশাপাশি হাতকে প্রয়োজনে স্ট্রেচ করা যেতে পারে। শ্বাস প্রক্রিয়া যেন আরাম দায়ক হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
২. বৃক্ষসন (ট্রি পোজ)-
পা এবং শরীরের পিছনের অংশের ব্যালেন্স এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ডান পাকে বা পায়ের থাইয়ের উপর রাখতে হবে। সমানভাবে রাখতে হবে। অন্য পা-ও থাকবে সমান। এভাবে নিজের ব্যালেন্স বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্বাস নেওয়ার সময় দুই হাত একসঙ্গে মাথার উপরে রাখতে হবে। মেরুদণ্ড যেন সোজা থাকে সেদিকেও দেখতে হবে।
ধীরে ধীরে নিশ্বাস ত্যাগ করতে হবে। ডান পা ধীরে ধীরে মাটিতে রাখতে হবে।
একইভাবে অন্য পা করতে হবে।
৩. আধো মুখো সওনাসানা (ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ পোজ)-
বুকের পেশিকে সম্প্রসারিত করে। মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে।
হিলের উপর বসতে হবে প্রথমে। ধীরে ধীরে হাতকে সামনে রাখতে হবে। মাথা নিচু করতে হবে।
হাতের উপর জোর দিয়ে, পা সোজা করে, ধীরে ধীরে নিতম্ব
কে উঁচু করতে হবে।কোমরকে শক্ত করতে হবে।
৪. ত্রিকোণাসন (ট্রাইঅ্যাঙ্গেল পোজ)
প্রথমে দুই পা ফাঁকা করতে হবে। দুই পায়ের অবস্থান হবে ৯০ ডিগ্রি।
দুই পায়ের পাতার উপর রাখতে হবে শরীরের ভার। ডান হাত নিচু করে রাখতে হবে পায়ের পাতার উপর। অন্যদিকে বাঁ থাকবে মাথার উপরে।
কোমর রাখতে হবে সোজা। শরীর যেন কোনও এক দিকে ঝোঁকে। কখনই যেন পিছনে না চলে যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গভীর শ্বাস নিতে হবে।
অন্যদিকে একইভাবে এই যোগাসন করতে হবে।
৫. কুর্সিয়াসন (চেয়ার পোজ)-
এই যোগাসন পা এবং হাতের পেশী শক্তি করে। আপনার ইচ্ছাশক্তি তৈরি করে। শরীর এবং মনের উপর এক জোরালো প্রভাব ফেলে।
দুই পা সামান্য ফাঁকা করতে হবে।
দুই হাতকে স্ট্রেচ করতে হবে। কিন্তু কখনই যেন কনুই না ঝোঁকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্বাস নিয়ে, হাঁটু ধীরে ধীরে নিচু করতে হবে। শরীরের নিচের অংশের অবস্থান এমন হবে যেন আপনি চেয়ারে বসে আছেন।
দুই হাতকে সমান্তরালভাবে মেঝেতে রাখতে হবে। শরীরের পিছনের অংশ থাকবে সোজা। গভীর প্রশ্বাস নিতে হবে। হাঁটুর অবস্থান এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা কখনই পায়ের আঙুলের থেকে এগিয়ে না থাকে।