করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে তার ধাক্কা এখনও সামলে ওঠা যায়নি। বিশেষ করে, শিশুদের হাম ও রুবেলার ভ্যাকসিনেশনেশনের প্রক্রিয়া অনেকটাই বাধা পেয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সংস্থা ও মার্কিন সংস্থা Centers for Disease Control and Prevention বা CDC-র তরফে দাবি করা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি শিশু ভ্যাকসিনেশনেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 


মুম্বইতে  সম্প্রতি মিসলস আউটব্রেকে বহু শিশু আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটা অনেক কম ছিল, ১৫৩ মোটে। এবার সেখানে ৫০০ ছাড়িয়েছে আক্রান্তর সংখ্যা। এর পিছনে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। আলোচনা করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার। 

কেন এই আউটব্রেক 



  • measles আউটব্রেক এর প্রথম কারণ হচ্ছে , ভ্যাকসিনেশন ঠিকমত না হওয়া । ২০২০ সালে করোনার দাপটে যখন চারিদিকে কড়া কোভিড রুল ও লকডাউন, তখন সকলের ফোকাস গেল ঘুরে।  বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু ভ্যাক্সিনেশন ঠিকঠাক মতন দেওয়া হয়নি। মানুষও বের হতে পারেননি বাড়ি থেকে।

  • সারা বিশ্বে প্রায় দু'কোটি কুড়ি লক্ষ শিশু এই ভ্যাকসিনেশন মিস করেছে । এই মিজলস ভ্যাকসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের এখানে সরকারি হাসপাতাল ৯ মাস বয়সে একবার দেওয়া হয় এই টিকা। তারপর তার আরেকটা বুস্টার ডোজ দেওয়া হয় ১৬ মাস বয়সে । সেই অনুযায়ী আমাদের কিন্তু তিনটে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় মিজলসের। আরেকটি ৫ বছরে দেওয়া হয়। এই ভ্যাকসিন মিস হলে  কিন্তু মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে ।

  • দেখা গিয়েছে যে ২৬ টি দেশে ভ্যাক্সিনেশন ব‍্যাহত  হওয়ার ফলে এই মিজলস আউটব্রেক হয়েছে । কোভিডের কারণে প্রত্যেকটা জায়গায় কিন্তু এই পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। লকডাউন তো বটেই, তা ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন করোনা সামলাতে ও পরবর্তীতে কোভিড টিকা দিতে। 

  • প্রতি বছর এই  ভ্যাকসিনের একটা টার্গেট থাকে। সেটকে কিন্তু পূরণ করা যায়নি। ২০২০ সালে ভ্যাকসিন মিস হওয়ার কারণে পরবর্তী বছরগুলিতে বেশি সংক্রমণ হয়েছে। 

  • ভারতের মতো জনবহুল দেশে যদি কোনও ইনফেকশন হয় তা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না।  এই রোগ কিন্তু মারাত্মক ছোঁয়াচে। 


Measles ভাইরাস হল RNA ভাইরাস, যা থেকে সংক্রমণ হয়।  এর উপসর্গ আমরা দেখতে পাই সংক্রমণ হওয়ার ১০ থেকে ১২ দিন বাদে এবং এই উপসর্গগুলো থাকে সাধারণত ৭-১০ দিন  পর্যন্ত। 

কী কী উপসর্গ



  •  জ্বর সর্দি-কাশি

  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া

  • মুখের ভেতরে এক ধরনের হোয়াইট স্পট দেখা যাওয়া। 

  •  সারা গায়ে একটা গুড়ি গুড়ি  লাল রঙের  ব়্যাশ বের হয়। 

  • সাধারণত প্রথমে কানের পেছনে ব়্যাশ বের হয়।  তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

  • তিন থেকে চার দিনের মাথায় র়্যাশ বের হয়। তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

  • জ্বর কমে গেলেও দিন দশের র়্যাশ থাকে।

  • এরপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়

    কী কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে

  • সাধারণভাবে ডায়রিয়া, মিডল ইয়ার ইনফেকশন, নিউমোনিয়া এগুলো দেখা যেতে পারে। এছাড়া বেশি জ্বর হলে কোনও কোনও শিশুদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক সময় আমরা ব্রেনের ইনফ্লামেশন অর্থাৎ এনকেফেলাইটিসের মতো লক্ষণও দেখা যায়। 


Measles খুব ছোঁয়াচে। বাতাসে ছড়ায়।  মানুষের কাশি সর্দি হাঁচি এবং  নাক-মুখ দিয়ে যে  সিক্রিয়েশন বের হয়, তার মারফৎ  আছে সেগুলো দিয়ে কিন্তু ছড়াতে পারে। 


যাদের বয়স কম তাদের বেশি হয় মিজলস। বড়দের কিন্তু এটা অনেক কম দেখা যায় ।  এই অসুখ থেকে সুরক্ষা পেতে খুব সতর্ক থাকতে হবে। টিকা নেওয়ারই এর সুরক্ষাবর্ম।   কিন্তু মনে রাখতে হবে অ্যান্টিবায়োটিকে এই অসুখ সারার নয়।  সাধারণভাবে জ্বরের জন্য দেওয়া হয় প্যারাসিটামল এবং ওআরএস দেওয়া হয়।  যদি কারো মারাত্মক জটিলতা দেখা যায় সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করতে হবে।