কলকাতা : সন্তানধারণ কখন ঝুঁকির ? কাদের ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া বা গর্ভপাতের আশঙ্কা বেশি? কোন বয়সের পর সন্তানধারণ করলে তা মা ও শিশুর পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ? এই নিয়ে মহিলাদের মনে নানা প্রশ্ন। এবিপি লাইভের সঙ্গে আলোচনা করলেন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুনীপা চট্টোপাধ্যায় ( Consultant Obstetrician & Gynecologist , Techno India DAMA Hospital )
গর্ভপাতের ঝুঁকি কোন বয়সে বেশি ?
অল্প বয়স্ক মহিলাদের তুলনায় ৩৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি।
- ৩৫ বছর বয়সে, মহিলারা গর্ভধারণ করলে প্রায় ২০ শতাংশ ঝুঁকি থেকে যায় গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার।
- বয়স যদি ৪০ ছুঁয়ে ফেলে, তবে গর্ভপাতের ঝুঁকি নিঃসন্দেহে বেড়ে যায়।
- বয়সের কাঁটা ৪৫ স্পর্শ করলে ঝুঁকি বেড়ে হয় ৮০ শতাংশ ।
অনেক মহিলাই গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। তার সঙ্গত কারণও রয়েছে। পড়াশোনা, কেরিয়ার গঠন সহ নানা কারণেই এখন মেয়েরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ৩০ এ পৌঁছে। কিংবা মাতৃত্বের সিদ্ধান্ত নেন ৩০ এর ঘর পেরিয়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা আরও দেরি হতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে গর্ভধারণ করার আগে, শরীরের খুঁটিনাটি পরীক্ষা একজন স্ত্রীরোগবিশ্ষজ্ঞের পরামর্শ অনুসারে করতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও করা দরকার।
পূর্ববর্তী গর্ভপাতের ঘটনা : যে মহিলাদের পরের পর দুই বা তার বেশি বার গর্ভপাত হয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় সতর্ক হতে হবে। কেন বারবার গর্ভপাত হচ্ছে জানতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা করিয়ে নিজের শরীরকে নতুন সন্তানকে লালন করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
ডায়াবেটিস : যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিপদ বেশি থাকে। গর্ভধারণ করার আগে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেকের আবার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস দেখা যায়, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে বদলাতে হবে ডায়েট। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করে নিতে হবে ডায়েটচার্ট। তবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া যাবে না।
জরায়ুর সমস্যা : যাঁদের জরায়ুতে সমস্যা থাকে, তাঁদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি।
উচ্চ রক্তচাপ : গর্ভধারণ করার সময়ই দেখে নিতে হবে রক্তচাপ ঠিক আছে কি না। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ধূমপান : ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। যে মহিলারা গর্ভাবস্থায় ধূমপান করেন তাঁরা গর্ভপাত তো বটেই, হবু সন্তানেরও বিপদ ডেকে আনেন। প্যাসিভ স্মোকিংও এড়িয়ে চলতে হবে। যৌন রোগ বা এসটিডি থাকলে আগে সারিয়ে নিন।
পরীক্ষা করাতে হবে থাইরয়েড বা মৃগির সমস্যা আছে কি না। আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কী কী খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন -
গর্ভবতী অবস্থায় আজকাল খাওয়াদাওয়ায় খুব বেশি বিধিনিষেধ থাকে না। তবে খাবার এড়িয়ে চললে গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
- ক্যাফাইন গ্রহণ সীমিত করুন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দিনে অতিরিক্তি কফি পান করা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
- সফট ড্রিঙ্ক বা ক্যানড ড্রিঙ্ক না খাওয়াই ভাল।
- মিষ্টি, ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার কম খেতে হবে ।
- জাঙ্ক ফুড যেমন, বার্গার, হট ডগ সসেজ এড়িয়ে চলুন।
- প্যাকেটবন্দি মাংস মাছ ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রেঁধে তবেই খাবেন।
- আনপাস্তুরাইজড দুধ খাবেন না।
- বিভিন্ন রঙের শাক-সব্জি খান প্রচুর পরিমাণে। তবে তা ভালভাবে গরমজলে ধুয়ে তবেই খান। নইলে মাটিতে থাকা কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে ঝামেলা বাঁধাতে পারে।
- অনেকে বলে থাকেন, আনারসের মধ্যে থাকে ব্রোমেলিন থাকে যা সার্ভিক্সের সংকোচনে সাহায্য করে, ফলে সময়ের আগেই অনুভূত হয় গর্ভযন্ত্রণা। এই দাবি পুরোপুরি ঠিক নয়। আমরা আনারসের যে অংশটি খাই, তাতে একটা গোটা আনারস খেয়ে ফেললেই যে সঙ্গে সঙ্গে গর্ভযন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে, এমনটা এক্বেবারেই নয়।
গর্ভপাতের লক্ষণ -
গর্ভপাতের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল যোনিপথে রক্তপাত। হালকা স্পটিং বা বাদামী স্রাব থেকে বেশি রক্তপাত গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে। রক্তপাত এক-আধদিন হতে পারে আবার কয়েক দিন ধরেও হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের (প্রথম ৩ মাস) সময় হালকা যোনি রক্তপাত তুলনামূলকভাবে কমন এবং এর মানে এই নয় যে গর্ভপাত হয়ে গেল। তবে রক্তপাত স্থায়ী হলে ও বেশি রক্তপাত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
গর্ভপাতের অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে :
- আপনার তল-পেটে ক্র্যাম্পিং এবং ব্যথা বারবার হলে ডাক্তারের কাছে যান।
- যোনি থেকে তরল স্রাবে দুর্গন্ধ হলেও চিকিৎসকের কাছে যান।
- যোনি থেকে যে স্রাব বের হয়, তাতে লাল ভাব দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।