কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষত এখনও সারেনি। করোনার কামড়ের যন্ত্রণা এখনও ভোলা যায়নি। সবে সবেই কোভিড ফের ধাক্কা দিয়েছে। তবে এবার উল্লেখযোগ্য দাপট দেখাতে পারেনি ভাইরাস। তবে এরই মধ্যে চিন থেকে আসছে ভয়ানক খবর। চিনা বিজ্ঞানীরা ২০টি নতুন ভাইরাস শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু জিনগতভাবে নিপা এবং হেন্দ্রার মতো !  বিজ্ঞানীদের ধারণা , এসব ভাইরাস ছড়ালে করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে উঠবে। 

সূত্রের খবর, এই ভাইরাসগুলির উৎসও  বাদুড়ই ।  তবে এগুলির সংক্রমণ হতে পারে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও। তাই কারও ক্ষেত্রেই ঝুঁকিটা কম নয়। সম্প্রতি PLOS Pathogens-এ প্রকাশিত কয়েকজন চিনা বিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ,  ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চিনের ইউনান প্রদেশের পাঁচটি স্থান থেকে ১৪২টি বাদুড়ের কিডনি টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেইগুলি বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফলে উঠে আসে চমকপ্রদ তথ্য । 

জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ে ২২টি  প্রজাতি সামনে এসেছে।  এর মধ্যে আবার ২০টিই নাকি বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন।  আগে বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল এই ভাইরাসগুলি। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল, নতুন শনাক্ত হওয়া দুটি ভাইরাস হেনিপাভাইরাস ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত হেন্দ্রা এবং নিপা ! সকলেরই ধারণা রয়েছে, হেন্দ্রা এবং নিপার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে।  আরও মারাত্মক বিষয় হল, এই ভাইরাসগুলোর প্রতিরোধে নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা টিকা নেই। 

বিজ্ঞানীরা অনেকেই বলছেন, এই ভাইরাসগুলো  ২০১৯ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।  কোভিড-১৯ এ চিনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯। সেই ভাইরাসের দাপটে ভেঙে গিয়েছিল সারা বিশ্বের অর্থনীতি, সমাজ, ব্যবসাবাণিজ্য। কোভিডও বাদুড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিপা ভাইরাসও।  কোভিড অতিমারী বিশ্বব্যাপী ৭০ লক্ষেরও বেশি  প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। পঙ্গু করে দিয়েছিল অর্থনীতিকে। দৈনন্দিন জীবনের ছবিটাই বদলে দিয়েছিল একটা অসুখ। 

এতগুলি ভয়ঙ্কর ভাইরাসকে সামনে থেকে দেখে অতীত মনে পড়ে যাচ্ছে গবেষকদের। যাতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।  বাদুড় দীর্ঘদিন ধরেই জলাতঙ্ক, সার্স এবং ইবোলা সহ একাধিক রোগজীবাণুর বাহক হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে এই ভাইরাসগুলি বাদুড়ের মূত্রের মাধ্যমে মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। এই সব ভাইরাসের প্রভাবে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা,  মস্তিষ্কের প্রদাহ স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে। যদিও এই নতুন ভাইরাসগুলি থেকে এখনও কোনও মহামারী দেখা দেয়নি। তবু সাবধানের মার নেই, মনে করছেন গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আগামীতে যে কোনও ভাইরাসের দাপট ঠেকাতে  স্বাস্থ্য অবকাঠামো তৈরি রাখা দরকার।