সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা । জ্বরে গা পুড়ে যায়। গা ভরা ফোস্কা। গাঁটে গাঁটে  যন্ত্রণা। সেই সঙ্গে গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি তো আছেই। ধীরে ধীরে সারা গা গুটি গুটি ফোস্কায় ভরে যাওয়া। ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়া। হু হু করে ছড়াচ্ছে এমপক্স। ২০২৪ সাল থেকেই চোখ রাঙাচ্ছে এই রোগ। মাস আটেক আগে আফ্রিকার উগান্ডায় এক সঙ্গে কয়েক শো মানুষ আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল পশুর থেকে মানুষের এই সংক্রমণ হয়। কিন্তু না। মানুষের থেকে মানুষের শরীরে ছেয়ে যেতে সময় নিচ্ছে না এম পক্স। কয়েক মাসের মধ্যে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার। 


সঙ্কটে আফ্রিকার উগান্ডা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক মঙ্গলবার জানিয়েছে, আট মাস আগে পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডায় প্রাদুর্ভাশুরু হয়। তখনই গবেষকরা নিশ্চিত করেন, এই অসুখ এমপক্স। বেশ সংক্রামক এই অসুখও চিকিৎসা না হলে বিপজ্জনকও। 


উগান্ডায় স্বীকৃত ল্যাবরেটরি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সে দেশে  এমপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৩৪২ এ পৌঁছেছে। মারা গিয়েছেন ৩১ জন।  গত ২৪ ঘন্টায় মোট ২৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেই, WHO mpox কে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে জানায়, নিশ্চিন্ত থাকার সময় নয়, কারণ রোগটি দেশ ছাড়িয়ে অন্যদেশেও ছড়াতে পারে।  


এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মূলত রাজধানী কাম্পালায় । মন্ত্রক জানিয়েছে, হু-এর সাহায্য নিয়ে ভাইরাসের বিস্তার আটকাতে যা করার প্রশাসন করছে। পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থারও। WHO-এর মতে, mpox একটি সংক্রামক রোগ । গুটি বসন্ত শ্রেণির এই সংক্রমণে যে ফুসকুড়িগুলি সারা গায়ে ছেয়ে যায়, সেগুলো প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এছাড়া লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায়। জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা, পিঠে ব্যথা তো আছেই। তবে আশার কথা একটাই এ রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা কম। 


এমপক্স এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে, সংক্রমণ অবশ্যম্ভাবী। এছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস, থুতু থেকেও ছড়ায়।  আক্রান্তের কাছাকাছি  এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়া থেকে সংক্রমিত হয়ে পড়েন মানুষ। 


এমপক্সের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো সাধারণত  সংক্রমণের এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায়।  তবে ২১ দিন পরেও শুরু হওয়া সম্ভব।  লক্ষণগুলি সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয় । তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। 


ফ্রিকার বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি  বাড়ূবাড়ন্ত দেখা যায।  এমপক্সে এসব অঞ্চলে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। মারাও যান বহু।  বিশেষ করে ১৫ বছরের নিচের বয়সী শিশু–কিশোরেরা এতে বেশি আক্রান্ত হন বলে জানা গিয়েছে।  


২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের মৃদু ক্লেড ২ ধরন প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ছিল এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশও।  টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ওই সংক্রমণ।