শিলং: মানোলো মার্কেজ (Manolo Marquez) ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি জাতীয় দল। জয়ের খরা অবশ্য তার অনেক আগে থেকেই চলছে। বুধবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে মার্কেজের তত্ত্বাবধানে পঞ্চম ম্যাচ খেলতে চলেছে ভারত। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বের ১৬২ নম্বর মলদ্বীপ (IND vs MDV)। এই ম্যাচে তারা জয়ে ফিরতে পারবে কি না, সেটাই দেখার।
যদিও তাদের আসল লক্ষ্য ২৫ মার্চ এই স্টেডিয়ামেই এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের (AFC Asian Cup qualification) ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানো। তার আগে এই ম্যাচেই প্রস্তুতি সারবে ভারতীয় দল। সেই প্রস্তুতি ঠিকঠাক হলে তবে আসল খেলায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামতে পারবে নীল-বাহিনী। তাই বুধবার ভাল খেলে জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়াই লক্ষ্য ভারতীয় দলের।
তাঁর দল যে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই বুধবার মাঠে নামবে, তা মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন কোচ মার্কেজ। ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে মনস্তাত্বিক ভাবে সামান্য হলেও এগিয়ে থাকার কথা ভারতের। ঘরের মাঠের এই সুবিধা তারা আদায় করতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
মঙ্গলবার মার্কেজ সাংবাদিকদের বলেন, “এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের প্রস্তুতির জন্য এই প্রীতি ম্যাচ। আমরা জিততেই চাই। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাছাই পর্বের ম্যাচে নামার আগে দলকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে আসাই আমাদের লক্ষ্য।”
ভারতের জয়ের খরা
সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরুর আগে ঘরের মাঠে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে সিরিয়ার কাছে তিন গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায় মার্কেজের ভারত। তার আগে মরিশাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। অক্টোবরে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে তারা। নভেম্বরে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধেও ১-১ ড্র হয়। ২০২৩-এর নভেম্বরে কুয়েতের বিরুদ্ধে জয়ের পর থেকে এক ডজন ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি ভারতীয় ফুটবল দল। বুধবার সেই ১৬ মাসের খরা কাটিয়ে জয়ে ফেরার সুযোগ ভারতের সামনে।
এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ভারতীয় শিবিরে যেমন ভাল খবর আছে, তেমনই খারাপ খবরও আছে। খারাপ খবর হল, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের চোট। ক্লাবের ম্যাচে চোট পাওয়ার ফলে তিনি শিলংয়ে জাতীয় শিবিরে যোগ দিতেই পারেননি। আর ভাল খবর হল, সুনীল ছেত্রীর ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া সত্ত্বেও মার্কেজের অনুরোধে সেই সিদ্ধান্ত বদলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে এসেছেন তিনি।
সুনীলের প্রত্যাবর্তন
আসন্ন দুই ম্যাচে ভারতকে গোল এনে দেওয়ার দায়িত্ব সুনীলেরই। তাই আইএসএলে ছ’গোল করা ছাঙতে খেলতে না পারলেও ১২ গোলের মালিকের দিকে তাকিয়ে থাকবে ফুটবল-পাগল শিলং ও সারা দেশ। গত পাঁচ ম্যাচে মাত্র তিন গোল করা ভারতীয় দলের গোল-খরা কাটাতে সুনীলের চেয়ে ভাল বাছাই আর নেই বলেই মনে করেন মার্কেজ।
তিনি বলেন, “এ মরশুমে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে সুনীলই। বয়স ২০ বা ৪০ হোক, কোনও খেলোয়াড় যদি ভাল শেপে থাকে, তা হলে তার দলে থাকা উচিত। জাতীয় দল তো আর খেলোয়াড়দের তৈরি করার জায়গা নয়। তৈরি খেলোয়াড়রাই জাতীয় দলে থাকে। আমাদের ম্যাচ জিততে হলে শেপে থাকা খেলোয়াড়দের দলে রাখতে হবে।”
সুনীলের সঙ্গে মনবীর সিং, ইরফান ইয়াডওয়াড, ফারুখ চৌধুরিরা রয়েছেন ২৬ জনের দলে। আইএসএলে ভারতীয় গোলদাতাদের মধ্যে সুনীল ছাড়াও শুভাশিস বোস, ব্রাইসন ফার্নান্ডেজরাও রয়েছেন এই দলে। তাঁদের কী ভাবে ব্যবহার করবেন মার্কেজ, সেটাই দেখার।
‘১৭ জনকে মাঠে নামাতে পারি’
ক্লাব দলে মনবীর ও লিস্টন কোলাসো যে ভাবে দুই উইংয়ে খেলেন, সে ভাবে তাদের খেলালে দু’জনেই কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন এবং সুনীলকে গোলের বল বাড়াতে পারেন। আক্রমণে দুই স্ট্রাইকার হিসেবে যদি সুনীল ও ব্রাইসনকে রাখা হয়, তাও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
সুনীলকে প্রথম থেকে নাও খেলাতে পারেন মার্কেজ। ব্রাইসন ও ইরফানকে শুরু থেকে খেলিয়ে তাঁকে পরে নামাতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই নিয়ে মার্কেজ বলেন, “সুনীল কিছুক্ষণ তো খেলবেই। তবে শুরু থেকে খেলবে না পরে নামবে, তা জানি না। আমরা এই ম্যাচে ছ’জন পরিবর্ত খেলোয়াড় নামাতে পারি। অর্থাৎ, মোট ১৭ জনকে মাঠে নামাতে পারি। তাদের মধ্যে সুনীল নিশ্চয়ই থাকবে।”
এই ম্যাচের প্রথম এগারো আর বাংলাদেশ ম্যাচের প্রথম এগারোর মধ্যে মিল নাও থাকতে পারে বলে জানিয়ে দিলেন ভারতীয় দলের কোচ। বলেন, “দুই ম্যাচেই শুরু থেকে একই দল খেলার সম্ভাবনা কম। তবে পুরো এগারোজনকেই বদলে দেওয়া তো সম্ভব নয়। কয়েকজন থাকবে। দলের সবার ওপরই আমার আস্থা আছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে নামার আগে এই ম্যাচে ভাল প্রস্তুতি হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি মলদ্বীপেরও
ভারতের মতো মলদ্বীপের সামনেও রয়েছে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ, যা তারা খেলবেই ভারতের ম্যাচের দিনই, অর্থাৎ, মঙ্গলবার। ওই দিন তাদের ম্যাচ ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে। ফলে তাদের কাছে এটি সেই ম্যাচের প্রস্তুতি। তাদের কোচ আলি সুজেইন বলেন, “আমরাও ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি নিতেই এই ম্যাচে নামছি। এই ভারত ও মলদ্বীপ যেহেতু দুই শক্তিশালী দল, তাই এই ম্যাচে লড়াই হবে বলেই আমার ধারণা।”
মলদ্বীপের জাতীয় দলটি সম্প্রতি খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। ২০২৪-এ তারা মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলে, দু’টিই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। একটিতে তারা জেতে ও একটিতে হারে। তবে এই নিয়ে সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন তাদের কোচ। তাঁর মতে, “সম্প্রতি বেশি ম্যাচ না খেললেও এই খেলোয়াড়দের নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই কাজ করছি। ওদের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা আছে। ওদেরও আমার ওপর আস্থা আছে। আমরা আমাদের সেরাটাই দেব।”
ইতিহাস অবশ্য ভারতকেই এগিয়ে রাখছে। পরিসংখ্যান বলছে দুই দেশের মধ্যে ফুটবল মাঠে দেখা হয়েছে ২১বার। তার মধ্যে ১৫বার জিতেছে ভারত ও দু’বার ড্র হয়েছে। দুই দলের মধ্যে শেষ দেখা হয়েছিল ২০২১-এর সাফ ফুটবলে। সেই ম্যাচে ভারতই জয়ী হয়েছিল। এ বার তারা সেই জয়ের ধারা বজায় রেখে ১৬ মাসের খরা কাটাতে পারবে কি না, সেটাই দেখার।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)