কলকাতা : মাম্পস ।  ছোটদের রোগ বলেই সাধারণত ধারণা। ঠিকই। তবে ছোটবেলায় ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে যে কোনও বয়সেই হানা দিতে পারে এ রোগ। আর তলে তলে এমন ক্ষতি করে চলে যেতে পারে, যা তখনই টের পাওয়া যায় না। হয়ত অনেক বছর পরে জানান দিল সে - ক্ষতি। মাম্পস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রুদ্রজিৎ পাল ।


একটি ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ। মাম্পস প্যারামাইক্সোভাইরাস নামক একটি ভাইরাসের আক্রমণে হয়। হালে মাম্পস, মিজলস ও রুবেলা - এই তিনটি রোগ প্রতিরোধ করে এমন ভ্যাকসিন একত্রে দেওয়া হয়, যাকে একসঙ্গে বলে এমএমআর। কিন্তু এই ভ্যাকসিন যাঁরা নেননি তাঁদের যেমন এই অসুখ হতে পারে, ভ্য়াকসিন নেওয়া থাকলেও হতে পারে। নেওয়া থাকলে রোগের প্রকোপ কম হয়। গত কয়েক মাস ধরে মাম্পসের প্রকোপ বৃদ্ধির কথা শিরোনামে এসেছিল। আর এই রোগ যেহেতু যে কোনও সময়ই হতে পারে তাদের সতর্ক থাকতেই হবে। বিশেষত যেসব বাচ্চারা স্কুলে যায়, তাদের। 


মাম্পস ছড়ায় লালা বা শ্লেষ্মার মাধ্যমে। তাই মাম্পস হয়েছে এমন কারও সংস্পর্শে আসা বা তার ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। যেসব বাচ্চাদের মাম্পস প্রতিরোধের জন্য একটি ভ্যাকসিন নেওয়া নেই, তাদের ভাইরাস ধরে ফেলে ঝট করে। 


মাম্পসের ভাইরাস  শরীরের যে কোনও অংশকেই আক্রমণ করতে পারে। তবে প্রাথমিক ভাবে দেখা যায়,  কানের নীচে এবং লালা তৈরির গ্রন্থিগুলিকে সংক্রমিত করে আগে। এই গ্রন্থিগুলিকে বলে প্যরোটিড গ্রন্থি । মাম্পস হানা দিলে এগুলি ফুলে উঠতে শুরু করে। প্রচণ্ড ব্যথা হয়। হাঁ করা যায় না। গা ফুলে বীভৎস আকার নেয়। সঙ্গে থাকে ধূম জ্বর।  এ হাম, মাম্পস এবং রুবেলা (এমএমআর)-র ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এর ঝুঁকি অনেক কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু আগে থেকেই সর্বস্তরে এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। তাই সে-দেশে এ রোগের কথা তেমন শোনা যায় না। 


মাম্পসের প্রধান উপসর্গ গলা ও কানে অসম্ভব ব্যথা। সেই সঙ্গে গাল ফুলে যাওয়া। হাঁচি, কাশি, এবং প্রচণ্ড জ্বর হলেই সতর্ক হতে হবে। সেই সঙ্গে থাকবে প্রবল দুর্বলতা এবং প্রচণ্ড ক্লান্তি। পেশীতে যন্ত্রণা এবং শরীরের ব্যথা থাকতেই পারে। কষ্ট হবে গিলতে। 


যার মাম্পস হয়েছে, তার কাশি, হাঁচি বা কাছাকাছি কথা বলা থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়া কোনও বাচ্চার মাম্পস হলে, তাকে চুমু খেলেও মাম্পস ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বাচ্চাকে বারবার সতর্ক করতে হবে, কারও মুখ লাগানো টিফিন, জল বা কাপ সে যেন ব্যবহার না করে। এমনকী একই রুমাল ব্যবহার, চামচ বা কাঁটার ব্যবহারও এই রোগ বহন করে নিয়ে যায়। বাচ্চাদের এই মেলামেশা তো বন্ধ করা কঠিন। তাই মাম্পসের উপসর্গ থাকলে সেই বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করতে হবে, যতদিন না তার অসুখ এক্কেবারে সারে। 


মাম্পস ভাইরাস ঘটিত রোগ। এর কোনও ওষুধ নেই। ডাক্তাররা চিকিৎসা করেন উপসর্গ দেখে দেখে। কারও সেকেন্ডারি ইনফেকশন হলে অ্য়ান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। 


মাম্পসের উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রোগের নিরাময় করতে পারে। কিন্তু খুব বিরল হলেও, এই অসুখ ছেলেদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে ও মেয়েদের জরায়ুতে এমন ক্ষতি করতে পারে, যা টের পাওয়া যায় প্রজননের বয়স হলে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনও পুরুষ বা মহিলার ফার্টিলিটিই নষ্ট করে দিল মাম্পসের ভাইরাস। 
তবে তা খুবই কম ক্ষেত্রে। 


তাই মাম্পসের টিকা নিন। ছোটবেলায় নেওয়া না হয়ে থাকলে বড় বয়সেও নেওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।