কলকাতা: হালখাতা আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। পুরনো হিসেবের খাতা বন্ধ ও নতুন হিসেবের খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, সঙ্গে আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই হালখাতা। প্রত্যেক চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল বা কর পরিশোধ করা হতো। এর পরের দিন পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজেদের অঞ্চলের প্রজা বা অধিবাসীদের মিষ্টি, পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সময়-সুযোগ আর পরিবেশ মিলে যোগ-বিয়োগ ঘটে অনেক ঐতিহ্যের। কিন্তু কিছু ঐতিহ্যের শিকড় এত গভীরে যে আধুনিকতার শত ঝাপটায়ও টিকে থাকে প্রাচীন বটবৃক্ষের মতো। তেমনই একটি বিষয় হল হালখাতা।
বাংলা বছরের প্রথম দিনটাকে হালখাতা হিসেবে পালন করেন ব্যবসায়ীরা। আগের বছরের দেনা-পাওনার হিসেব সমন্বয় করে এদিন নতুন করে হিসেবের খাতা খোলেন তাঁরা। এই উপলক্ষ্যে নববর্ষের প্রথম দিনে দোকানে আসা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখও করান তাঁরা। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে হালখাতা উদযাপন। হালখাতা বাঙালি ঐতিহ্য ও ইতিহাসের একটি অংশ। তবে বর্তমান সময়ে হালখাতার উদযাপন আগের থেকে অনেকটাই কমে এসেছে। আগে রীতিমত নিমন্ত্রণ পত্র ছাপিয়ে উত্সবের আয়োজন করতেন ব্যবসায়ীরা। এখনও অনেক জায়গাতেই দোকান পরিষ্কার করে, ফুল দিয়ে সাজিয়ে, লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করে শুরু হয় হালখাতা। তবে দিনকাল বদলেছে ৷ অনলাইন শপিং, ই-ব্যাঙ্কিংয়ের দাপটের যুগে হালখাতা এখন আগের মতো পালন না হলেও এই ঐতিহ্য পুরোপুরি ভুলে যাননি কেউই ৷
তবে করোনার দাপট চলছেই ৷ যে ভাবে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে ৷ তাতে দেশজুড়েই নতুন করে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা ৷ এই অবস্থায় হালখাতা পালন কতটা জমজমাট ভাবে হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে ৷
গুপ্তযুগের জ্যোর্তিবিদ বরাহমিহির তাঁর ‘বৃহৎ সংহিতায়’ বলেছেন- ২৪০ অব্দে(৩১৯ খ্রীঃ) চৈত্র সংক্রান্তি বা ১লা বৈশাখ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তাঁর অভিষেকের দিন গুপ্তাব্দের সূচনা করেন। এই ১লা বৈশাখের দিনে বা বাংলার অভিধানিক অর্থে বলা যেতে পারে হালখাতা শুভ সূচনা দিবস। এই দিন বাঙালীরা যে দেবতার পূজা অর্চনায় ব্যস্ত থাকেন তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের পুত্র গণেশ ৷ সমস্ত দেবদেবীর পূজোর মধ্যে গণেশের পুজো সবচেয়ে আগে করতে হবে কারণ তিনিই সর্বসিদ্ধিদাতা। লক্ষ্মীদেবী ধন-দৌলতের দেবী হিসাবে পূজিত হন ৷ এই কারণে দেবী লক্ষ্মীকে গণেশের সঙ্গে পুজো করা হয়। এখন দেখে নেওয়া যাক, নতুন বছরে প্রথম পুজোর নির্ঘন্ট ও সময় সূচি ৷ বাংলা তারিখ- ১ বৈশাখ ১৪২৮ , বৃহস্পতিবার। ইং তারিখ- ১৫/৪/২০২১। পুজোর মাহেন্দ্রযোগ সকাল ৭টা ০১-এর মধ্যে । আবার বেলা ১০টা ২২ থেকে ১২টা ৫২ পর্যন্ত রয়েছে পুজোর সময় । অভিজিৎ মুহূর্ত ১১টা ১২ থেকে ১২টা পর্যন্ত ।