ভারতে প্রস্টেট ক্যান্সার একটা ভয়াবহ জায়গায় গিয়ে পৌঁছচ্ছে।  প্রস্টেট ক্যান্সার সারা বিশ্বেই ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের প্রধান শহরগুলিতে পুরুষদের মধ্যে বেশি করে থাবা বসাচ্ছে প্রস্টেট ক্যান্সার। এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন মূলত  ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা। তবে ইদানীং শহরাঞ্চলে, অল্পবয়সী পুরুষদেরও এই ধরনের ক্যান্সার হচ্ছে। চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নতির দিকে গেলেও প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে । তার একটি বিশেষ কারণ আছে।  

Continues below advertisement

এখন ব্রিটিশ পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার হয়ে উঠেছে প্রস্টেট ক্যান্সার।  প্রতি বছর ১২,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে এই ক্যান্সারের জন্য। এর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি প্রায় কোনো লক্ষণ ছাড়াই বাড়ে। বেশিরভাগ পুরুষ প্রস্টেট ক্যান্সার টেরই পান না, এটি শরীরের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার আগে।  দেরিতে ধরা পড়ে বলেই , এই ধরনের ক্যান্সার নিয়ে উদ্বেগে চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে, ব্রিটেনের ন্যাশনাল স্ক্রিনিং কমিটি (National Screening Committee) ব্যাপক হারে প্রস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার প্রস্তাবটি আবারও প্রত্যাখ্যান করেছে। এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ঋষি সুনাক, পিয়ার্স মরগ্যান, স্যার ক্রিস হোয় এবং আরও অনেক ক্যান্সার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সংস্থা। 

ঋষি সুনাক এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত "জীবন বাঁচানোর সুযোগ হারানো"।   সুনাক বলেন, যেহেতু প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ ছাড়াই বাড়েতে থাকে, তাই পুরুষরা কেবল লক্ষণ দেখে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।  তাই স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন। পিয়ার্স মরগান এবং অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন স্যার ক্রিস হোয়ও স্ক্রিনিং না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে একটি বিপজ্জনক ভুল বলেছেন। 

Continues below advertisement

 প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে কীভাবে বাঁচা সম্ভব?

যে কোনও ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু পদক্ষেপ ঝুঁকি কমাতে পারে। বিশেষ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে , এমন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে  স্ক্রিনিং খুব জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বাবা বা ভাইয়ের ৬০ বছরের আগে প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়, তবে ঝুঁকি ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়। এই ধরনের পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়স থেকে PSA মনিটরিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গবেষণা কী বলছে?

সারা বিশ্বের গবেষণা দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত ফ্যাট প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম প্রদাহ কমায়।  হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।  প্রক্রিয়াজাত ও গ্রিল করা মাংস খাওয়া প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি  মারাত্মক হারে বাড়ায়।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন পাতে থাকুক টমেটো, সবুজ শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতী খাবার, যেমন বাদাম, জলপাই তেল, ফ্যাটি মাছ! 

ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সঠিক রাখা

কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ডের গবেষণা থেকে জানা যায় যে খুব কম ভিটামিন ডি আছে এমন পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার দ্রুত ছড়ায়।  

ধূমপান এবং মদ্যপান সীমিত করুন

ইউরোপীয় গবেষণা অনুসারে, ধূমপান প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত মদ্যপান টিউমারের সম্ভাবনা বাড়ায়। 

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

মোটামুটি সব বিশেষজ্ঞরাই একটি বিষয়ে একমত,  প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা যায় অনেক দেরি করে। তাই ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের পরে নিয়মিত PSA পরীক্ষা, প্রয়োজন অনুযায়ী MRI, ওজননিয়ন্ত্রণ , খাদ্যাভ্যাস এবং ভিটামিন ডি-র মাত্রার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তাছাড়া ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাও আবশ্যক। পরিবারে প্রস্টেট ক্যান্সারেক ইতিহাস থাকলে জিন পরীক্ষা করানো উপকারী হতে পারে।