কলকাতা : বাচ্চার কান্নায় বড়রা অনেক সময়ই বিরক্ত হয়ে ওঠেন বা চিন্তিত হয়ে পড়েন। বাচ্চা কেন বারবার কাঁদছে, তা বুঝতেই পারেন না তাঁরা। কিন্তু জন্মের শুরুতেই শিশুর কান্না কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কান্নার মধ্যে দিয়েই শিশু প্রথম নিঃশ্বাস নেয়। শ্বাসবায়ু বাচ্চার শরীরের ভিতরে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চা না কাঁদলে বা দেরিতে কাঁদলে পরবর্তীতে অনেক সমস্যা দেখা যায়। ঠিক কী কী কারণে শিশু কাঁদে, কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন, বিস্তারিত জানালেন শিশুরোগবিশেষজ্ঞ ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার। 

খিদেয় ও তেষ্টায়
ছোটবেলায় শিশুরা মাঝে মাঝেই কেঁদে ওঠে মূলত খিদেয় ও তেষ্টায়। যা তারা পায় মায়ের স্তনপান করে। খিদে হোক বা তেষ্টা দুটোই সে প্রকাশ করে কান্নার মাধ্যমে। মায়ের কাছে স্তন্যপান করে বাচ্চা সাধারণত চুপ করে যায়। কিন্তু শিশু যদি স্তন পান করতে না চায় বা খাওয়ানোর পরও কান্না করতেই থাকে, তাহলে বুঝতে হবে leর অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে। 


চেক করুন ডায়পার
খিদে - তেষ্টা মিটিয়েও বাচ্চা কাঁদলে, চেক করতে হবে শিশুটি ন্য়াপি ভিজিয়ে ফেলেছে কি না। কিংবা সে যেখানে শুয়ে আছে, তা ভিজে আছে কি না। বাচ্চা বলতে পারে না যে তার জামা কাপড় ভিজে গিয়েছে। তাই মল-মূত্র ত্যাগ করার পর তা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে বাচ্চা জানান দেবে কান্নার মাধ্যমাই। 


পেটে ব্যথা

পেট ব্যথাও শিশুর কান্নার অন্যতম কারণ। বোতলে দুধ খেতে গিয়ে বা স্তন পান করতে গিয়ে অনেক সময় শিশুর পেটে হাওয়া ঢুকে যায়, তখন তা পেটের মধ্যে ঘুরতে থাকে ও যন্ত্রণা তৈরি করে। অনেক সময় এই কান্না সন্ধের দিকে হয়। খিদে - তেষ্টা বা ডায়পার ভিজিয়ে ফেলা ছাড়া আর যে কারণে শিশু কাঁদে, তা হল পেট ব্যথা। 


পেট ব্য়থার ওষুধ দেওয়ার সময় অযথা চিন্তিত হবেন না। কারণ এতে কিন্তু কোনও ব্যথা কমানোর কেমিক্যাল থাকে না , বরং তেল জাতীয় দ্রব্য থাকে, যা পেটে জমে থাকা বাতাসটা শরীর থেকে বের করে দেয়। বাচ্চাকে খাওয়ানোর পর ভালভাবে ঢেকুড় তোলানো না হলেই পেটে ব্যথা করে। 


শিশুর নাক বন্ধ


এছাড়া শিশুর নাকবন্ধ হয়ে গেলেও সে কাঁদে।  সে সময় তাকে সোজা করে কোলে নিলে সে চুপ করে যায় কিন্তু শুইয়ে দিলেই কাঁদে। কারণ নাক বন্ধ হয়ে গেলে, তার তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।  সেক্ষেত্রে শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট ন্যাজাল ড্রপ দিতে হবে। সেগুলি মূলত স্যালাইন ওয়াটারই। তাই বারবার দিলেও শরীরের ক্ষতি করে না। বরং বাচ্চার ঘুম নিশ্চিত করে এই জাতীয় ড্রপের ব্যবহার। খেয়াল রাখুন বাচ্চা মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে কি না, তাহলেই বুঝবেন বাচ্চাটির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নাক দিয়ে। 


পড়ে গিয়ে ব্যথা


আরেকটু বড় শিশুরা অনেক সময় কানের ব্যথায় কষ্ট পায়। কিংবা  পড়ে গিয়ে কখনও চোট পেয়েছ , তার জন্যও কাঁদে।  বুঝতে না পারলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনিই পরীক্ষা করে বলে দেবেন শিশু কেন কাঁদছে। অনেক সময় গলা ব্যথার জন্যও বাচ্চা কাঁদে। তখন তাঁর ঢোঁক গিলতে অসুবিধে হয়।  ছোট শিশুদের গলা ব্যথা হলে মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক হতে হবে। 


জেদের কান্না


এছাড়া অনেক বাচ্চা আবার জেদের জন্য বেশি কাঁদে। অনেক সময় কাঁদতে কাঁদতে তাদের দম আটকে নীল হয়ে যায়। একে বলে ব্রিদ হোল্ডিং স্পেল। এক্ষেত্রে খিঁচুনিও হতে পারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা খুব মুশকিল। তাই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নেওয়া উচিত।


এই নিয়ে অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অনেক ক্ষেত্রে এগুলি ছাড়াও বুকে ব্যথা, শরীরে কোনও অঙ্গে ব্যথা কিংবা প্রস্রাব করতে গিয়ে জ্বালা, ইত্যাদি কারণেও শিশু কান্না করতে পারে। সেটা অভিভাবকরা না বুঝলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।