কলকাতা : তীব্র হয়েছে গরম। মহানগরের তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি। রাজ্যের অধিকাংশ জেলাতেই বইছে লু। তীব্র তাপপ্রবাহের কথা ভেবে আপাতত এক সপ্তাহ ক্লাস বন্ধ রাজ্যের সরকারি  ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে। অনেকেই স্কুলই বেছে নিয়েছে অনলাইন ক্লাসের পথ। এই পরিস্থিতিতে চারিপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে বহু মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার খবর। গরম থেকে যে কোনও অসুখই কি হিট স্ট্রোক ? হিট স্ট্রোক কি ব্রেন স্ট্রোকের মতোই? নাকি আলাদা কিছু ? এই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন চিকিৎসক সুমন মিত্র, সিনিয়র কনসাল্ট্যান্ট ইন্টারনাল মডিসিন ( CMRI Hospital Kolkata, CODE WELLNESS ) । 


কাদের হিটস্ট্রোকের প্রবণতা বেশি?

চিকিৎসক সুমন মিত্র জানালেন, যাঁরা বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টের মধ্যে কোনও কারণে রোদে বের হচ্ছেন, যাঁদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি বা ১০-১৫বছরের কম, তাঁরাই মূলত হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। 


হিটস্ট্রোক কী ?

শরীর তার ভিতরের তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে নিজস্ব শারীরবৃত্তীয় কৌশলে। কিন্তু এখন রোদের তাপ এতটাই বেশি যে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যাচ্ছে। শরীর তখন সেই ব্যালেন্সটা দরে রাখতে পারছে না। ফলে পথে-ঘাটে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেক সময়ই অজ্ঞান হয়ে পড়ার মত পরিস্থিতি হচ্ছে। ব্ল্যাক আউট হচ্ছে। এটাই হিট স্ট্রোক। 


হিট স্ট্রোক আর এমনি স্ট্রোক কি একই ?


ব্রেন স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনও কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে হাত-পা নাড়াতে পারে না। শরীরের কোনও একদিকের সাড় চলে যায়। জিভ এলিয়ে যায়। কথ বলার সমস্যা হয়। কিন্তু হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সেটা ঘটে না। হিট স্ট্রোকটা একেবারে আলাদা। যখন গরমের কারণে শরীরে গরম-ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, তখন মানুষ একেবারে মাটিতে নুইয়ে পড়েন। শরীর গরম-ঠান্ডা ভারসাম্যটা ঠিক রাখতে পারে না। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছায়ায় নিয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত জল দেওয়া বা প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দেওয়া। যখন দেখা যাচ্ছে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হচ্ছে, রোগী ঠিক করে শ্বাস নিতে পারছেন না কিংবা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অতিরিক্ত বমি হচ্ছে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসছে না,  সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যত কাছাকাছি সম্ভব হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। 


সাধারণ স্ট্রোকের উসপর্গগুলি কিন্তু এটা নয়। মস্তিষ্কের কোনও একটা অংশে রক্ত পৌঁছতে না পারলে ব্রেন স্ট্রোক হয়। তখন শরীরের একদিন অবশ হয়ে যাতে পারে। কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং শরীরে কোনও একদিক একেবারেই দুর্ব হয়ে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ। মুখের একদিন বেঁকে যাওয়া বা মুখের একদিক থেকে জল গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। যা হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলি থেকে একেবারেই আলাদা। 


হিটস্ট্রোকের মূল উপসর্গ গুলি হল - 



  • রোদের তাপে একেবারে নুইয়ে পড়া 

  • অতিরিক্ত ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়া 

  • গায়ের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি অর্থাৎ প্রবল জ্বর 

    এই উপসর্গগুলি দেখলে একটুও সময় নষ্ট না করে তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এভাবেই লড়াই করতে হবে গরমের সঙ্গে । বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন  -