নয়াদিল্লি: নিত্য সামগ্রীর মতো সম্পর্কের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় কি? মানুষ বিশেষে প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ যে বদলে গিয়েছে, এবার সমীক্ষাতেও তার প্রমাণ মিলল। কারণ সমীক্ষা বলছে, ৭৮ শতাংশ ভারতীয় যুগল আলাদা ঘুমাতে পছন্দ করেন। এতে ঘুম ভাল হয় বলে মত তাঁদের। (Sleep Divorce)
ResMed 2025 Global Sleep Survey এই পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। যুগলদের আলাদা ঘুমানোর এই প্রবণতাকে Sleep Divorce বলে উল্লেখ করেছে তারা। ভারতীয় যুগলদের মধ্যেই Sleep Divorce-এর হার সবচেয়ে বেশি বলে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ৭৮ শতাংশ ভারতীয় যুগল আলাদা ঘুমাতে পছন্দ করেন। (ResMed 2025 Global Sleep Survey)
Sleep Divorce-এর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিন। সেদেশের ৬৭ শতাংশ যুগল আলাদা ঘুমান। দক্ষিণ কোরিয়া তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সেখানে এই হার ৬৫ শতাংশ। পৃথিবীর সর্বত্রই যুগলদের মধ্যে আলাদা আসাদা ঘুমানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এশিয়ার দেশগুলিতেই যুগলদের মধ্যে আলাদা ঘুমানোর প্রবণতা বেশি বলে উঠে এসেছে। আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো দেশে এই হার ৫০ শতাংশ। তবে যুগলদের আলাদা ঘুমানোর মধ্যে নেতিবাচক দিক যেমন রয়েছে, তেমন ইতিবাচক দিকও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
যুগলদের আলাদা আলাদা ভাবে ঘুমানোর নেপথ্য়ে একাধিক কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে ঘুম ভাল হওয়ার কথা বলেছেন কেউ, কেউ আবার জানিয়েছেন, এতে সম্পর্কের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমানোর ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হয়, তার মধ্যে একেবারে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে নাক ডাকার দরুণ ঘুম বিঘ্নিত হওয়া। নাকডাকা, জোরে জোরে শ্বাস নেওয়াকে আলাদা ঘুমানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৩২ শতাংশ। অস্থির বোধ করা (১২ শতাংশ), ঘুমের আলাদা সময়সূচি (১০ শতাংশ), মোবাইল-ল্যাপটপ ঘাঁটা, টিভি দেখাকে (৮ শতাংশ)-ও কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। এতে ঘুম ভাল হওয়া ছাড়াও, শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা বজায় থাকে বলে মত তাঁদের।
তব বিশেষজ্ঞদের মতে, যুগলদের এক বিছানায় ঘুমানো সম্পর্কের জন্য় অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের মতে, সঙ্গীর সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমালে Oxytocin-এর নির্গমন বাড়ে। Oxytocin-কে Love Hormone বলেও উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, Oxytocin-এর নির্গমন বাড়লে, অবসাদ, উৎকণ্ঠা দূর হয়, সম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ কেটে যায়, পাশাপাশি বাড়ে আয়ুও। মানসিক ভাবেও পরস্পরের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সঙ্গীর সঙ্গে এক বিছানায় শোয়ার পর ভালবাসা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ৫৩ শতাংশ, স্বাচ্ছন্দ্যের কথা জানিয়েছেন ৪১ শতাংশ, আনন্দের কথা জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ প্রশান্তির কথা জানিয়েছেন ২১ শতাংশ।
অনিদ্রার কারণ হিসেবে একাধিক বিষয়ও উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়। বলা হয়েছে, বর্তমানে পরিবার, অফিস, সামাজিক প্রত্যাশা সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, নিজের যত্ন রাখা হয়ে ওঠে না আর। বরং উৎকণ্ঠা বাড়ে, মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়, পাশাপাশি অর্থনৈতিক চিন্তাও রয়েছে। দুশ্চিন্তার কারণে ঘুম হয় না ৬৯ শতাংশ ভারতীয়ের। এর পরই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া-৬৭ শতাংশ, তাইল্যান্ড-৬৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুর-৬৫ শতাংশ, জার্মানি-৬১ শতাংশ। Gen Z-দের মধ্যে ৫৩ শতাংশ দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে অনিদ্রার সমস্যায় ভুগলেও, তা নিয়ে চিকিৎসায় অনীহা রয়েছে ২২ শতাংশের। এর ফলে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সম্পর্কের উপরও প্রভাব পড়ছে।
তবে অনিদ্রার ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বৈষম্য দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, ভারতে তুলনামূলক ঠিকঠাক ঘুম হয় পুরুষদের। মহিলাদের ঘুম ভাল হয় না। পুরুষরা যেখানে সপ্তাহে ৪.১৩ রাত ঠিক ঠাক ঘুমান, মহিলারা ঠিকঠাক ঘুমান ৩.৮৩ রাত। ৩৮ শতাংশ মহিলা হরমোন জনিত কারণে ঘুমাতে পারেন না, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২৯ শতাংশ। অনিদ্রার প্রভাব পড়ে ১৭ শতাংশ মহিলার কর্মজীবনে। ১২ শতাংশ পুরুষের এই সমস্যা হয়। পাশাপাশি, রয়েছে মেনোপজ। মেনোপজের প্রভাব ঘুমের উপর পড়ে পৃথিবীর ৪৪ শতাংশ বয়স্ক মহিলার।