কাজের চাপ, স্ট্রেস, মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মোবাইল ফোন অ্যাডিকশন। একাধিক কারণে ঘুমের সময় কমছে মানুষের। সঙ্গে খারাপ হচ্ছে 'কোয়ালিটি অফ স্লিপ'ও। এর থেকে নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রতিনিয়ত সাবধান করে চলেছেন চিকিৎসকরা। কম ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা রোগ শরীরে বসছে জাঁকিয়ে। তবে বেশি ঘুম কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর? সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নয় ঘন্টার বেশি ঘুম, স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব কম ঘুমের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে,প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘুম গভীর স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বলছে গবেষণা।
ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঘুমের ধরন এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে সংযোগ অনুসন্ধান করা হয়। সেই গবেষণায় যুক্ত করা হয় অন্য ৭৯টি গবেষণার ফলাফলও। সবকিছু বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্তে আসা হয়। গবেষণায় যাদেরকে স্যাম্পল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদের এক বছরের ঘুমের অভ্যেস ট্র্যাক করা হয়। সেখানে গবেষকরা দেখেন, যারা রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমায় যারা, তাদের তুলনায় এদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৪% বেশি বলে দাবি গবেষণার ফলে। কম ঘুমের ফলে নানারকম স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে আলোচনা তো হয়ই। তারই মধ্যে চমকে দিয়েছে এই গবেষণার ফল। অতীতে এই নিয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। অ্যাথলেট বা শ্যুটারদের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাকে শ্যুটার স্লিপ স্প্যান বলা হয়। অতীতে অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই ধরনের ঘুম ঘনঘন মাথাব্যথা, মেজাজ-পরিবর্তন, কাজে অমনোযোগিতার কারণ হতে পারে। এছাড়াও ৯ ঘণ্টার কাছাকাছি ঘুম হার্ট অ্যাটাক, বিপাকীয় সমস্যা, স্ট্রেস এবং ক্যান্সারের মতো অসুখের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তখনও গবেষকরা দেখেছেন যে যারা রাতে নয় ঘন্টার বেশি ঘুমান তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানো লোকদের তুলনায় ৩৪% বেশি। অতীতের ৭৪টি গবেষণার ফলাফলকে একত্রিত করে এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, ডঃ চুন শিং কোওক। তিনি মনে করেন, জনস্বাস্থ্যের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এই গবেষণাটির। অতিরিক্ত ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় বলেই মনে করছেন তিনি।
তবে মনে রাখতে হবে, এই গবেষণায় অতিরিক্ত ঘুমকে হতাশা , দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি এবং বিপাকীয় সমস্যার মতো সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে । তবে কখনওই বলা হয়নি অতিরিক্ত ঘুম প্রাথমিক ভাবে এই ধরনের ব্যাধির কারণ। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘুম এই স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মূল কারণ নয় বরং অতিরিক্ত ঘুম কারও দুর্বল স্বাস্থ্যের লক্ষণ হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, বয়স ভেদে ঘুমের চাহিদা পরিবর্তিত হয়। কিশোর-কিশোরীদের সাধারণত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। আবার সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। বয়স্কদের, মাঝে মাঝে ঘুম বা দীর্ঘ বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। কখনও চিকিৎসকরা তাঁদের দরকার অনুসারে, ৭ থেকে ৯ ঘন্টার ঘুমোতে বলেন।