কলকাতা : একটু বেশি জ্বর বাড়লো তো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে খেয়ে নিলেন। সর্দি-কাশিতে নাজেহাল দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে খেয়ে নিলেন আপনি । লাগাতার হজমের সমস্যায় ভুগছেন? অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করলেন । কিন্তু সমাধান কী হল? হয়তো সাময়িকভাবে আপনার সমস্যার সমাধান হল। কিন্তু সেটা হয়ত ওই ওষুধ না খেলেও হত। 


বিনা প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে কতটা ক্ষতি আপনি করে ফেললেন তা আপনি নিজেও জানেন না ! সব অসুখে সলিউশন কি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ করতে পারে? ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ খেলে শরীরের কোন ক্ষতি হয়  ? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ফর্টিস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দেবাশিস দত্ত ( Dr Debasis Datta, Gastroenterologist | Hepatobiliary Surgeon, Fortis Kolkata )। পিয়ারলেস হাসপাতাল ও ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানসের উদ্যোগে কলকাতার নভেম্বর সম্মেলনে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তার মধ্যেই এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে কথা বলেন তিনি। 


অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট অসুখের ক্ষেত্রেই কাজ করে ভাইরাস বাহিত অসুখে নয় ! এই সূক্ষ্ম পার্থক্য টাই মানুষ বোঝেন না ।  অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাল ইনফেকশনেও অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ খেয়ে নেন অনেকে । এর ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে ।

শুধু তাই না বরং অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত সেবনের ফলে শরীরে নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । মনে রাখতে হবে,  অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত খেলে শরীরে একটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়ে যায়, যার ফলে যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি  প্রয়োজনেও কাজ করা বন্ধ করে দেয় ।


আমাদের শরীরে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রয়োজনীয় অর্থাৎ ভালো ব্যাকটেরিয়া । কিছু ব্যাকটেরিয়া খারাপ অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া । অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে দেখা যায় ওষুধগুলি আমাদের পাচক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলিকেও মেরে ফেলছে। বিশেষত ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলিও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে নষ্ট হয়ে যায়। 


অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ ঠিকমতো না নেওয়ার ফলে বা ভুল ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন ইনফেকশনের পরে পেট ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা । বারবার মলত্যাগের বেগ পাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। 

clostridium difficile ইনফেকশনের মত সমস্যা অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ থেকে হতে পারে। এটা কি রকম? অনেক সময় দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে অসুখ সেরে যাওয়ার কিছুদিন পরে রোগী আবার ফিরে আসছে চিকিৎসকের কাছে । বলছে তার ডায়রিয়ার মত লক্ষণ দেখা দিয়েছে । সেই সময় মল পরীক্ষা করলে দেখা যায় তাতে clostridium difficile এর মত টক্সিন পাওয়া যেতে পারে।


মনে রাখতে হবে ভাইরাস বাহিত ইনফেকশন এর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না সে ক্ষেত্রে কিছু অ্যান্টিভাইরাল  ওষুধ রয়েছে যা ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন । তবে অসুখের নিরাময় হয়।  তেমনি ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। এক্ষেত্রে অন্য ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। কোন ক্ষেত্রে কোনটা প্রয়োজন তা চিকিৎসকরায় বলতে পারেন। 

 সব ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয় ইদানিং দেখা যায় অনেকের ডেঙ্গি হচ্ছে তারা এন্টিবায়োটিক খেয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু ডেঙ্গের উপর অ্যান্টিবায়োটিক কোন কাজ করে না বরং একটু আগে হাসপাতালে ভর্তি করানো গেলে গ্রিপ দিলে শরীর চাঙ্গা হতে পারে

বহুক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লাইফ সেভিং
এরকম দেখা গিয়েছে আগে যে অ্যান্টিবায়োটিক দ্রাবগুলি মানুষের শরীরের উপর সহজেই কাজ করতো এখন তা আর কাজ করে না একজন রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়ে গেলে তাকে আরো কড়া ধাঁচের অ্যান্টিবায়োটিক না দিলে অসুখের নিরাময় হচ্ছে না মনে রাখতে হবে যত কড়া অ্যান্টিবায়োটিক তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই নিজে থেকে দুমদাম করে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করে দিলে তা  যেমন গ‍্যাস্ট্রো সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তেমনি লিভার ও কিডনি কেউ ড্যামেজ করতে পারে।