নয়াদিল্লি :  কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা এবং ব্যায়াম হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের নির্ধারক। হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি কমাতে কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। তার জন্য ওষুধপত্রের প্রয়োজনীয়তা তো আছেই, তবে সবার আগে দরকার এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, ডায়েট থেকে তেল বাদ দেওয়া আর নিয়মিত ব্যায়াম । 


কোন কোলেস্টেরলের মাত্রা কত হওয়া দরকার ?



ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহিত ভুটানি জানালেন 200–250 milligrams per decilitre এর বেশি হলে উচ্চ-ঝুঁকির স্তর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। . "যদি এলডিএল কোলেস্টেরল, যা খারাপ কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত, তা যদি 190 মিলিগ্রাম/ডিএল-এর বেশি হয়, তাহলে হৃদরোগ হওয়ার খুব বেশি ঝুঁকি রয়েছে," তিনি যোগ করেছেন।


ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা 


150 mg/dl-এর নিচে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা থাকলে, তা স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত হয়। 150 থেকে 250 mg/dl বর্ডারলাইন হিসাবে ধরা হয়। 200 mg/dl-এর বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা হিসাবে দেখা হয়, বললেন ডা. ভুটানি ।  অতএব, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা 150 থেকে 200 mg/dl এর নিচে থাকা দরকার বলে মনে করা হয়। 


 সুস্থ হার্টের জন্য কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা বজায় রাখতে হবে



  • হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য, LDL কোলেস্টেরল 100 mg/dl এর কম হওয়া উচিত এবং ট্রাইগ্লিসারাইড 150 mg/dl এর কম হওয়া উচিত, জানালেন চিকিৎসক ভুটানি । মোট কোলেস্টেরল 200 mg/dl এর কম হওয়া উচিত বলে  তিনি মনে করেন। 


তবে এমন নয় যে, যিনি সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন, ভালো জীবনযাপন করেন, মানসিক চাপ না নেন, অ্যালকোহল এবং ধূমপান এড়িয়ে যান এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক, তার হৃদরোগের ঝুঁকি নেই। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে তাঁর পারিবারিক মেডিক্যাল হিস্ট্রির বিষয়টি।  চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স ২০ পেরলেই প্রতি  বছরে একটি লিপিড প্রোফাইল করিয়ে ফেলতে হবে। এর পাশাপাশি, কার্ডিওমায়োপ্যাথি এবং চ্যানেলোপ্যাথির মতো কিছু রোগও যদি পরিবারে কারও থাকে, তাহলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। 


এছাড়া কিছু খাবার কঠোর ভাবে এড়িয়ে চলতে হবে 



  • ডায়েটারি কোলেস্টেরল হল কোলেস্টেরল যা প্রাণিজাত খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। যেমন যকৃতের মাংস, ডিমের কুসুম, শেলফিশ এবং দুগ্ধজাত পণ্য।

  • স্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলি ঘরের তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে যায়। যেমন -  মাখন, ঘি, চিজ ইত্যাদি।  এগুলি এড়িয়ে যেতে হবে। এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়ানো উচিত, বলছেন চিকিৎসক ভুটানি । 


  • ট্রান্স-ফ্যাট রয়েছে এমন খাবারেও লাগাম পরানো উচিত। যেমন ভাজাভুজি বিশেষ করে ডিপ ফ্রাই কোনও খাবার। এর বদলে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে এমন খাবার ডায়েটে যোগ করতে হবে।  কোলেস্টেরল যাতে বেশি মাত্রায় শরীর শোষণ না করতে পারে, তার জন্য বিনস, ওটস-জাতীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।   




  • মরসুমি ফল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনই কোনও না কোনও ফল খাওয়া প্রয়োজন। তার সঙ্গেই ডায়েটে রাখতে হবে শাকসব্জি। পাশাপাশি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। এসবে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেলস, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega 3 Fatty Acid) শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।  


     




  • ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিলে এক লাফে অনেকটা কমে যায় হার্টের রোগের ঝুঁকি। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। রক্তচাপএবং হার্ট রেটও স্বাভাবিক থাকে ধূমপানের অভ্যাস ছাড়লে। মদ্যপানের অভ্যাসও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে অত্যধিক মদ্যপান। তাছাড়া, মদ্যপানের সময় যে ধরনের জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হয়ে থাকে সেটাও ক্ষতি করে। যা আদতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি অনেক বাড়়িয়ে দেয়। 




  • প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে ভাল থাকে শরীর। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সবকিছুতেই সহায়ক এই অভ্যাস। ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম হোক বা হাঁটা, উপকার মেলে সবেতেই। শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে ওবেসিটি থাবা বসাতে পারে না। যার ফলে দূরে থাকে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল-সহ আরও একাধিক সমস্যা।