কলকাতা: শীত পড়তেই রোগ জ্বরজ্বালার সমস্যা বাড়তে থাকে। সর্দি-কাশি ছাড়াও এই সময় আরেকটি সমস্যা আমাদের বড্ড ভোগায়। তা হল দাঁতের সমস্যা। এই সময় দাঁতে ব্যথার বাড়বাড়ন্ত হয়। কিন্তু কেন এই সমস্যা হয়? শীতে এমন কী রয়েছে যার জন্য দাঁতের সমস্যার বাড়াবাড়ি হয় ? এই বিষয়েই এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশদে কথা বললেন নীলরতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ স্বপ্নিল বন্দ্যোপাধ্যায়।
শীতেই কেন দাঁত শিরশিরানি বাড়ে?
- ঠান্ডা জল: শীতকালে দাঁতের শিরশিরানির মূল কারণ ঠান্ডা জল। অন্য মরসুমে আমরা সেই ভাবে ঠান্ডা জল খাই না। তবে শীতের সময় ঠান্ডা জল বেশি খেতে হয়। ফলে শিরশিরানি বাড়ে।
- দাঁত মাজার অভ্যাস: শীতের সকালে অনেকেই ঠিকমতো দাঁত মাজেন না। কেউ কেউ স্নানের মতোই এক-দুই দিন দাঁত মাজেন না।এছাড়াও, দিনে দুবার দাঁত মাজা উচিত। শীতের রাতে অনেকেই তা করেন না। এর ফলে ঠিকমতো সব ময়লা পরিষ্কার হয় না। দাঁত দুর্বল হয়ে পড়লে থেকেই দাঁত শিরশির করার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- মাড়ি ক্ষয়: দাঁতের নিচে বেশ কিছু নার্ভ থাকে। এই অবস্থায় মাড়ি ক্ষয়ে গেলে দাঁতের গোড়া অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে আসে। তাতে ঠান্ডা জল লাগলে শিরশির হবেই। ডায়াবিটিস রোগীদের যেমন প্রায়ই দাঁতের এই সমস্যা দেখা দেয়। আবার মাড়ি খুব বেশি ক্ষয়ে গেলে গরম জল খেলেও এই শিরশিরানি বাড়ে।
- দাঁতের ক্ষয়: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ক্ষয়ে যেতে থাকে। দাঁতের উপর এনামেলের একটি লেয়ার থাকে। সেটি ক্ষয়ে গেলে ডেন্টিনের লেয়ার বেরিয়ে আসে। এই লেয়ারটি বেশি সেনসিটিভ। তাই দাঁতের শিরশিরানি ও ব্যথা বাড়তে পারে। অন্যদিকে এর পিছনে ধূমপান ও মদ্যপান অনেকাংশে দায়ী থাকে। এই দুই কুঅভ্যাসের কারণে দাঁত অনেকটাই ক্ষয়ে যায়। দাঁতের অবস্থা খারাপ হলে সব ঋতুতেই এই শিরশিরানি হতে পারে।
কী করলে দাঁতের শিরশির ভাব কমবে?
- নিয়মিত ব্রাশ: দাঁত নিয়মিত দুবার ব্রাশ করা জরুরি। এতে দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। পাশাপাশি দাঁতের গোড়া যথেষ্ট মজবুত থাকে। এতে শিরশিরানির সমস্যাও আর দেখা দেয় না।
- আঠালো খাবার না খাওয়া: আঠালো খাবার যেমন চকোলেট দাঁতের জন্য মোটেই উপকারী নয়। কারণ এই খাবারগুলি বেশিরভাগ সময়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে। সব জায়গায় দাঁত পৌঁছায় না। এর ফলে দাঁতের হাল খারাপ হয়ে যায়।
- বছরে দু’বার স্কেলিং করানো: নিয়মিত দাঁতের স্কেলিং করানো জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। দাঁতের এমন জায়গা আছে, যেখানে ব্রাশ ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না। সেই চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে স্কেলিং করিয়ে নিলে সেই ময়লা সাফ হয়ে যায়।
দাঁত শিরশিরানির চিকিৎসাই বা কী?
- বছরে এক বা দুবার স্কেলিং: আল্ট্রাসোনিক ওয়েভ দিয়ে স্কেলিং করানো হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় দাঁতে মোটেও ব্যথা লাগে না। দীর্ঘদিন ধরে দাঁতের উপর খাবারের একটি স্তর জমতে থাকে। সেই খাবারের স্তরই পরিষ্কার করে দেয় স্কেলিং। স্বপ্নীল জানালেন, আমরা রোগীকে স্কেলিংয়ের সময় ব্যথা লাগছে কি না জানাতে বলি। ব্যথা লাগলে বুঝতে হবে দাঁতের সমস্যা রয়েছে।
- রুট প্লেইনিং ও কিউরেটেজ: অনেক সময় দাঁতে সংক্রমণ থেকেও শিরশিরানি ও ব্যথা হতে পারে। স্কেলিং করানোর সময় সেই সমস্যা ধরা পড়ে। রুট প্লেইনিং ও কিউরেটেজ করে চিকিৎসক সেই সংক্রমণের চিকিৎসা করেন। মাড়ি কেটে ভিতরে জমে থাকা পুঁজ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
স্কেলিংয়ে কেমন খরচ?
সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে স্কেলিং নিখরচায় করানো হয়। এর জন্য দুই টাকার টিকিট কেটে নিলেই হবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে স্কেলিং করালে মোটামুটি এক থেকে দুই হাজার খরচ পড়ে। অনেক জায়গায় একই সঙ্গে পলিশিংও করিয়ে দেওয়া হয়। এতে একটু খরচ বেশি হয়। তবে বছরে এক-দুইবার এই ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিলে দাঁতের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
আরও পড়ুন: Fatty Liver: কিছু বোঝার আগেই লিভার ফ্যাটি হয়ে যাচ্ছে? কেন এমন হয়?