নয়াদিল্লি: ২০০৯-এ ফার্স্ট জেনারেশনের ফরচুনার লঞ্চ হয়েছিল ১৯ লক্ষ টাকায়। বাকিটা তো ইতিহাস। ইনোভা-র সঙ্গে ফরচুনার ভারতে টয়োটার ব্যবসায়িক কার্যকলাপের দিশা গড়ে দিয়েছিল এবং এখনও প্রধান ভিত্তি। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, টয়োটাকে ভারতে পরিচিত ব্র্যান্ড করে তুলেছিল ফরচুনার। এখন কো ফরচুনার-ই একটা ব্র্যান্ড। আর এক প্রতি একাংশ এতটাই অনুরক্ত যে, অন্য কোনও কিছু কেনার কথা ভাবতেই পারেন না।




এর কারণ ফরচুনার একটি নো-ননসেন্স এসইউভি, যা যে কোনও জায়গায় ও সর্বত্র যেতে পারে এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে।অন্য কোনও এসইউভি-র এই ব্র্যান্ড ভ্যালু, বিশ্বাসযোগ্যতা বা ইমেজ নেই। তাই, এর খামতি নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। সত্যি কথা বলতে কী, এই আপডেটগুলি ছাড়াই ফরচুনার সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গাড়িগুলির মধ্যেই এখনও থাকত। নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এলেও এর জনপ্রিয়তায় কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। কিন্তু টয়োটা শেষপর্যন্ত প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ফরচুনারে নয়া আপডেট করেছে টয়োটা। 




আরও বেশি ফিচার ও আরও শক্তিশালী ডিজেল ইঞ্জিন সহ এটি একটি ফেসলিফ্টেড ফরচুনার। এরজন্য টপ-এন্ড ভার্সনের   কেনার খরচ ৩৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। হ্যাঁ, এক দশকেরও বেশি সময়ে ফরচুনার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ। এখন শুধু ফরচুনার এন্ডেভোর ও গ্লোস্টার-কেই নয়, সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএমডব্লু এক্স ১-এর সঙ্গে টক্কর দেবে। নতুন আপডেটে পরিবর্তন খুবই সূক্ষ্ম। কিন্তু সামনে নয়া গ্রিল ও বাম্পার সহ নতুন এলইডি লাইট এটিকে দেখতে অনেকটা লেক্সাস এসইউভি-র মতো করেছে। টেস্ট কারে নতুন রঙ বেশ ভালো লেগেছে। আরও বেশি কিছু চাইলে লেজেন্ডার ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, যা নতুন ফ্রন্ট বাম্পার ও গ্রিল এবং ডুয়াল-টোন লুক এনে দেয়। চিরাচরিত ফরচুনার অনুরাগীরা তা পছন্দ করবেন বলেই মনে হয়। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মতো তা  4x4-এ উপলব্ধ নয়। 


 




এই ফরচুনার সুবিশাল। কিন্তু ভেতরে যাওয়ার পর এর শেপ আগের মতোই। এই শেপে ফরচুনার প্রায় দেড় দশকের পুরানো, অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে নবীনতম এসইউভি-গুলিতে যেমন থাকে, তেমন প্রযুক্তি বা   স্পেসের অনুভূতি হয় না। কিন্তু কেবিন বেশ শক্তপোক্ত এবং একসূত্রে সাজানো। ভেতরে রয়েছে ঘণ বাদামি রং। সামগ্রিক গুণমাণ দামের নিরিখে বেশ ভদ্রস্থ।ফরচুনারের ফেসলিফ্টের ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন আপডেটেড ইনস্ট্রমেন্ট ক্লাস্টার ও অ্যান্ড্রয়েড অটো/  অ্যাপল কারপ্লে সহ নতুন ৮ ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন। রয়েছে নতুন জেবিএল ১১ স্পিকার অডিও সিস্টেম, এতে সাবউফার রয়েছে। কিন্তু এই অডিও সিস্টেম শুধু 4x4 মডেলের জন্য। আওয়াজের গুণমান বেশ ভালো লাগবে, দামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। জিও ফেন্সিং, রিয়েল টাইম ট্রাকিং ইত্যাদি সহ প্রতিদ্বন্দ্বী গাড়িগুলির মতো কার ফিচার সম্পর্কিত প্রযুক্তির সঙ্গে তূল্যমূল্য নতুন ফরচুনার। এরমধ্যে সুন্দর সংযোজন হল চোখজুড়ানো ও বাতাসযুক্ত ফ্রন্ট সিট। লেজেন্ডারে রয়েছে ওয়ারলেস চার্জিং ও হ্যান্ডস-ফ্রি ট্যালিগেট ওপেনিংয়ের সুবিধাও। 


 




২.৭ লিয়ার পেট্রোল ইঞ্জিন সহ এই এসইউভি-র জ্বালানির খরচ বেশি। 204hp ও  500Nm টোর্ক সহ ২.৮ লিটার ইঞ্জিনের এসইউভি ক্রয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। ডিজেল ম্যানুয়াল কম টোর্ক হয়, অন্যদিচে, ৬-স্পিড অটো ডিজেল  4x4-এ পূর্ণ  ক্ষমতা ও টোর্ক রেটিং মেলে। প্রথম যা নজরে আসে, তা হল এর উন্নত পরিমার্জন। আগের ফরচুনারের মতো বেশি আওয়াজ নেই। শহরে স্বল্প গতিতে পরিমার্জনের মাত্রা অন্যান্য কিছু প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ভালো। বেশি জোরে চালালেই শুধু আওয়াজ হয়। অতিরিক্ত স্টোর্ক ও স্পোর্ট মোড সুবিশাল ফরচুনারকে দ্রুত ওভারটেকের জন্য এক অনায়াস এসইউভি করে তুলেছে। শহরে এর প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো। যদিও স্টিয়ারিং বেশ ও ভারী ও মন্থর। সেজন্য এ কথা মাথায় রাখতে হবে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যানুয়ালটি সহজেই পাওয়া যায় এবং তা এই বিশাল এসইউভি চালানো সহজ করে তোলে। স্বাভাবিক ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রে   ১১ কিমি প্রতি লিটারে বাস্তবে প্রতি খুবই কার্যকরী বলে মনে হয়। সামান্য উঁচুনিচু রাস্তার ক্ষেত্রেও তা একই রকম। এর অফ-রোজ ক্ষমতাও বেশ ভালো। যদিও ফরচুনার এর মূল ইউএসপি-তে কোনও বদল আনেনি, তা একই রকম রয়েছে। 
  যা পছন্দ হবে- আপডেট এর ডিজাইনকে আরও ভালো করেছে, নতুন ফিচার, টাফনেস, অধিক পরিশোধিত ডিজেল ও পারফরম্যান্স।
যা পছন্দ হল না- দাম বেশি, স্পেস কম