ইউরিক অ্যাসিড ( uric acid ) শরীরে থাকবেই। কারণ ইউরিক অ্যাসিড শরীরে নানা খাবার থেকে তৈরি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কিডনি শরীর থেকে বের করে দেয়। এর ফলে শরীরে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তুএর মাত্রা বেড়ে গেলে তখনই মুশকিল। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল ( Dr. Rudrajit Paul ) । আমরা যখনই পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাই, তখনই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। যদিও আমাদের কিডনি ইউরিক অ্যাসিড ফিল্টার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়, কিন্তু পিউরিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং ইউরিক অ্যাসিড রক্তে মিশে যেতে থাকে। নানা লক্ষণে জানান দেয় ইউরিক অ্যাসিডের বৃদ্ধি। 


চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল জানালেন, ইউরিক অ্যাসিডের নর্মাল রেঞ্জ হল,



  • পুরুষদের ( প্রাপ্তবয়স্ক ) ও মেনোপজ হয়ে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩.৫ থেকে ৭.২ mg/dL

  • মেনোপজ না হওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে ২.৬ and ৬.০ mg/dL


কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন ইউরিক অ্যাসিড বেড়েছে ?   ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল গাঁটে গাঁটে ব্য়থা। তবে যে কোনও ব্যথা কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাবে হয় না। ব্যথার প্রকৃতি দেখে ডাক্তাররাই বলে দেন। পায়ের আঙুলে ব্যথা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার প্রাথমিক লক্ষণ। অনেকেই নিজে থেকে ইউরিক অ্যাসিডের পরীক্ষা করিয়ে, সামান্য বেশি দেখলেই ওষুধ খেতে শুরু করেন। সেটার কোনও প্রয়োজন নেই। অনেক ক্ষেত্রেই ইউরিক অ্যাসিড সামান্য বেড়ে থাকলে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দরকার খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা। আর এই নিয়েও রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। কোন কোন খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে, জানালেন চিকিৎসক। 


কী কী খাবেন না  ( Gout Diet )



  • অনেকের ধারণা, ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে টমেটো, বেগুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি খাওয়া যায় না। তবে ডা. পাল বলছেন, সেটা ভুল ধারণা। শাক সবজি খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে না। 

  • ইউরিক অ্যাসিড সাধারণত বাড়ে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তাই এড়িয়ে চলতে হবে - 

  • সফট ড্রিঙ্কস। এতে থাকে ফ্রুক্টোজ, যা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি ঘটায়। যে কোনো খাবার বা পানীয়, যাতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, তা এড়িয়ে চলা ভাল।

  • মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। যদিও সমস্ত অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে না, কিন্তু অ্যালকোহল কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দিতে বাধা দেয়। 

  • অরগ্যান মিট, অর্থাৎ পশুর মেটে, লিভার, ব্রেন, কিডনি ইত্যাদি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। 

  •  হেরিং, স্ক্যালপস,  কডফিশ, টুনা, ট্রাউট, হ্যাডক সহ কিছু সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল।

  • এছাড়া রেড মিট এড়িয়ে চলা ভাল।

  • টার্কির মাংসে পিউরিনের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত ডেলি টার্কি এড়িয়ে চলুন।

  • ইস্ট জাতীয় খাবার । 


  এছাড়া আরও কিছু লক্ষণ আসতে পারে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে। যেমন, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া,  ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অত্যধিক বাড়লে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন ইত্যাদি। ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়লে প্রস্রাবের সময় জ্বালা করতে  পারে। সেই সঙ্গে আবার হতে পারে কিডনি স্টোন। তাই প্রস্রাবের যে কোনও সমস্যা হলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।


আরও পড়ুন :


ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার মানেই আমিষ নয়, নিরামিষ খাবারেও থাকে এই উপকরণ, কী কী খেতে পারেন?