Vitamin B12 : নানা ভিটামিনে শরীরের নানা প্রয়োজন মেটে। ভিটামিনের সঠিক ও উপযোগী উপস্থিতি ছাড়া আমাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ভিটামিন B 12 শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি শুধু মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে ভাল রাখে তাই না, বরং লোহিত রক্তকণিকা তৈরি এবং শরীরে শক্তি জোগানোর কাজও করে। মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী এর প্রধান উৎস। তবে যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের মধ্যে এর অভাবের একটু ঝুঁকি থেকে যায়। দেখে নেওয়া যাক শরীরে ভিটামিন B 12 - এর অভাব দেখা দিলে, কী কী লক্ষণে সাধারণভাবে তা বোঝা যায়। ভিটামিন B 12 - এর অভাব কেন বিপজ্জনক, তাও দেখে নেওয়া দরকার। 

১. একটানা ক্লান্তি এবং দুর্বলতা

ভিটামিন বি ১২-এর অভাবের প্রথম এবং সাধারণ লক্ষণ হল একটানা ক্লান্তি। এই ভিটামিন শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর অভাবে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায় ফলে সবসময় একটা ক্লান্তিভাব ও দুর্বলতা অনুভব করেন আক্রান্ত।  পর্যাপ্ত ঘুমোনোর পরেও সতেজ অনুভব করবেন না এই ভিটামিনের অভাব হলে।

২. ফ্যাকাশে বা হলদেটে ত্বক

বি ১২-এর অভাবে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা সঠিকভাবে তৈরি হয় না এবং রক্তাল্পতাও হতে পারে। এর কারণে ত্বক ফ্যাকাশে বা হালকা হলদেটে হতে শুরু করে। কখনও কখনও এটি জন্ডিসের মতো লক্ষণও দেখাতে পারে। ক্লান্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের রং হলুদ হতে শুরু করলে, উপেক্ষা না করাই ভাল।

৩. ঝিনঝিন এবং ভারসাম্যের সমস্যা

শরীরের স্নায়ুগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য ভিটামিন বি ১২ প্রয়োজন। এর অভাবে স্নায়ুর Myelin Sheath-এর ক্ষতি হয়। এর কারণে হাত ও পায়ে ঝিনঝিন ভাব বাড়ে। অসাড়তা, সূচ ফোটানোর মতো অনুভূতি হয়। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করা হলে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। এবং বারংবার পড়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দেরি হলে এই ক্ষতি স্থায়ীও হয়ে যেতে পারে।

৪. মেজাজ এবং মস্তিষ্কের পরিবর্তন

কম বি ১২- ভিটামেনর মাত্রা মস্তিষ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর অভাবে আক্রান্ত ব্যক্তি খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের মতো সমস্যায় পড়তে পারেন। এছাড়াও মনোযোগের অভাব, স্মৃতিভ্রংশ এবং "ব্রেন ফগ"-এর মতো সমস্যাও দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এর অভাব থাকলে বয়স্কদের মধ্যে ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশের গুরুতর রোগ)-র ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. জিভে ফোলাভাব এবং মুখের ঘা

ভিটামিন বি ১২-এর অভাবে জিভ ফুলে যেতে পারে। জ্বালা ও ব্যথা হতে পারে। এই অবস্থাকে গ্লোসাইটিস (Glossitis) বলা হয়। কিছু মানুষের মুখে বারবার ঘা হয়। এর ফলে খাবার খেতে এবং কথা বলতেও সমস্যা হয়।

ভিটামিন বি ১২-এর অভাব কেন বিপজ্জনক ?

যদি বি ১২-এর অভাব সময়মতো শনাক্ত করা না যায়, তবে এটি রক্তাল্পতা, স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতি এবং মস্তিষ্কের নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এর অভাবে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও শরীরে হোমোসিস্টিন (Homocysteine) নামক উপাদান বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে।

কীভাবে বাঁচবেন ?

যদি আপনার ভিটামিন বি ১২-এর অভাব থাকে, তাহলে আপনি কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন, দেখে নেওয়া যাক

  • সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
  • ডায়েটে ডিম, দুধ, দই, পনির, মাছ এবং মাংসের মতো খাবার রাখুন।
  • ভেগান বা নিরামিষাশীরা ডাক্তারের পরামর্শে বি ১২ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
  • সময়মতো ব্লাড টেস্ট করে বি ১২-এর মাত্রা পরীক্ষা করতে থাকুন।
  • অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

ডিসক্লেমার : প্রতিবেদনে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।