কলকাতা: মানুষ হাঁচি দিলে হাঁচির বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার। যদিও সব হাঁচির বেগ একই নয়। সেটি কারও কারও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ মাইল বেগে যেতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাঁচিকে Sternutation বলা হয়। নাকের মিউকাস মেমব্রেন কোনও অবাঞ্চিত বস্তু ঢুকে গেলে শরীর সেটিকে বের করে দিতে চায়। আর তারফলে বুকের পেশি এবং পেটের ডায়াফ্রামের তীব্র সংকোচনের মাধ্যমে নাক এবং মুখ দিয়ে তীব্র বেগে বাতাস বেরিয়ে আসে। এতে নাক, মুখ, বুকের হাড়, ফুসফুস, ডায়াফ্রাম, চোখ, নার্ভাস সিস্টেম এবং ব্রেইন, একসঙ্গে শরীরের মাল্টিপল সিস্টেম সংযুক্ত হয়।
হাঁচি শরীরের একটি রিফ্লেক্স সিস্টেম। শরীরের ভিতর থেকে, বা বাইর থেকে নাকে, মুখে বাতাসের কোনও একটি উপাদান নাকের সংস্পর্শে এলে নাকের ভেতর সিলিয়া নামের কিছু কোষ উদ্দীপ্ত হয়। চুলের মতো দেখতে নাকের এ কোষগুলোর কাজ শরীরের বাইরের বিভিন্ন উপাদানকে চিহ্নিত করে শরীরকে সতর্ক করা।
এমন উদ্দীপনা তৈরি হলে সিলিয়া কোষগুলো নাক থেকে ট্রাইজেমিনাল নার্ভের মধ্যে মস্তিষ্কের হাঁচি সেন্টারে সংকেত পাঠায়। হাঁচির সেন্টারটি থাকে লেটারাল মেডুলাতে। সেখান থেকে দুটো সংকেত আসে শরীরের বিভিন্ন অংশে। একটি মোটর সিগন্যাল নাকের পেছনের অংশ ল্যারিংস, মুখের পেছনের অংশ ফেরিংস এবং ফুসফুসের মাসলগুলোতে পাঠিয়ে পেশিগুলোকে সংকুচিত করে, আরেকটি প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিগন্যাল নাকে এবং চোখে গিয়ে নাক এবং চোখ থেকে জল ঝরানোর কাজটি করে।
ঘনঘন হাঁচির কারণ
- সাধারণত অ্য়ালার্জির কারণেই হাঁচি হয়। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন আলমারিতে থাকা উের পোশাক বের করে পড়লেও তা থেকে হাঁচির সমস্য়া হতে পারে।
- লক্ষ করা যায়, অনেকেরই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁচির সমস্যা বাড়ে এর কারণ বাতাসে সেই সময়ে দুষণের মাত্রা পা পরাগের মাত্রা বেড়ে সমস্যা তৈরি করে।
- ঘুম থেকে ওঠার পর বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের শরীরের বেশ কিছুটা সময় লাগে। এই সময়ে অনর্গল হাঁচি হতে পারে।
হাঁচি থামাতে কী করবেন
- শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কাজেই এমন খাবার খান যাতে ঠান্ডা লাগা, জ্বর ইত্যাদির সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
- সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠার পর গায়ে অবশ্যই গরম জামা-কাপড় জড়িয়ে রাখুন।
- যাঁরা সকালে জগিং বা শরীরচর্চা করেন, তারা শুরুতে মাথা, নাক-মুখ ঢেকে নিলেই ভাল। এতে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মানিয়ে নিতে সুবিধে হবে।
- হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যায় বাজারে একাধিক কার্যকরী ওষুধ-পত্র, নাজাল ড্রপ রয়েছে। তবে এগুলি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হাঁচি আটকালে বিপদ
হাঁচি একটি সহজাত প্রবৃত্তি। তীব্র বেগে বেরিয়ে আসে এটি। সাধারণের থেকে শরীরে প্রায় ৪-৬ গুন বেশি চাপ তৈরি হয়। তাই হাঁচি চাপার কারণে অনেক সময়ে ক্ষতি হতে পারে। যেমন কান, মস্তিষ্ক, চোখ বা হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে হাঁচি আটকালে।