একটা বয়সের পর মহিলাদের শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আগে-ভাগে সতর্ক হলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ৩০ পেরিয়ে গেলেই মহিলাদের শারীরিক সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে উঁকি দিতে শুরু করে। তাই কীভাবে সমাধানের পথে হাঁটবেন তারই কিছু পরামর্শ দেওয়া হল। 


৩০-এর পর কোন কোন পরীক্ষাগুলো জরুরি জেনে নিন 


হার্ট স্ক্রিনিং টেস্ট (ব্লাড টেস্ট) : হৃদস্পন্দন (Heart Beat) বেড়ে যাওয়া, ক্রমাগত ক্লান্তি, টানা উদ্বেগ কিন্তু হৃদয়কে নিয়ে চিন্তা বাড়ানোর বিভিন্ন উপসর্গ। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে হার্টের সমস্যা (Heart Problems) কখন শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে, সেটা সহজে বুঝে ওঠা মুশকিল। রোজের কাজের চাপ, স্ট্রেস হার্টের ওপর চাপ বাড়ার অন্যতম কারণ। যদি কোনওরকম উপসর্গ বোধ করেন, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়? উত্তর বা সমাধান খুবই সহজ। ব্লাড টেস্টের (মূলত লিপিড প্রোফাইল) মাধ্যমে একবার মেপে নিন সমস্ত প্যারামিটার সঠিক রয়েছে কি না। স্থানীয় প্যাথলজিতে বা অনলাইনে, যে কোনও ভাবেই তা করতে পারেন। কোন কোন টেস্ট করাবেন? হার্টের কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কি না বুঝে নিতে এইচএস-সিআরপি (হাই সেনসিটিভিটি সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন), ব্লাড প্রেসার (blood pressure), কোলেস্টেরল (cholesterol tests), ব্লাড গ্লুকোজ (blood glucose tests) ও শরীরের ঠিক ওজন বুঝে যাচাই করে নিতে বিএমআর টেস্ট করানো দরকার। এইচএস-সিপিআর (hs-CRP) পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে শরীরে কোনও ইনফেকশন বা ইনফ্লেমেশন বাড়ছে কি না, যা পরে হার্চ অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।



ডায়াবেটিস পরীক্ষা (Diabetes): গোটা বিশ্বে সবথেকে বেশি সমস্যা তৈরি করছে যে অসুখগুলো তার মধ্যে একেবারে উপরের সারিতে রয়েছে ডায়াবেটিস (Diabetes)। আর ভারতকে দুর্ভাগ্যবশত বলা হচ্ছে, ভবিষ্যৎ বিশ্বের ডায়াবেটিসের রাজধানী। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে যার শিকার সকলেই। ডায়াবেটিস শুধু অসুখই নয়, বলা ভাল শরীরের যাবতীয় বিভিন্ন রোগের মূল শিকড়। কিডনি থেকে হার্ট। চোখ থেকে মস্তিষ্ক, হাই ব্লাড সুগারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। তাই ৩০ পেরোলেই নিয়মিত ব্যবধানে ব্লাগ সুগার টেস্ট অবশ্যই করান। বিশেষ করে কারোর যদি ব্লাগ সুগারের ফ্যামিলি হিস্ট্রি থেকে থাকে। ব্লাড সুগার মাপার ক্ষেত্রে ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ টেস্ট, random গ্লুকোজ টেস্ট ছাড়াও করানো যায় hbA1c টেস্ট। hbA1c টেস্টের মাধ্যমে তিন মাসের ব্লাড সুগারের গড় ধরা পড়ে।


থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট: পৃথিবীতে অন্তত ১২ শতাংশ মহিলা থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভোগেন। থাইরয়েড অত্যন্ত কমন একটি সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নির্গত থাইরয়েড হরমোনে অস্বাভাবিক ক্ষরণই সমস্যা সৃষ্টি করে। থাইরয়েড হরমোন মূলত বিপাকের ক্ষেত্রে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই হরমোনের মাত্রা অত্যধিক বেশি বা কম হলে তা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০-এর পর থেকেই এ নিয়ে সচেতনতা জরুরি। যদিও এই বয়সের আগেও ধরা পড়তে পারে এই সমস্যা। থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষার জন্য সাধারণত রক্ত ​​​​পরীক্ষার করা হয়। পরীক্ষায় থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH), T 4 , T 3 এবং থাইরয়েড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। 


স্তন ক্যান্সারের পরীক্ষা (ম্যামোগ্রাফি): পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। হিসেব অনুযায়ী সাধারণ মানুষের মধ্যে ১২ শতাংশ নারী তাঁদের জীবনের কোনও এক সময়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। স্তন ক্যান্সারের হার উন্নত দেশগুলোতে বেশি, কিন্তু মৃত্যুহার বেশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই এ বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন প্রয়োজন। ৩০-এর পরেই স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিংয়ে ম্যামোগ্রাফি শুরু করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।


প্রতি ৬ মাস অন্তর একবার করে এই পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি যাঁদের বয়স ৪০-এর বেশি তাঁদের বছরে একবার করে ম্যামোগ্রাফি করুন এবং যাঁরা ৫৫ পেরিয়ে গিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতি দু-বছরে একবার এই পরীক্ষা জরুরি। ম্যামোগ্রাফিতে এক্স রে-র সময়ে সামান্য ব্যাথা বা অস্বস্তিবোধ হতে পারে। স্তনের কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন কিংবা স্তনে পিণ্ড,  ক্যালসিফিকেশন বা ক্যালসিয়াম ধাতু জমা হলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তা বোঝা যায়। কোনও অস্বাভাবিক লাম্প বা মিহি ক্যালসিয়াম দানার উপস্থিতি, বিন্যাসের ধরন এবং অন্যান্য অনেক বিষয় এ ক্ষেত্রে দেখা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসায় সাড়া মেলে। এ ক্ষেত্রে একজন রোগী সম্পূর্ণভাবে ক্যান্সারমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে সক্ষম হন।


জরায়ুর ক্যান্সার (প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট): জরায়ু ক্যান্সারের প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে মহিলাদের মধ্যে। ৩০ বছরের পর থেকেই মহিলাদের মধ্যে এই ক্যান্সারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। মহিলাদের জরায়ুর ক্যান্সারের মূল্যায়নে সাহায্য করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হল প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট, যা ক্যান্সারে একদম প্রাথমিক স্তরেই অস্বাভাবিক 


তবে আশঙ্কার বিষয় হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলি এড়িয়ে গিয়ে বিপত্তি ডেকে আনেক অনেকেই। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কোনও উপসর্গই অবহেলা না করে তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।