কলকাতা : কর্কটরোগ ( Cancer )। চিকিৎসাশাস্ত্র অনেক উন্নতি করে ফেলার পরও ক্যান্সারের আনসার খুঁজতে এখনও বহু সময়ই ব্যর্থ মানুষ। কর্কটরোগের মারণ কামড় থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার দিশা এখনও সবক্ষেত্রে দেখানো যায় না। তবু কিছু ক্যান্সার এখন প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে সুস্থ জীবন ফেরত পান রোগী। তবে তার জন্য যেমন দরকার কর্কটরোগের লক্ষণ গুলিকে চেনা, তেমনই প্রয়োজন কিছু ক্ষেত্রে সময় অনুয়ারী স্ক্রিনিং শুরু করা। 


ব্রেস্ট ক্যান্সার ( Breast Cancer ) । ২ দশক আগে সারা দেশে আক্রান্তের নিরিখে চতুর্থ ধরের ক্যান্সার ছিল এটি। তবে দেশে যত মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হন, তার মধ্যে সবথেকে সংখ্যায় বেশি স্তন ক্যান্সার। কোন কোন ক্ষেত্রে, কাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি, তা জানা থাকলে নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা যায়। 


কারা স্ক্রিনিং করাবেন, কবে থেকে করাবেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন চিকিৎসক সৌমেন সাঁফুই ( Associate Consultant, General Surgery & Surgical Oncology, Peerless Hospital ) । 


কাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি 



  • বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের ক্যান্সারের মতোই ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ৪০ বছর হয়ে গেলেই মহিলাদের সতর্ক হতে হবে। দেখা গিয়েছে, দুই তৃতীয়াংশ ক্যান্সারের রোগীর বয়স ৫৫ বছরের উপর । 

  • পরিবারে ( Family History ) কারও ক্যান্সার থাকলে সতর্ক হতে হবে। খুব কাছের মানুষ, যেমন মা বা বোনের যদি ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকে, তাহলে স্ক্রিনিং শুরু করতে হবে কম বয়স থেকেই। যাঁদের মা বা বোনের কারও দুদিকের স্তনেই ক্যান্সার আক্রমণ হয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি বেশি ক্যান্সার হওয়ার। যাঁদের মা বা বোনের কম বয়সেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে, তাঁদেরও আগাম সতর্ক হতে হবে। সেলফ স্ক্রিনিং করে যেতে হবে নিয়মিত। চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে হবে। 

  • বংশগত কিছু কারণেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। সেটা হয় জিনের মিউটেশনের জন্য । দেখা গিয়েছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে বংশগত কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে। যেমন বংশে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ইতিহাস ছিল বলে আগে থেকেই ঝুঁকি এড়াতে স্তন বাদ দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। 

  • অন্যান্য কোনও রোগের কারণে রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট চললে সতর্ক থাকতে হবে। 

  • কারও যদি কম বয়সে একদিকের ব্রেস্টে ক্যান্সার হয়ে থাকে, তাহলে অপরদিকের ব্রেস্টে পরের দিকে ক্যান্সার হতে পারে। 

  • যাঁদের ঋতুস্রাব কম বয়সে শুরু হচ্ছে ও বেশিদিন বয়স অবধি থাকলে , তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের এক্সপোজার যাঁদের ক্ষেত্রে বেশি, তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। 

  • যাঁরা কোনও কারণ সন্তানের জন্ম দেন না, তাঁদের এই ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। 

  • যাঁরা বেশি বয়সে মা হন, তাঁদেরও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি দেখা গিয়েছে। ৩০ বছরের পরে মাতৃত্ব যাঁদের আসে, তাঁদের এই ক্যান্সারের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। 

  • কোনও কারণে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় বা মেনোপজ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করা হয়। সেক্ষেত্রেও বাড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি। 

  • যাঁদের ওজন বেশি, যাঁরা ওবেসিটিতে ভোগেন, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। 

    এই ঝুঁকিক্ষেত্রগুলি খেয়াল রাখলে মহিলারা আগে থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করতে পারবেন। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানে যাবে অনেকটাই। এমআরআই বা ম্যামোগ্রাফি করে তো দেখাই যায়, সেই সঙ্গে দরকার নিজের ব্রেস্টের নিয়মত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। ব্রেস্ট্রের কোনও দিকে সামান্যতম পরিবর্তন দেখলেই সতর্ক হতেই হবে। এই রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুলের মাধ্যমেই জানা যেতে পারে, একজন মহিলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কতটা। তাই উপরে আলোচিত কোনও একটি ক্ষেত্রও যদি কারও ক্ষেত্রে থাকে,তাহলে তাঁকে সতর্ক হতে হবে অনেক বেশি। 


    চিকিৎসক সৌমেন সাঁফুই