কলকাতা : প্রতি বছর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস (Hepatitis Day) পালন করা হয় ২৮শে জুলাই। এবার হেপাটাইটিস (Hepatitis ) দিবসের স্লোগান ওয়ান লাইফ, ওয়ান লিভার। কী এই হেপাটাইটিস। চিকিৎসকরা বলছেন, হেপাটাইটিস হল যকৃত বা লিভারের প্রদাহ। অনেক কারণে হেপাটাইটিস হতে পারে।
- ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণে
- অত্যধিক অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সেবন করে
- কোনও কোনও ওষুধ টানা ব্যবহারের ফলে
- অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের কারণে।
হেপাটাইটিস নানা ধরনের হয়। মূলত ইনফেকশন থেকে যে হেপাটাইটিস হয়, তা খুব সাধারণ থেকে শুরু করে জটিল শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। লিভারে ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হেপাটাইটিস-এ, বি, সি, ডি এবং ই, এই পাঁচরকম হেপাটাইটিস হতে পারে।
এছাড়াও হেপাটাইটিস হওয়ার অন্যতম কারণ, যা নিয়ে আলোচনা যথেষ্ট কমই হয়, তা হল দীর্ঘকাল ধরে কোনও ওষুধ ব্যবহার করার ফলে হওয়া হেপাটাইটিস ( Drug Induced Hepatitis)। এমন অনেক সাধারণ ওষুধও আছে, যা দীর্ঘকাল ধরে খেয়ে গেলে তা লিভারের ক্ষতি করে দিতে পারে। যার থেকে প্রদাহ তো বটেই, লিভার ফেলইয়র অবধি হতে পারে। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, ফর্টিস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগের প্রধান হেপাটলজিস্ট ডা. দেবাশিস দত্ত। ( Dr Debasis Datta, Gastroenterologist )
যে কোনও ওষুধই লিভারের মাধ্যমে পাচিত হয়। এবার লিভার যখন কোনও ওষুধকে ভাঙছে, তখন তা থেকে প্রদাহ হতে পারে। এগুলি অনেকক্ষেত্রেই নিজে থেকে সেরে যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করলে লিভার আবার ঠিক হয়ে যেতে পারে। আবার কিছু ওষুধ এতটাই ক্ষতিকারক যে, তা সিরোসিস অফ লিভার পর্যন্ত ঘটাতে পারে। যা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সম্ভব নয়। যেমন অনেকক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের ওভারডোজ হয়ে গেলেও এমন এফেক্ট হতে পারে। আবার কিছু অ্যান্টিবায়োটিকসও একই রকমভাবে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে লিভার বা যকৃতে। অ্যামক্সিসিলিন (Amoxicillin ) জাতীয়অ্যান্টিবায়োটিকস নিরাপদ ওষুধ হলেও, কোনও কোনও ক্ষেত্রে যকৃতের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। bacterial infection কমাতে এই ওষুধ বিশেষ কার্যকরী। তাহলে কি এই ওষুধ খাওয়া যাবে না ? নিশ্চয়ই যাবে। তবে বারবার, দীর্ঘদিন ধরে কোনও ওষুধ খেয়ে যেই পেটের কোনও সমস্যা শুরু হল, কিংবা বমি-বমি ভাব হল, তখনই সতর্ক হতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। এক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করলেই অনেক সময় ঠিক হয়ে যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে খুব খারাপ কিছুও হতে পারে।
আবার ওরাল কনট্রাসেপটিভ দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে গেলেও সমস্যা আসতে পারে। অনেক অ্যান্টি ক্যানসার এজেন্ট টানা খেয়ে গেলে খুব খারাপ প্রভাব আসতে পারে। করোনার সময় একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ, গিলয় খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে দাবি এই আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারকের। এর থেকে বহু মানুষের আবার অটো ইমিউন হেপাটাইটিস হয়ে গিয়েছিল বলে চর্চা হয় আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে। অটো ইমিউন হেপাটাইটিস বলতে, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শরীরের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। সেখান থেকে যকৃতের ক্ষতি হয়।
তাই কোনও অচেনা কোনও ওষুধ খেলে বা দীর্ঘদিন ধরে কোনও ওষুধ খেয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খেতে হবে। তাহলে এড়ানো যেতে পারে, লিভার ফেলইয়র, সিরোসিস অফ লিভারের মতো কঠিন ব্যাধিও !
হেপাটলজিস্ট ডা. দেবাশিস দত্ত