নয়াদিল্লি: 'বেটে কো হাথ লাগানে সে পহেলে.. বাপ সে বাত কর'.. ট্রেলারে এই সংলাপ প্রকাশ্যে আসতেই যেমন একদিকে শুরু হয়েছিল চর্চা.. অন্যদিকে তৈরি হয়েছিল উন্মাদনাও। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, কখন বড়পর্দায় কিং খানের মুখে এই সংলাপ শুনবেন। কিন্তু সিনেমাহলে গিয়ে, অনেক কষ্ট করেও শাহরুখে খানের (Shah Rukh Khan) মুখ থেকে এই সংলাপ শুনতে পেলাম না। কারণ? প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ছিল সিটি, হাততালি আর দর্শকদের উচ্ছ্বাসে। এটাই তো কিং খানের ম্যাজিক। এই ছবিতে দুটো শব্দেই বিবরণ দিয়ে দেওয়া যায় সহজেই। সেটি হল, 'পয়সা উসুল'। বাদশা-ম্যাজিক কয়েক মুহূর্তেই একটা প্রেক্ষাগৃহকে কার্যত স্টেডিয়ামে বদলে ফেলল। 'জওয়ান'-এর মুক্তি ফের একবার প্রমাণ করে দিল... শাহরুখ খান ফের একবার পর্দায় এলেন, এবং জয় করলেন। 'জওয়ান'-এর দৌড় সহজে থামবার নয়।
এক ঝলকে 'জওয়ান'-এর গল্প:
এই গল্প একজন 'জওয়ান'-এর যাঁর জীবন কিছু ভুল সরকারী নিয়মের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। এরপরে, তাঁর ছেলে, সেই সরকারী নিয়মকে কাজে লাগিয়েই কিভাবে সরকারি নিয়মের বদল ঘটায়, সমাজের ভুলগুলোকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করে, সেটা নিয়েই এগিয়ে যায় ছবির গল্প। এই ছবি গরীবদের অধিকারের গল্প বলে, কৃষক আত্মহত্য়ার মতো ঘটনার প্রতিবাদ করে, রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবনতির কথা তুলে ধরে ও ভোটের মাধ্যমে সঠিক নেতা বা নেত্রীকে বেছে নেওয়ার বার্তা দেয়। এই ছবির গল্প খুব একটা চমকপ্রদ না হলেও, যে মোড়কে তা তুলে ধরা হয়েছে, তা অবশ্যই চিত্তাকর্ষক।
কেমন হল জওয়ান?
এক কথায় বলতে হয়, ছবিটা দুর্দান্ত। প্রথম আধঘণ্টা সবচেয়ে টানটান। পরে ছবির গান তার গতিকে একটু স্থিমিত করলেও, তা খুব একটা বেশি নয়। শাহরুখ পর্দায় যে জাদু ছড়িয়ে গেলেন, তা লেখা সম্ভব নয়, কেবল দর্শকাসনে বসে উপলদ্ধি করতে হয়। ছবিতে একের পর এক ট্যুইস্ট রয়েছে যা গল্পের প্রত্যেক বাঁকে দর্শকদের চমকে দিতে বাধ্য। পর্দায় যখন শাহরুখকে সাদা চুল-দাড়ির লুকে দেখা গেল.. তখন মনে হল, এর চেয়ে আকর্ষণীয় বয়স্ক মানুষ বোধহয় আর কেউ হতেই পারেন না। শাহরুখ যে সত্যিই বাদশা.. তা যেন ফের একবার প্রমাণ করে দিয়ে গেল 'জওয়ান'। ছবির গানগুলো বাদ দিলে কেবল একটাই জিনিস থাকে... এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট ও এন্টারটেনমেন্ট। এক মুহূর্তের জন্যও হতাশ করবে না শাহরুখের 'জওয়ান'।
অভিনয়
শাহরুখ দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন একথা বলাই বাহুল্য। ওঁর প্রত্যেক সংলাপেই সিটি বেজেছে, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে দর্শকাসন। শাহরুখকে এই প্রথম মুন্ডিতমস্তক অবস্থায় দেখলেন দর্শকেরা। তবে এই লুকেও পর্দায় কার্যত আগুন লাগালেন শাহরুখ। বাদশা নিজেই নিজের ইমেজ ভেঙেছেন। তবে পর্দায় হিরোর হিরোগিরি তখনই আকর্ষণীয় লাগে, যখন নেতিবাচক চরিত্র ততটাই ক্রুড় ও নিষ্ঠুর হয়। এই ভূমিকায় বিজয় সেতুপতি অনবদ্য। পর্দায় তিনি যতবার এসেছেন, কার্যত ভয় ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। নয়নতারা নিজের চরিত্রে প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছেন ও তাঁকে দেখিয়েছেও দুর্দান্ত। দীপিকার চরিত্র ছোট হলেও ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছাপ রেখে যায় দর্শকদের মনেও। ঋদ্ধি ডোগরা ও সান্য মলহোত্রর চরিত্রগুলি ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের চরিত্রে প্রত্যেকেই যথোপযুক্ত অভিনয় করেছেন।
পরিচালনা
অ্যাটলি দক্ষিণী ছবির ঘরানা ও শাহরুখের ম্যাজিকের একটা সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন এই ছবিতে। 'জওয়ান'-এর অন্যতম আকর্ষণ এই ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্স। বেশ কিছু কিছু জায়গায় কেবল মুগ্ধ চোখে শাহরুখের নিখুঁত অ্যাকশন দেখে যেতে হয় কেবল। ছবিতে যেমন টান টান উত্তেজনা রয়েছে, তেমনই কৃষকদের আত্মহত্যার দৃশ্যকে এতটাই আবেগ দিয়ে বাঁধা হয়েছে, তা দর্শকদের চোখে জল আনতে বাধ্য। বিনোদনের মোড়কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে।
ছবির সুরের দায়িত্বে রয়েছেন অনিরুদ্ধ রবিচন্দর (Anirudh Ravichander)। ছবির মিউজিক ভাল হলেও, গানগুলি বেশ কিছু জায়গায় ছবির গতিকে একটু স্থিমিত করে।
শেষমেষ.. আপনি যদি শাহরুখ অনুরাগী হন.. তাহলে কিন্তু 'জওয়ান' দেখা বাধ্যতামূলক।