মুম্বই: হে রাম আর জয় শ্রী রাম, প্রভাস (Prabhas) ও কৃতি শ্যানন (Kriti Shanon) অভিনীত 'আদিপুরুষ' (Adipurush) দেখে এই দুটো শব্দই মাথায় আসে। 'হে রাম'- এইজন্যই যে রামের গল্প বলতে গিয়ে এ কি ছবি তৈরি করেছেন ওম রাউত! আর 'জয় শ্রী রাম' মাথায় আসে এই জন্যই যে কেবলমাত্র রামনামই আপনাকে সাহায্য করতে পারে এই ছবিটা বসে দেখার জন্য যে ধৈর্য্য দরকার তা দেওয়ার জন্য। এই ছবিটাকে সেন্সর বোর্ড ইউ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তা কি এই জন্য যে দর্শকেরা সিনেমা হলের বাইরে থেকেই যাতে ইউটার্ন নিয়ে ফিরে যেতে পারে! এই ছবি দেখে হনুমানজীর কাছে প্রার্থনা করতে ইচ্ছা করে, তিনি যেখান থেকে সঞ্জীবনী বুটি সংগ্রহ করে এনেছিলেন, সেখানেই যেন এই ছবির সমস্ত রিলগুলোকে রেখে আসেন। 


যখন এই ছবির টিজার মুক্তি পেয়েছিল, তখন ভীষণ ট্রোলিং হয়েছিল সেটা নিয়ে। তারপরে বলা হয়েছিল, ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে ভিএফএক্সকে আবার ঠিক করা হয়েছে। তারপরে ট্রেলার মুক্তি পেল যেটা মোটামুটি ঠিকই ছিল। কিন্তু ছবির ব্যাপারে ঠিকঠাকও বলা যায় না। 


ঘটনাপ্রবাহ


এই ছবির গল্প সবাই জানে। শ্রীরামের জীবনের গল্প। কিন্তু এই সিনেমায় কিছু গল্প যেমন বলা হয়েছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আবার ছোঁয়াও হয়নি। কিন্তু এই গোটা ছবির থেকে রামানন্দ সাগরের রামায়ণের এক একটা এপিসোডও অনেক বেশি টান টান ছিল। 


কেমন হল ছবি?


শুরুর দিকে ছবিটা তেমন জমাটি লাগে না। ছবির সঙ্গে দর্শকের সংযোগ তৈরি হয় না। কিন্তু হনুমান যখন পর্দায় আসে, তখন থেকে ছবিটা তবুও একটু আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তবে ততটাও না যতটা রামায়ণ ধারাবাহিক আকর্ষণীয় লাগত। কোনও চরিত্রই তেমন করে মন ছোঁয় না যতটা দর্শকের আশা ছিল। আর খারাপ ভিএফএক্স দর্শকের আকর্ষণ কয়েক গুণ কমিয়ে দেয়। যদি এত টাকা খরচ করে যদি এত খারাপ ভিএফএক্স তৈরি হয়, তাহলে ভাবতে অবাক লাগে সেইসময়ে রামানন্দ সাগর কীভাবে এতটা আকর্ষণীয় ধারাবাহিক তৈরি করেছিলেন। কিছু সংলাপ এমনভাবে বলা হয়েছে, যেটা শুনেও অবাক লাগে। ছবির মধ্যে থেকে বিশ্বাসযোগ্যতাকেই কার্যত উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবিতে যুদ্ধের দৃশ্যগুলি এমনভাবে ফিল্মিং করা হয়েছে যে মনে হচ্ছে জম্বিরা লড়াই করছে। হয়তো এই সমস্ত দৃশ্যে একটা হলিউডের আবহ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বলিউডের ধাঁচও কার্যত গায়েব হয়ে গিয়েছে। ছবিতে অনেকবার শ্রী রামের নাম শোনা ছাড়া আর কিছুই ভাল লাগার নেই।


অভিনয়


ট্রেলারে প্রভাসকে মোটেই শ্রীরামের মতো মনে হয়নি। ছবির শুরুতেও প্রভাসকে রাম হিসেবে ভাল লাগছিল না। ছবি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রভাসের সঙ্গে রামের কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। কৃতি শ্যাননকে জানকির লুকে বেশ ভাল লেগেছে। লক্ষণের চরিত্রে সানি সিং ঠিকঠাক। রাবণের চরিত্রে ছাপ ফেলতে পারল না সইফ আলি খান। মনে হয়েছিল, রণবীর সিংহ খিলজীর চরিত্রে যেভাবে মানুষের মন কেড়েছিলেন, সেভাবেই রাবণের চরিত্রে ছাপ ফেলতে পারবেন সইফ, কিন্তু তা হল না। হনুমানের চরিত্রে দেবদত্ত নাগে বেশ ভাল অভিনয় করেছেন।


মিউজিক


ছবির আবহসঙ্গীত বেশ ভাল। অজয় অতুল এই অংশে বেশ ভাল কাজ করেছেন। মাঝে মাঝে যে গানগুলো পর্দায় আসছে, সেটার জন্যই সিনেমাটাকে সহ্য করার শক্তি দেয়। তবে শ্রীরাম আর সীতার জন্য তৈরি করা গানটি একেবারেই উপযুক্ত নয়।


যদি ছোটদের রামায়ণ সম্পর্কে জানাতে চান, তবে এই ছবিটি দেখাতে পারেন। কারণ, এই রিলের দুনিয়ায় ধারাবাহিক দেখার অভ্যাস নেই ছোটদের। সেই কারণে এই ছবিটি দেখাতে পারেন বটে, তবে পাশাপাশি আপনাকে বলে দিতে হবে আসল রামায়ণের গল্পও।