নয়াদিল্লি: নকশালবাদ ও নকশালিদের ওপর একাধিক সিনেমা তৈরি হয়েছে। নানা ধরনের কথা হয়, নানা ধরনের মতামত আছে। এবার বিপুল শাহ্ (Vipul Shah), কেরল স্টোরির পর নিয়ে এলেন নকশাল স্টোরি। তাঁর এই ছবি যা যা দেখায়, এবং যেভাবে দেখায়, তা দেখার জন্য সাহসের প্রয়োজন। ফলে যাঁরা দুর্বল হৃদয়ের, তাঁরা হয়তো এই সিনেমা দেখতে পারবেন না। এই ধরনের সিনেমাকে সাধারণত 'অ্যাজেন্ডা' বা 'প্রপাগান্ডা' ছবি বলা হয়। এই ধরনের ছবি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কিন্তু প্রযোজক বিপুল শাহ এর আগে এবিপিতে বলেছেন, কেউ ছবিটির গবেষণা এবং তথ্য নিয়ে বিতর্ক করতে চাইলে তাঁরা প্রস্তুত। আমরা শৈল্পিক নৈপুণ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিনেমার পর্যালোচনা বা রিভিউ করব। ('Bastar: The Naxal Story' Review)


ছবির গল্প


'বাস্তার: দ্য নকশাল স্টোরি' (Bastar: The Naxal Story) হচ্ছে বাস্তারের কাহিনি, এবং সেখানে প্রভাব বিস্তার করে থাকা নকশালবাদের। বাস্তারের নকশাল হামলাকে ছবিতে অত্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে দেখানো হয়েছে। মাওবাদীরা ছত্তিশগঢ়ের বাস্তারে সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৭৬ সেনাকে হত্যা করে। কিন্তু এই ছবির গল্প তার থেকেও বড়। সেখানে নকশালরা কীভাবে নিজেদের আলাদা শক্তি তৈরি করে ফেলেছে, তা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। কীভাবে তারা ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে সেই গল্প দেখিয়েছে ছবি। আইপিএস অফিসার নীরজা মাধবন (Adah Sharma) কীভাবে নকশালবাদীদের বিনাশ ঘটায়, কীভাবে সে দেশের সিস্টেমের সঙ্গে লড়াই করে, সেই নিয়েই ছবির গল্প। আর সেই গল্প বেশ ভয়াবহভাবেই পর্দায় উপস্থাপন করা হয়েছে।


কেমন হয়েছে ছবিটি?


এক কথায় বলতে গেলে এই ছবি বেশ অস্বস্তিতে ফেলবে। এমন একাধিক দৃশ্য আছে যেখানে চোখ বন্ধ করে ফেলতে হবে। ছবিতে নকশালদের নিয়ে আতঙ্ককে এমনভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে যা ভেতর পর্যন্ত নাড়িয়ে দেবে। গায়ে কাঁটা দেবে। ছবিটি আপনাকে নাড়া দেবে। আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন যে আমাদের দেশে এসব এভাবে হচ্ছে! কিছু দৃশ্য দেখে ঘেন্না করতে পারে। প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করবে কিন্তু একইসঙ্গে এই আতঙ্ক কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে তা দেখতেও ইচ্ছা করবে। আপনার রাগ হবে, দয়া হবে, করুণাও হবে। একাধিক আবেগ কাজ করবে আপনার মধ্যে।


অভিনয়


'দ্য কেরালা স্টোরি' ছবিতে আদাহ্ শর্মার অভিনয় ক্ষমতা উন্নত হয়েছিল, এই ছবিতে তা আরও কয়েক ধাপ এগিয়েছে। আবারও তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়ে যাবে। আইপিএস নীরজা মাধবনের জীবনটা যেন তিনি নিজে যাপন করেছেন, প্রত্যেক দৃশ্যে তাঁর অভিনয় ছাপ রেখে যাবে। একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা অফিসার তার উদ্যম এবং আবেগকে কখনওই কমতে দেয় না। দর্শক তার চোখে রাগ অনুভব করতে পারবেন, শারীরিক ভাষায় নকশালদের নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা অনুভব করা যাবে। মনে হবে না আদাহ্ অভিনয় করছেন, মনে হবে তিনি ওই চরিত্রে যাপন করছেন এবং যেন তিনি বাস্তব জীবনে ওই ব্যথা অনুভব করছেন। এছাড়াও, শিল্পা শুক্লা, রাইমা সেন, যশপাল শর্মা এবং অন্যান্য সমস্ত অভিনেতারা বেশ ভাল কাজ করেছেন।


পরিচালনা


এই ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেনের দাবি তিনি এই ছবির জন্য রিসার্চ সেই ছোটবেলা থেকে করছেন কারণ এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটেছে তখন তাঁর বয়স অনেকটাই কম, আর সেটা সিনেমা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন। ছবি দেখতে দেখতে মনে হতে পারে কোনও পরিচালক এই আতঙ্কের সময়কে কীভাবে এত ক্রূরতার সঙ্গে দেখাতে পারে! ছবির ওপর পরিচালকের দখল পোক্ত। কোথাও ছবিটা তার ছন্দ হারায় না, প্রত্যেক মুহূর্তে এই ছবি চমকে দেবে। আর এখানেই পরিচালকের সাফল্য।


আরও পড়ুন: 'Shaitaan' Review: অজয়-মাধবনের দুর্দান্ত অভিনয় মনোরঞ্জন করে, ভয়ও ধরায়, কিন্তু রয়ে গেল খামতি!


উল্লেখ্য এই টিমই তৈরি করেছিল 'দ্য কেরালা স্টোরি' যা মুক্তি পাওয়ার পর বিতর্কের প্রবল ঝড় উঠেছিল। এই ছবি নিয়েও হওয়া উচিত কারণ দর্শকের মধ্যে এমন একটি বড় অংশ থাকবে যাঁরা এই সব জানেন না এবং এর সত্যতা জানতে চান, এবং এর গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন করতে চান। বিপুল শাহের প্রশংসা করতেই হয় যে তিনি এ ধরনের ছবিতে অর্থ বিনিয়োগ করছেন। তাঁরা এমন গল্প সামনে নিয়ে আসছেন যা সামনে আনার সাহস খুব কম চলচ্চিত্র নির্মাতার আছে।


সব মিলিয়ে এই ছবি দেখা উচিত এবং দেখার পর যা যা প্রশ্ন আসবে মনে তা জিজ্ঞেসও করা উচিত।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।