প্রিয়া হাজরা, নয়াদিল্লি: অনেকেই বলে থাকেন, শাহিদ কপূরের (Shahid Kapoor) যা প্রতিভা তার ঠিকমতো দাম তিনি পাননি বলিউডে। কিছুদিন আগে 'ফর্জি'র (Farzi) হাত ধরে ওটিটিতে ডেবিউ (OTT Debut) করেছেন তিনি এবং তারপর আলি আব্বাস জাফরের (Ali Abbas Zafar) পরিচালনায় 'ব্লাডি ড্যাডি' (Bloody Daddy) সত্যিই অপেক্ষা করে থাকার মতোই ছবি। অ্যাকশন ঘরানার 'ব্লাডি ড্যাডি' ফরাসি ছবি 'ন্যুট ব্লানশ'-এর রিমেক, যার রিমেক হয়েছিল তামিল ভাষাতেও, নাম ছিল 'থুঙ্গা ভনম', অভিনয় করেছিলেন কমল হাসান। ভারতীয় দর্শকদের সংবেদনশীলতাকে স্পর্শ করার জন্য আলি আব্বাস জাফর ও সহ-লেখক আদিত্য বসু আসল চিত্রনাট্যটির বাস্তবতা বজায় রেখে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে তৈরি করেন ছবিটি। 


এই ছবিটি দেখতে বসলে হঠাৎ 'লুপ লপেটা'র কথা মনে পড়তে পারে যা সমালোচকদের প্রশংসাপ্রাপ্ত জার্মান ছবি 'রান লোলা রান'-এর অফিসিয়াল হিন্দি রিমেক ছিল। তাপসী পান্নু অভিনীত ছবিটিও এই একই কারণে হোঁচট খেয়েছিল - ভারতীয় ছবির মোড়কে পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা, এমন এক ভাবনা যা সবসময় সফল হয় না। এছাড়া সিনেম্যাটোগ্রাফি ও কম্পোজিশনের কথা ধরলে যে কোনও সিনেপ্রেমীর পক্ষে তুলনা টানা স্বাভাবিক। 


'ব্লাডি ড্যাডি' ছবিটি শুরু হচ্ছে প্রাণহীন 'কনট প্লেস'-এ একটি গর্জনকারী গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং ৫০ কোটি টাকার কোকেনের প্যাকেজের ডাকাতি (বা বিস্ফোরণ) দিয়ে। এই গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি অতিমারীর আবহে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নেই। জানা যায় চুরি যাওয়া ওই বিপুল পরিমাণ কোকেন একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ড্রাগ লর্ডের সঙ্গে নার্কোটিক্স ডিপার্টমেন্টের এক চরের এবং গোটাটাই এক পরিকল্পনার অংশ।


আরও পড়ুন: Diabetes in India: চোখ রাঙাচ্ছে ডায়াবেটিস! গোয়ায় সর্বোচ্চ, ICMR রিপোর্টে বাংলার ছবিটা কী?


'ব্লাডি ড্যাডি' এক রাতের গল্প বর্ণনা করে যেখানে ড্রাগ লর্ড সিকন্দর চৌধুরী (রণিত রায়) এনসিবি অফিসার সুমইর আজাদ (শাহিদ কাপুর) এর মুখোমুখি হন, যিনি নিজের আদায় করা কোকেন পুনরুদ্ধার করার উপায় হিসাবে সুমইরের ছেলেকে অপহরণ করেন। সুমইর তার প্রতারক সহকর্মী জগ্গির (জিশান কাদরি) সহযোগিতায় এনসিবি অফিস থেকে ব্যাগটি পুরোপুরি উদ্ধার করেন, কিন্তু অপরাধের জালটি প্রথম যতটা ছোট মনে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুমইর আরও গভীরে ফাঁদে পড়ে যায়।


শাহিদ কপূরকে ধাওয়া করে হোটেলে প্রবেশ করেন রণিত রায়, সঙ্গে তাঁর ক্লায়েন্ট সঞ্জয় কপূর। খল চরিত্রে অভিনয় করতে খানিক হোঁচট খেয়েছেন সঞ্জয়। অথর্ব, সুমইরের ছেলে, যার বাবার সঙ্গে বন্ধন তেমন একটা মজবুত নয়, সেও উন্মত্ত মাদকের শিকারে জড়িয়ে পড়ে। সাবপ্লটের একজন সংগ্রামী আন্ডারকভার পুলিশ তার পরিবারের ভাঙা সম্পর্ককে নিরাময়ের চেষ্টার বিষয়ে প্রায় কিছুই মূল গল্পে যোগ করা হয়নি। এমনকী সুমইর ও অথর্বের মধ্যে রসায়নও বিশেষ দেখানো হয়। অথর্বের ভূমিকায় সরতাজ কক্কর। যতবার অথর্বকে শাহিদ 'বেটা' বলে ডেকেছে, ততবারই কেমন যেন 'কবীর সিংহ'-এর প্রীতিকে ডাকার কথা মনে পড়ে যাবে। ছবির মাঝপথ থেকেই শাহিদের অভিনয় দেখে 'কবীর সিংহ', 'জার্সি' ও 'ফর্জি'র মিশেল মনে হবে। 


এই অ্যাকশন প্যাকড থ্রিলারে দেখা মিলবে একাধিক তাবড় তারকার এবং দুর্দান্ত কোরিওগ্রাফি করা অ্যাকশন দৃশ্যের কিন্তু তার ব্যবহার এত কম যে খারপই লাগবে। মনে হতে পারে, নির্মাতাদের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ ছিল সবটাই, তবুও প্রণালীটা ঠিক করে হয়নি। রাজীব খণ্ডেলওয়ালকে অ্যাকশন দৃশ্যে আরও কমজোর মনে হয়েছে এবং সংলাপও যেন মসৃণ নয় তাঁর। রণিত রায়ের মতো অভিনেতার জন্য তাঁর চরিত্র খুবই সহজ ছিল। পুলিশ অফিসার অদিতি রাওয়াতের চরিত্রে ডিয়ানা পেন্টি, একমাত্র অভিনেত্রী যার কাজে ভারসাম্য বজায় ছিল। দর্শকের ইচ্ছা হতে পারে ছবির শেষের দিকে কোনও নেতিবাচকতা ধরা পড়বে তাঁর চরিত্রে, কিন্তু সে গুড়ে বালি। 


মাদক দ্রব্যের পাচার, সেগুলি পুনরুদ্ধার, চোর-পুলিশের দৌড়াদৌড়ি, মারপিট কোনও নতুন গল্প না হলেও কোনও পরিচালক কীভাবে একই গল্পের স্বাদ বদলে পরিবেশন করছেন তা সত্যিই দেখার। এই ছবির ক্ষেত্রে প্রথম আধ ঘণ্টা বা তার থেকে খানিক বেশি সময় ভাল লাগলেও, তারপর গোটাটাই হারিয়ে যাচ্ছে মনে হতে পারে। সমস্ত উপকরণ থাকা সত্ত্বেও খুব টানটান হতে পারেনি 'ব্লাডি ড্যাডি'। ছবির একমাত্র আকর্ষণ হতে পারে 'ব্লাডি' অর্থাৎ রক্তাক্ত শাহিদ কপূর, যে জাহাজকে না ডুবতে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন শেষ অবধি। 


এবিপি আনন্দ এখন টেলিগ্রামেও, ক্লিক করুন এই লিঙ্কে
https://t.me/abpanandaofficial