নয়াদিল্লি: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Bollywood Film Industry) একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে অভিনেতা-অভিনেত্রীর থেকে সংখ্যায় তারকা বেশি এবং তারকা সন্তানেরা তো ছোট থেকেই স্টার (Star Kids)। জন্মের পর থেকেই তৈমুর ও জেহর পিছনে পাপারাৎজিদের ভিড়। এই অবস্থায় কোনও তারকা-সন্তান যদি ভাল অভিনয় করে ফেলেন তাহলে সেটা বেশ চককদার হয়ে ওঠে এবং তা যদি সলমন খানের (Salman Khan) পরিবারের কোনও সদস্য হন তাহলে ঝটকা আরও বেশি হন। এবারের ধাক্কাটা বেশ মজাদারও বটে। 'ফররে' (Farrey) একটি ভাল সিনেমা এবং সলমন খানের ভাগ্নি আলিজেহ অগ্নিহোত্রী (Alizeh Agnihotri) এই ছবির প্রাণ। যখন ট্রেলার প্রকাশ্যে এসেছিল এবং শোনা গিয়েছিল যে আলিজেহ সলমনের ভাগ্নি, তখন বিশেষ আশা কেউ রাখেননি যে এটি ভাল ছবি হবে বলে, কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটনা পুরো উল্টো।


ছবির কাহানি


এই ছবি তাইল্যান্ডের সিনেমা 'ব্যাড জিনিয়াস'-এর রিমেক। এই ছবি নিয়তি নামের এক মেয়ের গল্প বলে। সেই চরিত্রে দেখা গেছে আলিজেহকে। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া নিয়তি ১৮-এ পা দিতে চলেছে, যার পর তাকে অন্য অনাথ আশ্রমে চলে যেতে হবে। পড়াশোনায় সে দুর্দান্ত। স্কলারশিপ পেয়ে নিয়তি পৌঁছয় এক বড় স্কুলে যেখানে সাধারণত সকলেই কোটিপতি বাড়ির ছেলেমেয়ে। সেখানে সে একবার একটি মেয়েকে পরীক্ষায় নকল করতে সাহায্য করে। মেয়েটিও খুশি হয়, তাঁর বড়লোক বাবাও খুশি হয় এবং সে অজস্র উপহার এনে নিয়তিকেও খুশি করে দেয়। এরপরই নিয়তিকে লোভ দেখানো হয় যে ও যাতে টাকার বিনিময়ে সকলকে নকল অর্থাৎ 'চিটিং' করতে সাহায্য করে। এই লোভে পা দেয় নিয়তি। এই চক্রে ঢুকে পড়ে অপর এক গরিব ও চতুর ছাত্রও। এরপর গল্প কোথায় কোথায় পৌঁছয় এবং কীভাবে শেষ হয় তা জানতে যেতেই হবে প্রেক্ষাগৃহে।


ছবিটি কেমন?


ফিল্মের নাম শুনে মনে হয়েছিল যে 'ফররে' তৈরি হবে অর্থাৎ 'চিরকুট' তৈরি হবে কিন্তু এখানে স্কুল যেমন হাইটেক, পরীক্ষাও হাইটেক এবং সেই কারণে 'চিটিং'ও হাইটেক পদ্ধতিতে হয়। দর্শক চিন্তায় পড়ে যাবেন যে আরে এরকম তো আমাদের সময়ে ভাবাও যেত না। শুরু থেকেই এই ছবি আপনাকে বেঁধে ফেলবে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রগুলির সঙ্গে খুব দ্রুত মিশে যাবেন। স্কুলে গরিব ও ধনী ছেলেমেয়েদের মধ্যে তফাৎ স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। ফিল্মে একের পর এক ট্যুইস্ট আসতে থাকে যাতে বিরক্তি তো আসবেই না, বরং উত্তেজনা বাড়বে যে এরপর কী দেখানো হবে সেই ভেবে। ফিল্মের দৈর্ঘ্য ঘণ্টা দুয়েকের কাছাকাছি এবং একটুও টেনে বড় করা হয়েছে মনে হবে না। সবশেষে এক প্রয়োজনীর বার্তাও দেয় এই ছবি, যা এমন ছবির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, নয়তো মনে হতে পারে যে সিনেমাজুড়ে 'চিটিং'-এর প্রচার করা হচ্ছে। 


অভিনয় 


মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সলমন খানের ভাগ্নি আলিজেহ অগ্নিহোত্রী এবং বলতেই হবে তিনি এই পরিবারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। আলিজেহর ডেবিউ ছবি কোনও লভস্টোরিও হতে পারত কিন্তু তার বদলে অন্যরকম ছবি বাছা হয়েছে। সেটা প্রশংসনীয় সত্যিই, এবং আলিজেহও বেশ ভাল কাজ করেছেন। যেখানে খুব নিখুঁতভাবে তিনি চিটিং করাচ্ছেন, যেখানে তিনি বলছেন যে অর্থকষ্টের কারণে তাঁর মা তাঁদের ছেড়ে চলে গেছেন, যেখানে তিনি অনাথ আশ্রমের জন্য কিছু করতে চাইছেন। সেই সমস্ত সময়ে তাঁর অভিব্যক্তি, তাঁর সংলাপ বলার ধরন, দুর্দান্ত। চোখের অভিব্যক্তিতেও তাঁর অভিনয় ছিল, নিস্তব্ধতাও যেন সংলাপ বলে যাচ্ছে। এই বছর 'সেরা ডেবিউ'র পুরস্কার পাওয়া উচিত তাঁর। যে বড়লোক বাড়ির মেয়ে আলিজেহর সাহায্যে নম্বর পায় পরীক্ষায় তাঁর চরিত্রে দেখা গেছে প্রসন্না বিশতকে। বাবা যাতে তাঁর মেধাবী ছেলের থেকে মেয়েকে কোনও অংশে কম না ভাবে, তাই পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া তাঁর জন্য জরুরি। কিন্তু তাঁর মাথায় পড়াশোনা ঢোকে না। প্রসন্নাও এই চরিত্রে দারুণ। তাঁর চরিত্র খানিক ধূসর, এবং খুব সুন্দর তাতে অভিনয় করেছেন প্রসন্না। জৈন শ নিজের চরিত্রে দারুণ। সাহিল মেহতাও দারুণ কাজ করেছেন। রণিত রায় ও জুহি বব্বর অনাথ আশ্রম চালান, আর তাঁদের দুজনের কাজই দারুণ। 


আরও পড়ুন: Parambrata-Piya Marriage: 'অনেক বয়সে বিয়ে করলে যেমন লাগে', রেজিস্ট্রি সেরে 'খুনসুটি' করে প্রতিক্রিয়া পরমব্রতর


কাস্টিং


ফিল্মে বিশেষ তারকা সেই অর্থে নেই কিন্তু প্রত্যেকের সঙ্গেই দর্শক একাত্ম অনুভব করবেন। এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়ার যিনি ফের একবার প্রমাণ করলেন কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে ওঁর থেকে পারদর্শী আর কেউ নেই। কোন চরিত্রকে কোথায় বসাতে হবে, সেই শিল্প তাঁর নিখুঁতভাবে জানা। 


সবমিলিয়ে, এই ছবি দেখা উচিত। এক তো এটি একটি ভাল ছবি, তাছাড়াও স্টারকিডও ভাল অভিনয় করতে পারেন এবং তাঁদের সুযোগ পাওয়া উচিত। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


https://whatsapp.com/channel/0029VaCBCh6545uwkeNBg11y