নয়াদিল্লি: ২৬ জানুয়ারি মানেই, বলিউডে দেশপ্রেম মূলক সিনেমার মুক্তি এবং তার মাধ্যমে দর্শকের মধ্যের দেশপ্রেমকে আরও একবার নতুন করে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা। এবছর সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন পরিচালক সিদ্ধার্থ মলহোত্র (Sidharth Malhotra)। প্রজাতন্ত্র দিবসের একদিন আগে ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পেল হৃত্বিক রোশন (Hrithik Roshan), দীপিকা পাড়ুকোন (Deepika Padukone) ও অনিল কপূর (Anil Kapoor) অভিনীত 'ফাইটার' ('Fighter' Review)। 


ছবির গল্প


এই ছবির গল্প মূলত পুলওয়ামা হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনার প্রতিশোধ নিয়ে। কীভাবে পাকিস্তানকে তাদের বর্ডারের ভিতর প্রবেশ করে পরাস্ত করা হয় কিন্তু সেই সঙ্গে এই ছবিতে একগুচ্ছ ট্যুইস্ট ও টার্ন আছে। রয়েছে একাধিক মোড়ক। হৃত্বিক রোশন ছবিতে একজন ফাইটার পাইলট কিন্তু তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসার অনিল কপূর ওঁর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। দীপিকা পাড়ুকোন নিজেই পাইলট কিন্তু ওঁর পরিবারের লোকজন তাঁকে শহিদ বলে বিশ্বাস করেন। এই গল্পগুলি কীভাবে দেশপ্রেমের রঙে নিমজ্জিত এবং তার সঙ্গে যুক্ত তা জানতে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে।


সিনেমাটি কেমন?


ছবির প্রথমার্ধে স্টাইল বেশি কিন্তু আবেগ কম। হৃত্বিক ও দীপিকার পর্দায় রসায়ন দুর্দান্ত। মারপিটের দৃশ্য ভালই তবে প্রথম মিশন খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বলে মনে হতে পারে। তবে ছবির দ্বিতীয়ার্ধ বেশি আকর্ষণীয়। ফিল্ম ধীরে ধীরে দর্শককে আবেগঘন করে তুলবে। পাকিস্তানে প্রবেশ করে হৃত্বিক রোশন যখন 'জয় হিন্দ' বলে মারতে উদ্যত হয় তখন গোটা প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ে হাততালিতে। দীপিকার পাইলট হওয়ার ব্যাপারে একেবারেই খুশি ছিলেন না তাঁর বাবা। কিন্তু যখন তাঁকে তাঁর মেয়ের কথা বলেন হৃত্বিক, সেই সময় আমাদের দেশের সফল কন্যাদের কথা ভেবে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আপনারও গর্ববোধ হবে। ছবির দ্বিতীয় ভাগ অনেক বেশি দমদার। প্রযুক্তিগত দিক থেকে মোটামুটি হলেও এই ছবির আবেগ ও দেশভক্তি সেই সামঞ্জস্য মিটিয়ে দেয়। 


অভিনয়


ছবিতে হৃত্বিক রোশন নজরকাড়া, আর ওঁর অভিনয়ও দারুণ। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি দুর্দান্ত। পর্দায় হৃত্বিক রোশন এলেই দারুণ লাগবে যে কোনও দর্শকের। সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মে নজর কাড়েন দীপিকা পাড়ুকোন। তাঁর অভিনয়ও বেশ ভাল। হৃত্বিকের থেকে বেশি মন জয় করবে দীপিকাই। অনিল কপূর তাঁর চরিত্রে যথাযথ। নজর কেড়েছেন কর্ণ সিংহ গ্রোভার। অক্ষয় ওবেরয় নিজের ছাপ ছেড়ে যান। ফিল্মের কাস্টিং বেশ ভালই এবং তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মুকেশ ছাবড়াকে দেওয়া উচিত। 


পরিচালনা


গত বছর ঠিক আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ-দীপিকা-জনের 'পাঠান'। পরিচালনা করেছিলেন সিদ্ধার্থ আনন্দ। তবে সেই ছবির থেকে 'ফাইটার' ছবিতে তাঁর কাজ আরও পরিণত। কিন্তু যদি পরিচালক চিত্রনাট্যে আরও একটু বেশি নজর দিতেন তাহলে এই ছবি আরও ভাল হত। ছবিতে একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে শূন্যে ভারতীয় ও পাক পাইলট নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। এটা ঠিক কীভাবে সম্ভব? এবং কিছু জিনিস অবশ্যই অতিনাটকীয় এই ছবিতে।


আরও পড়ুন: 'Main Atal Hoon' Review: অটল বিহারী বাজপেয়ীর জীবন কাহিনি তুলে ধরে 'ম্যায় অটল হুঁ', পঙ্কজ ত্রিপাঠী ছবির প্রাণ


সঙ্গীত


সঞ্চিত বলহারা ও অঙ্কিত বলহারার সঙ্গীত এই ছবিকে আরও সুন্দর বানিয়ে তোলে। এই ছবির গান শান্তি দেয়, অথচ সিনেমার গতিকে কোথাও আঘাত করে না। কিছু গান তো ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের প্লেলিস্টে স্থান করে নিয়েছে। 


সবমিলিয়ে এই ছবি দেখার মতো। এমন কিছু জিনিস আছে ছবিতে যা ঠিক হজম হওয়ার মতো নয় তবে শৈল্পিক স্বাধীনতার নামে অনেক পরিচালকই সেই কাজ করে থাকেন। দেশভক্তি ও আবেগের মিশ্রণে সেই ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হয়েছে।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।