নয়াদিল্লি: বন্ধুদের সঙ্গে একটা গোয়া ট্রিপ (Goa Trip), যার স্বপ্ন আমরা কম-বেশি সক্কলে দেখেছি, কিন্তু খুব কম লোকজনই এত সৌভাগ্যবান হয় যে গোয়ার প্ল্যান করে তখনই সেখানে যেতে পারে। নয়তো বাকিরা তো বছরের পর বছর ধরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেই আলোচনা করেই শান্ত থাকে। 'দিল চাহতা হ্যায়' ও 'জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা'র পর আরও একটি ছবি হাজির যা তিন বন্ধু ও অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে তৈরি। এই ছবির নাম 'মডগাঁও এক্সপ্রেস' (Madgaon Express Review)। ছবির পরিচালনা করেছেন অভিনেতা কুণাল খেমু (Kunal Kemmu), এবং ছবি দেখতে দেখতে নিজের সবচেয়ে গভীর বন্ধুত্বের কথা মনে পড়বে। এই ছবিতেও কি তাহলে 'দিল চাহতা হ্যায়'র মতো ফ্লেভার মিলবে?


ছবির গল্প ঠিক কী?


এই ফিল্মের গল্প ডোডো (দিব্যেন্দু), পিঙ্কু (প্রতীক গাঁধী) ও আয়ুষ (অবিনাশ তিওয়ারি), এই তিন বন্ধুর ওপর ভিত্তি করে তৈরি যারা ছোট থেকেই গোয়া ট্রিপ প্ল্যান করে আসছে কিন্তু কোনওদিন ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। তিনজন বড় হয়ে আলাদা আলাদা দেশে থাকে। তিন বন্ধুর দু'জন অত্যন্ত সফল, তৃতীয় জন এখনও একই স্থানে পড়ে রয়েছে। বেশ অনেক বছর তিন বন্ধু পুনর্মিলনের পরিকল্পনা করে এবং সেই সঙ্গে নিজেদের গোয়া যাওয়ার অপূর্ণ স্বপ্নও পূরণের চেষ্টা করে। কিন্তু আমি বা আপনি বা এই তিন বন্ধু যেমন আশা করেছিল, তেমনভাবে ট্রিপটা কাটেনি। ডোডো 'মডগাঁও এক্সপ্রেস' ধরে গোয়া যাওয়ার প্ল্যান করে। আর সেটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এরপরেই তারা মাদক ও গ্যাংস্টারেদের খপ্পরে পড়ে। তিন বন্ধু এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কীভাবে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরে, নোরা ফতেহি তাদের এই সফরে কীভাবে সাহায্য করে এবং এসবের মধ্যে তিনজনের ব্যক্তিগত মুহূর্তও দেখা যায়, সেই নিয়েই গোটা ছবির গল্প।


কেমন হয়েছে ফিল্মটি?


প্রথম থেকেই বুঝতে পারা যায় যে এই ছবি 'দিল চাহতা হ্যায়'র মতো একেবারেই নয়, বরং তার থেকে অনেকটাই আলাদা। ছবিতে ডোডোর চরিত্র বারবার পেটে খিল ধরাবে এবং মাঝেমাঝেই নিজেদের গ্রুপের সেই অতিউৎসাহিত, উত্তেজিত বন্ধুর কথা মনে করাবে। ফিল্মে একাধিক চরিত্র রয়েছে এবং প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গুণ আছে যেমন মেন্ডোজা ভাই ও কাঞ্চন কোমডি। এই ছবির চিত্রনাট্যও কুণাল খেমুরই লেখা এবং ছবি থেকেই পরিষ্কার যে 'গোলমাল' ফ্র্যাঞ্চাইজিতে তিনি বহুদিন কাজ করেছেন। প্রত্যেক দৃশ্যে হাস্যরস ভরপুর যা প্রায় প্রত্যেক দৃশ্যকেই আরও মজাদার করে তোলে। ছবিতে 'দিল চাহতা হ্যায়'র রেফারেন্স একাধিকবার মেলে এবং এই তিন বন্ধুর গোয়া ট্রিপের অনুপ্রেরণা ওই ছবিই। এছাড়া তিন বন্ধুর 'বেড ফাইট', কাঞ্চন কমোডির আড্ডায় লড়াই এই ফিল্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃশ্য। নোরা ফতেহিকে তাঁর গ্ল্যামারের জন্যই এই ছবিতে কাস্ট করা হয়েছে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। রেমো ডি'সুজার ক্যামিও বিশেষ গুরুত্ব রাখে না গল্প। এছাড়া ছবির মিউজিক বেশ টাটকা।


অভিনয় কার কেমন?


এই ছবিতে নিজেকে উজাড় করে প্রশংসার দাবি রাখেন দিব্যেন্দু শর্মা। একাধিক দৃশ্যে ওঁর অভিব্যক্তি ও সংলাপ শুনে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করবে। এই ছবিতে দিব্যেন্দুকে দেখে 'পেয়ার কা পঞ্চনামা'র লিক্যুইডের কথা মনে পড়তে পারে। তিনি প্রমাণ করলেন আবারও যে এই ধরণের চরিত্রেও তিনি সমান মানানসই ঠিক যতটা 'মির্জাপুর'-এর মুন্না ভাইয়ের চরিত্রে। অবিনাশ তিওয়ারিও যতদিন যাচ্ছে তত সকলের প্রিয় হয়ে উঠছেন। প্রথমে 'খাকী', 'মুম্বই মেরি জান', 'কলা' আর এবার কমেডি ঘরানার ছবিতে। ওঁর ট্যালেন্ট সত্যিই অতুলনীয় এবং এই একই জিনিস প্রতীক গাঁধীর কাজেও নজরে আসবে। প্রতীকের চরিত্রে দুটো স্তর নজরে পড়বে দর্শকের। দুই ধরনেই তিনি অনবদ্য। বাকি কাস্টের কাজও দারুণ। 


কুণাল খেমু পরিচালক হিসেবে কেমন?


কুণাল খেমুর রসবোধ ও পরিচালনার দক্ষতা এই ছবিকে আরও মনোরঞ্জক করে তুলেছে। পরিচালক হিসেবে কুণালের এই প্রথম কাজ এবং তাঁর কাজ দুর্দান্ত। এরপরে আবারও কুণাল কমেডি ঘরানারই ছবি বানাবেন না অন্য ঘরানায় পা রাখবেন সেটাই দেখার অপেক্ষা থাকবে। এই সিনেমায় প্রত্যেকটি ফাইটিং সিনই দুর্দান্তভাবে শ্যুট করা হয়েছে এবং মিউজিকও আলাদা গভীরতা যোগ করে।


আরও পড়ুন: 'Ae Watan Mere Watan' Review: রয়েছে অজস্র ত্রুটি! তবু ঊষা মেহতার গল্প জানা জরুরি, কেমন হল সারার 'অ্যায় ওয়াতন মেরে ওয়াতন'?


যদি কোনও এন্টারটেনিং সিনেমা দেখার ইচ্ছা থাকে এবং বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আবার করে মনে করতে চান, তাহলে এই সিনেমা নিশ্চয়ই দেখুন। সাম্প্রতিককালে মুক্তি পাওয়া একগুচ্ছ থ্রিলারের মধ্যে এই ছবি টাটকা বাতাস আনবে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।