নয়াদিল্লি: মুক্তি পেয়েছে জাহ্নবী কপূর (Janhvi Kapoor) ও রাজকুমার রাও (Rajkummar Rao) অভিনীত 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি' (Mr and Mrs Mahi)। ছবির গল্প এমন এক ছেলেকে কেন্দ্র করে যে জীবনে শুধু হেরেছে। ক্রিকেট, যা সে জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছে, সেখানেও সে পরাজিত। সাধারণত আপনি একজন বাবা, একজন মা, একজন বোন বা একজন ভাইকে অন্য কারও মাধ্যমে তাদের স্বপ্নপূরণ করতে দেখেছেন। এই সিনেমায় এক স্বামী তার স্ত্রীয়ের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নপূরণ করে। সিনেমার সঙ্গে তারকা ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু ছবির গল্প মন ছুঁয়ে যায়।


ছবির গল্প


ছবির গল্প রাজস্থানের জয়পুরের প্রেক্ষাপটে তৈরি। বাবার নজরে হেরে যাওয়া এক পুত্রকে ব্যবসায়ী পিতা কনে পক্ষের সামনে নিয়ে আসে। সম্বন্ধ দেখে মহিমা ও মহেন্দ্রর বিয়ে হয়। মহেন্দ্র নিজেকে প্রমাণ করার জেদে মহিমাকে ডাক্তার থেকে ক্রিকেটার তৈরি করতে উঠে পড়ে লাগে। মহেন্দ্রের আবেশ সেই দেওয়ালে পৌঁছনো যেখানে তার বাবা বিখ্যাত ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিজের ছবি টাঙিয়ে রেখেছেন এবং এই আবেশই তার স্ত্রী মহিমার সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। এদিকে মহিমার নিজস্ব সংগ্রাম আছে। একদিকে তার ডাক্তারির চাকরি সে ছেড়ে দেয়, অন্যদিকে ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জেদ মাথায় নিয়ে নেয় সে। এবার সবশেষে মহিমা কি ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারে? তার স্বামীর মাথা থেকে বিখ্যাত হওয়ার আবেশ নামে? এই সমস্ত উত্তর পেতে অবশ্যই আপনাকে এই সিনেমাটা দেখতে হবে। 


কেমন হয়েছে এই ছবি?


সমস্ত অভিনেতাদের দুর্দান্ত কাজ সত্ত্বেও সিনেমা খানিক ধীর গতির মনে হয়। মাঝে মাঝে হাত ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফোন ঘাঁটতে। এই ফিল্মকে ঘিরে এমনই উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছিল যে সিনেমাটি যে কোথাও না কোথাও গিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে জড়িত, কিন্তু আসলে তেমন কিছুই নেই। ধোনির একটি ছবি ছাড়া সিনেমাটির সঙ্গে ক্যাপ্টেন কুলের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। এটি কোনও স্পোর্ট ফিল্ম নয়, গল্পে ক্রিকেটের বদলে যে কোনও শিল্প বা খেলার ব্যবহার করা যেত যেমন গান, নাচ ইত্যাদি প্রযোজক ক্রিকেট অনুরাগী হওয়ায় এতে ক্রিকেটই স্থান পেয়েছে। সিনেমার গল্প ভাল, 'ফিল গুড' ব্যাপার আছে, এক অন্য ধরনের দৃষ্টিকোণের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য একবার সিনেমাটি দেখা যেতে পারে। 


কার কেমন অভিনয়?


ফিল্মে জাহ্নবী কপূর, রাজকুমার রাও, জারিনা ওয়াহাব, কুমুদ মিশ্র, রাজেশ শর্মা, ধীরেন্দ্র গৌতমের মতো শিল্পীরা কাজ করেছেন। প্রত্যেকের অভিনয় দুর্দান্ত। রাজকুমার রাও এক অসহায় ছেলে, ব্যর্থ মানুষ, হেরে যাওয়া ক্রিকেটারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর চরিত্রে খ্যাতিলাভের সেই খিদে নজরে পড়ে। জাহ্নবী কপূরের সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন রসায়নও নজরে পড়ার মতো। সিনেমা দেখে দর্শক বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যেন তাঁরা সত্যিই স্বামী-স্ত্রী। রোম্যান্টিক দৃশ্য থেকে আবেগঘন দৃশ্য, সর্বত্রই তাঁদের সত্যি বিবাহিত দম্পতির মতো দেখতে লাগে, যারা একে অপরের শক্তি। 'বাওয়াল' সিনেমার পর ফের একবার জাহ্নবী কপূরকে স্ত্রীয়ের চরিত্রে দেখা গেল। সাধারণ পরিবারের সাধারণ মেয়ে, যে নিজের শখকে পরিবারের মুখ চেয়ে নষ্ট করেছে। যে নিজেও ভুলে গিয়েছে যে সে ডাক্তার নয়, অন্য কিছু হতে চেয়েছিল। প্রত্যেক সিনেমার পর জাহ্নবীর অভিনয় ক্ষমতা আরও পাকা হচ্ছে এবং এই সিনেমাতেও তা স্পষ্ট। সিনেমায় তাঁর ক্রিকেট খেলার ধরন দেখে স্পষ্ট যে তিনি সত্যিই ২ বছর ধরে ক্রিকেটের ট্রেনিং নিয়েছেন। এছাড়া কুমুদ মিশ্র এক সাধারণ পরিবারের কঠোর বাবার চরিত্রকে বেশ দক্ষতার সঙ্গে ধরে রেখেছেন। যিনি কেবল নিজের ছেলেকে সফল দেখতে চান। জারিনা ওয়াহাবকে দুই থেকে তিনটে দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, এবং তাঁর মুখে বিশেষ কোনও সংলাপও নেই কিন্তু সবশেষে তিনিই গোটা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দেন।


আরও পড়ুন: Dabaru Movie Review: বার বার ধাক্কা খেয়েও জীবনযুদ্ধে জেতা সম্ভব, চৌষট্টি খোপের গল্পে সেই বিশ্বাস বুনল 'দাবাড়ু'


পরিচালনা


শরণ শর্মা এই ছবির পরিচালক। তাঁর কাজ বেশ ভাল। এটি তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি। এর আগে তিনি 'ধর্মা প্রোডাকশন'-এর অধীনে 'গুঞ্জন সাক্সেনা'র সঙ্গে নিজের পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রথম ছবিতেও মুখ্য চরিত্রে দেখা মেলে জাহ্নবী কপূরের। একই সংস্থার অধীনে তৈরি 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি'। এই ছবির প্রযোজক কর্ণ জোহর ও 'জি স্টুডিওজ'।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।