কলকাতা: ভূতের চেয়ে অনেক বেশি ভয় দেখায় ভৌতিক পরিবেশ... ছবি তৈরির সময় চিরকালই তাই পরিবেশের ওপর বেশি জোর দেন যে কোনও নির্মাতাই, তা হলিউড-বলিউড হোক, বা টলিউড। তবে সদ্য মুক্তি পাওয়া 'হইচই' (Hoichoi)-এর ওয়েব সিরিজ 'পর্ণশবরীর শাপ' ঠিক কতটা ভয় দেখাতে পারল অনুরাগীদের? বই ও অডিও অ্যাডপশনের সৌজন্যে, নীরেন ভাদুড়িকে নিয়ে সৌভিক চক্রবর্তীর এই গল্প অনেকেরই জানা। পরবমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee) পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজে কতটা ভয় আর কতটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা রইল... খোঁজ করল এবিপি লাইভ (ABP Live)। 


'পর্ণশবরীর শাপ' গল্পের মুখ্যভূমিকায় দেখা গিয়েছে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (Chiranjeet Chakraborty) গৌরব চক্রবর্তী (Gourav Chakraborty), সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Surangana Bandhopadhay), অনিন্দিতা বসু (Anindita Basu) ও অর্ণ মুখোপাধ্যায় (Arno Mukherjee)। চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্বে ছিলেন সৌভিক চক্রবর্তী ও সঞ্জীব। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন প্রসেনজিৎ চৌধুরী। এডিটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন সুমিত চৌধুরী।


এটি চিরঞ্জিতের প্রথম ওয়েব সিরিজ ফলে অভিনয়ের প্রসঙ্গে, প্রথমে তাঁর কথাতেই আসা যাক। ভাদুড়ি মশাইয়ের চরিত্র সম্পর্কে পাঠকেরা মোটামুটি ওয়াকিবহাল। সম্ভবত সেই কারণেই এই চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকদের আলাদাভাবে আলাপ করাতে চাননি পরমব্রত। সেই কারণেই নতুন দর্শকদের ভাদুড়িমশাইয়ের চরিত্রের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন থেকে যেতে পারে। বিশেষ করে ভাদুড়িমশাইয়ের বিশেষ ক্ষমতা বোঝাতে হাসপাতালের যে দৃশ্যটির অবতারণা করা হয়েছে ওয়েব সিরিজে, সেটা কিছুটা খাপছাড়া মনে হতে পারে। তবে অভিনয়ের সুযোগের সদব্যবহার করেছেন চিরঞ্জিৎ। শিক্ষক হিসেবে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হোক বা অলৌকিক ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত থাকা... প্রত্যেকটা অংশই দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা। গল্পে মানবিকতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যে স্পষ্ট বার্তা পরিচালক দিতে চেয়েছিলেন, তার কাণ্ডারি একমাত্র ছিলেন চিরঞ্জিৎ। গ্রামের মানুষদের ভুল ধারণার জন্য সীতার জীবন নষ্ট হওয়ার প্রতিবাদের দৃশ্যটি নির্মাণ করে ভৌতিক গল্পেও একটি সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন পরিচালক। 


ছবিতে অর্ণ ও গৌরবের অভিনয়ের জায়গা ছিল বেশ সীমিত। হবু স্ত্রীয়ের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়া ও পল্লবের কাজের প্রতিবাদ করা ছাড়া খুব বেশি অভিনয়ের জায়গা পাননি গৌরব। অর্ণ দক্ষ অভিনেতা হলেও, এই সিরিজে তাঁর অভিনয় ক্ষুরধার বলে মনে হয় না মোটেই। বরং শেষের দিকে পল্লবের অতীতের টানা স্মৃতিচারণা শেষ এপিসোডের গল্পে মেদ এনেছে। অনিন্দিতা তাঁর চরিত্রে যথাযথ অভিনয় করেছেন। তবে গল্পে সবচেয়ে বেশি অভিনয়ের সুযোগ ছিল সুরঙ্গনার। প্রথমদিকে তাঁর অভিনয়, বিশেষত বমি করে সেটাই আবার খেয়ে ফেলার দৃশ্য বেশ ভয় ধরায়। মৃত প্রাণীর দেহের মধ্যে সুরঙ্গনার হাত ঢুকিয়ে বসে থাকার দৃশ্যটিও বেশ গা শিরশিরে। যদিও সিরিজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে, গল্প ও ভয়, দুয়ের বাঁধনই আলগা হয়েছে। বৈজয়ন্তীর আত্মার ভর হওয়া, সীতার প্রভাব.. সব মিলিয়ে সুরঙ্গনার চরিত্র হলিউডের ভূতের গল্পকেই মনে করিয়ে দেয়। সীতার চরিত্র ছোট হলেও, মনে দাগ কেটে গিয়েছে। 


পাহাড়ি বাংলো এবং কালো নীল রঙে ভয়ের দৃশ্যপট আঁকতে চেয়েছেন পরমব্রত। অতীতের কথা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করেছেন তিনি। সিরিজে যে ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে, তা সিনেমাটোগ্রাফির কারণেই। তবে শেষের তিন এপিসোডে জঙ্গলের ভিতর পিশাচকে দেখানো অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হয়েছে। কথায় বলে, যা দেখা যায় না, তাতেই মানুষ ভয় পায় বেশি। ফলে জঙ্গলের মধ্যে পিশাচদের দৃশ্য দর্শকদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


ছবিতে নেপালি ধারা, রীতি রেওয়াজকে যে ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। স্থানীয় মানুষদের চরিত্রে প্রত্যেকের অভিনয়ই বেশ বিশ্বাসযোগ্য। সিরিজের আবহসঙ্গীতও বেশ মানানসই। তন্ত্রসাধনা, পাহাড়ি দৃশ্য.. সব মিলিয়ে ভূতের গল্পের যে প্রেক্ষাপট পরমব্রত তৈরি করেছেন, সেটাই এই সিরিজের মূল উপভোগ্য বিষয়।


আরও পড়ুন: Kabuliwala: 'কাবুলিওয়ালা' মিঠুনের মিনি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী! বাবা-মায়ের চরিত্রেও থাকছে চমক